Ajker Patrika

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ: টিউলিপের পাশে দাঁড়ালেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১: ২৯
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক ও অন্যান্যরা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক ও অন্যান্যরা। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ও গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার এই অভিযোগের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। সেই খবর প্রকাশের পর, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নিজ দলের নেতা টিউলিপের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

জার্মান সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আজ বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে—যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বাংলাদেশে অর্থ পাচার তদন্তে নাম জড়ানো ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতি এখনো আস্থা রাখছেন।

এর আগে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল প্রথমে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রোসাটমের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তি–সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং সেই সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক, হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে টিউলিপ প্রায় ১০০ কোটি ডলার ব্যক্তিগত খাতে স্থানান্তরিত করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর নতুন দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশ এই তদন্ত শুরু হয়েছে।

ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, স্টারমার সিদ্দিকের প্রতি তাঁর আস্থা অব্যাহত রেখেছেন এবং তিনি ট্রেজারির অর্থনৈতিক সচিব হিসেবে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী ভূমিকা পালন করে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র জানান, সিদ্দিক তাঁর স্বার্থের ঘোষণা দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করেছেন। মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সরকারে যোগদানের পর থেকে সিদ্দিক বাংলাদেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে জড়িত ছিলেন না।’

ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভার নগরমন্ত্রী এবং সিদ্দিকের বিরোধী পক্ষ মার্ক গার্নিয়ার পলিটিকোকে বলেন, ‘যে কারও মতো টিউলিপও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন এবং আমি আশা করি, তিনি এবং তাঁর পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এসব অভিযোগের জবাব দেওয়ার সুযোগ পাবেন।’

উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি বেঞ্চের মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন, যা ব্রিটেনের আর্থিক বাজারে দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। তবে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এই দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনার পরিবার এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছেন, যার মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানাও জড়িত।

এর আগে, ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনে। এর পাশাপাশি হাসিনার সরকারের ৪৫ জন সাবেক মন্ত্রী ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। ববি হাজ্জাজ দাবি করেছেন, রূপপুর প্রকল্পের জন্য প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের একটি চুক্তি করা হয়। কিন্তু টিউলিপ সিদ্দিক চুক্তির মূল্য থেকে আরও ১০০ কোটি ডলার বৃদ্ধি করেন এবং প্রকল্প ব্যয়ের নাম করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন। যার ৩০ শতাংশ টিউলিপ সিদ্দিক নিজে নেন এবং বাকি অংশ তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের দেন।

আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার প্রধান সৈয়দ ফারুক এই অভিযোগকে ‘বানোয়াট’ বলে অভিহিত করেছেন। টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৫ সালে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের পার্শ্ববর্তী আসনে দায়িত্ব পালন করছেন। দুদক এই অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এপস্টেইনের বাড়িতে নারী নিয়ে সময় কাটান ট্রাম্প, নতুন ই-মেইল ফাঁস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০০ সালে মার-এ-লাগোতে (বাম দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, মেলানিয়া নাউস (বর্তমানে মেলানিয়া ট্রাম্প), জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর সঙ্গী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: এএফপি
২০০০ সালে মার-এ-লাগোতে (বাম দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, মেলানিয়া নাউস (বর্তমানে মেলানিয়া ট্রাম্প), জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর সঙ্গী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: এএফপি

কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এপস্টেইন ফাইলের সঙ্গে জড়িত নতুন কিছু ই-মেইল প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। তাঁদের দাবি, এই ই-মেইলগুলো এপস্টেইন কর্তৃক প্রকাশিত বিশাল নথিপত্র থেকে পাওয়া গেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ বুধবার ডেমোক্র্যাটরা জেফরি এপস্টেইনের কিছু নতুন ই-মেইল প্রকাশ করেন। সেখানে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এপস্টেইনের যৌন নির্যাতনের বিষয়ে জানতেন এবং ভুক্তভোগী ‘মেয়েদের সম্পর্কেও জানতেন’।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি (হাউস ওভারসাইট কমিটি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এসব ই-মেইল প্রকাশ করেছে। এতে এপস্টেইন, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল ও লেখক মাইকেল উলফের মধ্যে আদান–প্রদান করা বার্তা রয়েছে। কয়েকটি ই-মেইলে এপস্টেইনকে ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করতে দেখা গেছে।

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে লেখা একটি ই-মেইলে এপস্টেইন লিখেছিলেন, ‘আমি চাই তুমি বোঝো, যে কুকুরটা এখনো ঘেউ ঘেউ করেনি, সে হচ্ছে ট্রাম্প।’ এরপর তিনি (নাম অপ্রকাশিত) লেখেন, ‘একটি মেয়ে তার (ট্রাম্পের) সঙ্গে আমার বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছে। কিন্তু সে (ট্রাম্প) তার নাম একবারও প্রকাশ করেনি।’ এর জবাবে ম্যাক্সওয়েল লিখেছিলেন, ‘আমি আসলে এটা নিয়েই ভাবছিলাম...’।

প্রতিনিধি পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বলেছেন, এসব ই-মেইল ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ও এপস্টেইনের ভয়াবহ অপরাধের প্রমাণ’।

তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এপস্টেইন বা ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনেনি মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কিছুদিন আগে মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের দাবি, এই মামলার বিষয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করার নেই। কিন্তু এর ঠিক চার মাস পর এই নতুন তথ্য সামনে এল।

ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, এপস্টেইনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। ১৯৯০-এর দশক থেকে ২০০০-এর শুরুর দিকে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল, তবে ২০০৪ সালের দিকে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

গত জুলাই মাসে নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, তৎকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর নাম এপস্টেইনসংক্রান্ত নথিপত্রে রয়েছে। তবে সর্বশেষ নথি প্রকাশের বিষয়ে হোয়াইট হাউস এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুর্নীতির মামলায় নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করতে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্পের চিঠি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এপ্রিলে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহু। ছবি: এপির সৌজন্যে
এপ্রিলে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহু। ছবি: এপির সৌজন্যে

চলমান দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘পূর্ণ ক্ষমা’ চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই চিঠি তিনি সরাসরি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে লিখেছেন।

ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে প্রকাশিত ওই চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমি আপনাকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করার আহ্বান জানাচ্ছি। যুদ্ধকালীন তিনি একজন শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি ইসরায়েলকে শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’

একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ অস্বাভাবিক হলেও ট্রাম্পের জন্য এটি নতুন নয়। তিনি আগেও এভাবে বিভিন্ন দেশে থাকা তাঁর প্রিয় মানুষদের রক্ষা করতে এমন কাজ করেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুরুতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলায় যথাক্রমে জালিয়াতি, ঘুষ এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। তবে নেতানিয়াহু নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বারবার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ট্রাম্প তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘যদিও আমি ইসরায়েলি বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং এর প্রয়োজনীয়তাকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, বিবির বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক ও অযৌক্তিক। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে ইসরায়েলের কঠিন প্রতিপক্ষ ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’

প্রেসিডেন্টের ভূমিকাটি মূলত আনুষ্ঠানিক হলেও ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগের ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে এর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি, তাঁদের আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করতে হয়। নেতানিয়াহু বা তাঁর কোনো ঘনিষ্ঠ কেউ এখন পর্যন্ত এমন কোনো আবেদন জমা দেননি।

হেরজগের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পকে শ্রদ্ধা করে। ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অবিচল সমর্থন, জিম্মিদের প্রত্যাবর্তনে তাঁর বিশাল অবদান, মধ্যপ্রাচ্য ও গাজার পরিবর্তন এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করে। তবে হেরজগের দপ্তর স্পষ্ট করে বলেছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষমা চান, তাঁকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি অনুযায়ী আবেদন জমা দিতে হবে।’

এদিকে ট্রাম্পের এই চিঠি ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এক্সে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হেরজগ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা শুনুন!’ তিনি দাবি করেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই অভিযোগের’ শামিল হয়েছে।

বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেন, ‘মনে রাখবেন, ইসরায়েলি আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার প্রথম শর্ত হলো দোষ স্বীকার করা এবং অনুশোচনা প্রকাশ করা।’

নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন ফৌজদারি মামলার সম্মুখীন হচ্ছেন। ঘুষ, জালিয়াতি এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ২০২০ সালের মে মাসে তাঁর বিচার শুরু হয়েছিল। নেতানিয়াহুর নিজের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, তবে তাঁর অনুরোধে বারবার বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্ব ও বাতিল করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিচার, রায় এবং সম্ভাব্য আপিলের বিভিন্ন পর্যায় বিবেচনায় এই প্রক্রিয়া আরও কয়েক বছর ধরে চলবে।

অন্য দেশের চলমান বিচারিক কার্যক্রমে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে গত জুলাইয়ে এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প তাঁর আরেক আন্তর্জাতিক সহযোগী, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর (যিনি অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন) বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

এরপর এপ্রিলে ট্রাম্প ফরাসি কট্টর ডানপন্থী নেতা মেরিন লো পেনের জন্য পোস্ট দিয়েছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল তছরুপের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় লো পেনকে পাঁচ বছরের জন্য রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে লিখেছিলেন, মেরিন লো পেনের বিরুদ্ধে ‘উইচ হান্ট’ (ডাইনি খোঁজা অভিযান) হলো ইউরোপের বামপন্থীদের আরেকটি উদাহরণ; যেখানে তারা ‘আইনকে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে বাক্‌স্বাধীনতা দমন করছে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চুপ করাচ্ছে। এবার তারা এত দূর গেছে যে প্রতিপক্ষকেই জেলে পাঠাচ্ছে। এটা সেই একই কৌশল, যা আমার বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতীয় গোয়েন্দাদের ঘোল খাওয়াল ডা. উমর, গাড়িটি ৩ ঘণ্টা ধরে পার্কিং লটে অপেক্ষার পর ঘটে বিস্ফোরণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিস্ফোরণের আগে উমর তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাছাকাছি একটি পার্কিং লটে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
বিস্ফোরণের আগে উমর তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাছাকাছি একটি পার্কিং লটে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির লাল কেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত উমর মুহাম্মদের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিস্ফোরণের আগে উমর মুহাম্মদ তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাছাকাছি একটি পার্কিং লটে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি তদন্তকারীদের নতুন তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, উমর মুহাম্মদ গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য প্রথমে লাল কেল্লার পার্কিং এলাকাকে বেছে নিয়েছিলেন, যেখানে শীতকালে ব্যাপক ভিড় থাকে। তবে তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার ও বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধারের পরে হতাশায় থাকা উমর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যান—সোমবার লাল কেল্লা বন্ধ থাকে। তিনি যখন পার্কিং লটে পৌঁছান, তখন সেখানে কোনো ভিড় ছিল না। বিষয়টি উমরকে হতাশ করে এবং তিনি কী করবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন।

তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি নেতাজি সুভাষ মার্গের দিকে গাড়ি নিয়ে যান, যা একদিকে লাল কেল্লা এবং অন্যদিকে চাঁদনি চকের পাশ দিয়ে গেছে। এরপর লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি ট্রাফিক সিগন্যালেই গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়।

ফরিদাবাদ থেকে লাল কেল্লা, উমরের পথ অনুসরণ

প্রায় ৬০০ পুলিশ সদস্য ১ হাজারের বেশি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে উমর মুহাম্মদের সাদা রঙের হুন্ডাই আই-২০ গাড়িটির গতিবিধি শনাক্ত করেছেন।

গাড়িটি সোমবার সকালে ফরিদাবাদের আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি থেকে রওনা হয়। সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে এটি হরিয়ানা-দিল্লি সীমান্তে বাদরপুরের টোল প্লাজা অতিক্রম করে। এরপর ময়ূর বিহার এবং কনট প্লেস হয়ে লাল কেল্লার কাছাকাছি পার্কিংয়ে পৌঁছায়।

এই দীর্ঘ যাত্রার মধ্যে তিনি পুরোনো দিল্লির কাছে আসফ আলী রোডে প্রায় আধা ঘণ্টা বিরতি নেন। সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে গাড়িতে একা বসে থাকতে দেখা যায়। সংক্ষিপ্ত বিরতির পর তিনি আবার ড্রাইভ শুরু করে পার্কিং লটে যান।

কনট প্লেস কি লক্ষ্য ছিল

দিল্লিতে প্রবেশের পর উমর যে পথটি নিয়েছিলেন, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। বাদরপুর টোল বুথ থেকে তিনি প্রথমে ময়ূর বিহারের দিকে যান, যেখানে দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ স্থান অক্ষরধাম মন্দির অবস্থিত। সেখান থেকে সরাসরি পুরোনো দিল্লিতে না এসে তিনি পথ পরিবর্তন করে দিল্লির প্রাণকেন্দ্র কনট প্লেসে যান।

তদন্তকারীরা কনট প্লেস থেকে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছেন এই সন্দেহে যে কনট প্লেস কি হামলার লক্ষ্য ছিল?

উমর সকাল ৮টার পরপরই দিল্লিতে প্রবেশ করলেও বিস্ফোরণ ঘটে প্রায় ১১ ঘণ্টা পরে। দীর্ঘ এই সময়ে পথ পরিবর্তন এবং তিন ঘণ্টা পার্কিং লটে কাটানো—এসবের পেছনে কোনো নির্দেশের জন্য অপেক্ষা, নাকি লক্ষ্য ঠিক করার দ্বিধা কাজ করছিল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

উমরের ফোন নিয়ে বড় প্রশ্ন

পুলিশ জানতে পেরেছে, উমরের ফোনটি বিস্ফোরণের ১০ দিন আগে অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর থেকে বন্ধ ছিল এবং এটির শেষ অবস্থান ছিল আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি। উমরের যাত্রাপথের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁকে একবারও ফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

এ থেকে প্রশ্ন উঠেছে, ফোন ব্যবহার বা বহন না করা কি পরিকল্পনার অংশ ছিল? কোনো ধরনের সন্দেহ এড়াতে তাঁকে ফোন না রাখতে বলা হয়েছিল কি না? অন্য প্রশ্নটি হলো, ফোনের সংযোগ ছাড়া তিনি অন্যদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন? তবে কি উমর অন্য কোনো ফোন ব্যবহার করছিলেন? তদন্তকারীরা এ বিষয়েও খতিয়ে দেখছেন।

পার্কিং লটের ৩ ঘণ্টার রহস্য

পার্কিং লটে উমরের তিন ঘণ্টার অপেক্ষা অনেক প্রশ্ন তুলেছে। কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই সময়ে তিনি ফরিদাবাদে বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের খবর পড়ছিলেন। তবে এটি তাঁর ওপর কী প্রভাব ফেলেছিল, তা জল্পনার বিষয়।

ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলো দাবি করছে, বিস্ফোরণটি আতঙ্ক থেকে ঘটানো হয়েছে। তাদের যুক্তি, বিস্ফোরকগুলো সঠিকভাবে একত্র করা হয়নি, ফলে এর প্রভাব সীমিত হয়েছে। এই আতঙ্ক ফরিদাবাদে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার এবং উমরের সহযোগী গ্রেপ্তারের ফল হতে পারে।

তবে এ মুহূর্তে এগুলো সবই অনুমান, তদন্তই কেবল ঘটনার সম্পূর্ণ শৃঙ্খল উন্মোচন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪৩ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন অবসানের উদ্যোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস ৪৩ দিন চলা শাটডাউনের অবসান ঘটাতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন অর্থায়ন বিলের ওপর ভোটাভুটির আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই বিল পাস হলে খাদ্যসহায়তা পুনরায় চালু হবে, কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী বকেয়া বেতন পাবেন এবং আংশিকভাবে অচল বিমান নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আবার সচল হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিপাবলিকানরা বর্তমানে ২১৯-২১৩ আসনে প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে। তবে বিলটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন থাকায় ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁর দল একত্র থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে গত সোমবার ৬০–৪০ ভোটে পাস হওয়া এই প্রস্তাবে প্রায় সব রিপাবলিকান সিনেটর ও আট ডেমোক্র্যাট সিনেটর সমর্থন দেন। যদিও ডেমোক্র্যাটরা সরকারি অর্থায়নের সঙ্গে বছরের শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া স্বাস্থ্য ভর্তুকি যুক্ত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটি গৃহীত হয়নি। সমঝোতা অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে এই ভর্তুকি নিয়ে ভোট হবে, তবে তা বহাল থাকবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন চুক্তির মাধ্যমে ১ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ ফেডারেল সংস্থাগুলোর অর্থায়ন পুনরায় চালু হবে। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফেডারেল কর্মীর সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

বিলটি এখন রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে আছে। আজ বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে এই বিল পাস করতে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়েছে।

বিলটি পাস হলে সরকারের অর্থায়ন ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হবে। ফলে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার বছরে প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ যোগ করে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পথে এগিয়ে যাবে।

তবে সরকারি কার্যক্রম পুনরায় চালুর পাশাপাশি প্রতিনিধি পরিষদ আরও একটি বিতর্কিত ইস্যুর মুখোমুখি হতে পারে। আর তা হলো, জেফরি এপস্টেইনের অপ্রকাশিত নথি প্রকাশের দাবিতে ভোট। স্পিকার মাইক জনসন ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এত দিন বিষয়টি আটকে রেখেছিলেন।

অর্থাৎ সরকার চালুর সাংবিধানিক দায়িত্ব সম্পন্ন করার পর প্রতিনিধি পরিষদ আবারও ট্রাম্পের সাবেক বন্ধু এপস্টেইনের মৃত্যু ও সংশ্লিষ্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে আলোচনায় ফিরে যেতে পারে।

এই বিলের ওপর ভোট আজ স্থানীয় সময় রাতে হওয়ার কথা। কিছু রিপাবলিকানের বিরোধিতা থাকলেও তা বিল পাসে প্রভাব ফেলবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেন্টাকির রিপাবলিকান থমাস ম্যাসি ও ইন্ডিয়ানার ভিক্টোরিয়া স্পার্টজ আগের অর্থায়ন বিলের বিরোধিতা করেছিলেন, এবারও তাঁরা আপত্তি জানাতে পারেন।

এদিকে, হাউস ফ্রিডম ককাস (কংগ্রেসের রক্ষণশীল ব্লক) প্রায়ই ব্যয়সংক্রান্ত বিল আটকে দেয়। তবে তারা এবার বিলটিতে বাধা দেবে না বলে জানিয়েছেন এর চেয়ারম্যান অ্যান্ডি হ্যারিস। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই এবার এই বিলের পক্ষে থাকব।’

এই ভোটের ফলেই নির্ধারিত হবে—যুক্তরাষ্ট্র সরকার আবার পূর্ণভাবে সচল হতে পারবে নাকি ইতিহাসের দীর্ঘতম অচলাবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত