Ajker Patrika

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় ইউটিউবার গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক
জ্যোতি মালহোত্রা। ছবি: সংগৃহীত
জ্যোতি মালহোত্রা। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে হরিয়ানার এক ইউটিউবারকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পুলিশ। জ্যোতি মালহোত্রা নামের ওই ইউটিউবারের সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুলসংখ্যক অনুসারী রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে তিনি পাকিস্তান সফর করেছিলেন এবং সেই ভ্রমণের একাধিক ভিডিও তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি এজেন্টদের কাছে সংবেদনশীল তথ্য পাচারের অভিযোগে আরও ছয়জনের সঙ্গে জ্যোতিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জ্যোতি মালহোত্রার ‘Travel with Jo’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে, যেখানে তাঁর প্রায় ৩ লাখ ৭৭ হাজার সাবস্ক্রাইবার। ইনস্টাগ্রামেও তাঁর প্রায় সোয়া লাখ অনুসারী আছে। তিনি নিজেকে যাযাবর এবং আধুনিক হলেও পুরোনো ধ্যানধারণার হরিয়ানি-পাঞ্জাবি নারী হিসেবে বর্ণনা করেন।

তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি শুধু ভারতেই নয়, ইন্দোনেশিয়া ও চীনের মতো কয়েকটি দেশও ঘুরে বেড়িয়েছেন। তবে তাঁর পাকিস্তান সফরের ভিডিওগুলোই এখন বিশেষভাবে আলোচনায়।

প্রায় দুই মাস আগে ভিডিওগুলো অনলাইনে আসে। এসব ভিডিওতে জ্যোতি পাকিস্তানের কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তদন্তকারী সংস্থা বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিদেশি এজেন্টরা তাঁকে দিয়ে প্রচারণার জন্য এই ভিডিওগুলো তৈরি করিয়েছিল।

ভিডিওগুলোতে জ্যোতিকে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত পেরোতে, লাহোরের আনারকলি বাজার ঘুরতে, বাসে চড়তে এবং পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির কাটাস রাজমন্দির পরিদর্শন করতে দেখা যায়। ইনস্টাগ্রামে তাঁর একটি ছবির ক্যাপশনে উর্দুতে লেখা ছিল, ‘ইশ্ক লাহোর’। তিনি পাকিস্তানি খাবার এবং দুই দেশের সংস্কৃতির তুলনা করেও বিভিন্ন পোস্ট করেন।

গত বছর জ্যোতি কাশ্মীরেও গিয়েছিলেন। ডাল লেকে শিকারায় চড়ার একটি ভিডিও দেখা যায়। শ্রীনগর থেকে বানিহাল পর্যন্ত ট্রেনযাত্রার ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। তাঁর সাম্প্রতিক ভিডিওগুলোর মধ্যে একটি ছিল পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে। গত ২২ এপ্রিলের ওই হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। এর পরপরই ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে। ভিডিওটির ক্যাপশনে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘পেহেলগাম-কাশ্মীর নিয়ে আমার মতামত—আমরা কি আবার কাশ্মীর ভ্রমণ করব?’

তদন্তকারীদের দাবি, ২০২৩ সালে এজেন্টদের মাধ্যমে ভিসা নিয়ে জ্যোতি প্রথম পাকিস্তানে যান। সেখানে থেকে এসেই নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশ নামের এক কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। দ্রুত তাঁদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় এবং এরপর এহসান তাঁকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তবে পেহেলগাম হামলার জেরে পাকিস্তানি হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা বা সামরিক কর্মকর্তাদের (নৌ ও বিমান) ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ বা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ভারত। এরপর গত ১ মে দুই দেশের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে আনা হয়। অবাঞ্ছিত এসব কর্মীর মধ্যে একজন ছিলেন এহসান-উর-রহিম।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা আরও বলেন, ভারতে ফেরার পর জ্যোতি হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো এনক্রিপ্টেড প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পাকিস্তানি এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। সন্দেহ এড়াতে তিনি কনট্যাক্টগুলোর নাম বিভিন্ন ছদ্মনামে সেভ করতেন। যেমন শাকির নামে একজনের নাম তিনি সেভ করেন ‘জাট রান্ধওয়া’ নামে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, জ্যোতি ভারতীয় কয়েকটি জায়গার সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানি এজেন্টদের কাছে পাচার করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি তিনবার পাকিস্তান সফর করেছেন।

এ ছাড়া এক পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এবং অভিযোগ রয়েছে, তিনি ওই এজেন্টের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার বালিও সফর করেছেন। তদন্তকারীরা বলছেন, জ্যোতি একটি বৃহত্তর গুপ্তচরবৃত্তি চক্রের অংশ, যার কর্মীরা হরিয়ানা ও পাঞ্জাবজুড়ে সক্রিয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত