Ajker Patrika

ইউরোপ আক্রমণ করবে না রাশিয়া, লিখিত গ্যারান্টি দিতে প্রস্তুত: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সেন্ট পিটার্সবার্গের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
সেন্ট পিটার্সবার্গের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তাঁর দেশ ইউরোপের কোনো দেশে আর আক্রমণ করবে না বলে লিখিত নিশ্চয়তা দিতেও প্রস্তুত। রাশিয়া ইউরোপ আক্রমণ করবে—এমন অভিযোগকে তিনি ‘মিথ্যা’ এবং ‘পুরোপুরি অর্থহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট কলেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে পুতিন বলেন, ইউরোপে রুশ বাহিনীর হামলার পরিকল্পনার দাবি ‘হাস্যকর।’ তিনি বলেন, ‘সত্য হলো, আমরা কখনোই এমন ইচ্ছা পোষণ করিনি। কিন্তু যদি তারা আমাদের মুখ থেকে শুনতে চায়, তা হলে আমরা লিখিত নথি দেব। এতে কোনো আপত্তি নেই।’

ইউক্রেন আক্রমণের আগে বারবার অস্বীকার করার পরও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালায়। সেই স্মৃতি থেকে ইউরোপীয় নেতারা পুতিনের এই নতুন আশ্বাস নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পুতিন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি খসড়া শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা ‘আগামী দিনের চুক্তির ভিত্তি’ হতে পারে। তিনি বলেন, রাশিয়া ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে প্রয়োজন হলে যুদ্ধ চালিয়েও আরও এলাকা দখল করতে প্রস্তুত রয়েছে মস্কো।

পুতিন আবারও বলেন, যুদ্ধ থামাতে হলে সবচেয়ে মৌলিক শর্ত হলো দনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ সরে যাওয়া, এমনকি যেসব এলাকায় বর্তমানে রুশ বাহিনী নেই, সেখান থেকেও। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ইউক্রেনীয় সেনারা যে সব ভূখণ্ডে রয়েছে, সেখান থেকে তাদের সরে যেতে হবে। তবেই যুদ্ধ থামবে। যদি তারা না সরে, তবে আমরা সামরিক উপায়ে সেই লক্ষ্য অর্জন করব।’ ইউক্রেন বলছে, এমন সরে যাওয়া মানে কিয়েভের দিকে রাশিয়ার পথ পুরোপুরি খুলে দেওয়া।

পুতিন আরও ইঙ্গিত দেন যে, তিনি কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তবে আবারও দাবি তুলেছেন যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকার আর বৈধ নয়। তাই তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি ‘আইনগতভাবে অসম্ভব।’ পুতিন অভিযোগ করেন, জেলেনস্কির মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার পর নির্বাচন না হওয়ায় কিয়েভ ‘শাসন করার অধিকার হারিয়েছে।’ তাঁর ভাষায়, “ইউক্রেনের নেতৃত্ব ভয় পেয়েছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে, আর সেই ভুলের ফলেই প্রেসিডেন্টের বৈধতা হারিয়েছে।’

কিয়েভ বলেছে, যুদ্ধকালীন জরুরি আইনের কারণে নির্বাচন করা সম্ভব ছিল না। এ ছাড়া ইউক্রেনের সংসদ ফেব্রুয়ারিতে জেলেনস্কির বৈধতা বজায় রাখার পক্ষে বিপুল ভোটে প্রস্তাব পাস করেছে।

পুতিন দাবি করেন, যেহেতু জেলেনস্কির সরকার তাঁর দৃষ্টিতে ‘অবৈধ’, তাই ভবিষ্যৎ যে কোনো শান্তিচুক্তি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হবে এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার দখল করা এলাকা স্বীকৃতি দিতে হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রধান সহকারী আন্দ্রে ইয়ারমাক বৃহস্পতিবার আবারও জানান, জেলেনস্কি কোনোভাবেই ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি নন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘জেলেনস্কি যত দিন প্রেসিডেন্ট, তত দিন কেউ ভাববে না যে আমরা ভূখণ্ড দিয়ে দেব।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য ২৮ দফার একটি শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ করে, যা রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক বলে সমালোচিত হয়। এতে ইউক্রেনকে বড় ধরনের ছাড় দিতে বলা হয়, যেমন ভূখণ্ড হারানো মেনে নেওয়া এবং ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করা। পরে ইউক্রেনের অনুরোধে পরিকল্পনার কিছু অংশ পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান ইউক্রেনের প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরহি কিসলিতসা। বাতিল করা হয়েছে সেনা সদস্য সংখ্যা ৬ লাখে সীমিত রাখার প্রস্তাব এবং যুদ্ধাপরাধের সাধারণ ক্ষমা।

বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি জানান, জেনেভায় পূর্ববর্তী আলোচনায় যে সূত্র নিয়ে কথা হয়েছে, তা চূড়ান্ত করতে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহেও অতিরিক্ত বৈঠক হবে, তবে বিস্তারিত জানাননি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল, যার মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, আগামী সপ্তাহে মস্কোতে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হবে।

পুতিন বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়া তার নিজের ‘মূল ইস্যু’ উত্থাপন করবে। বিশেষত শান্তি পরিকল্পনার সেই অংশে, যেখানে বলা হয়েছে যে ওয়াশিংটন কেবলমাত্র ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনের কয়েকটি অঞ্চলে রাশিয়ার বাস্তব নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ঠিক এ বিষয়টিকেই কেন্দ্র করে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...