Ajker Patrika

আক্রান্ত হলে পরস্পরকে রক্ষা করবে সৌদি আরব–পাকিস্তান, যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৮
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ছবি: এক্স
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ছবি: এক্স

পাকিস্তান ও সৌদি আরব গতকাল বুধবার একটি ঐতিহাসিক কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এই দুই দেশের কোনো একটির বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হলে সেটিকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই অবস্থায় উভয় দেশ পরস্পরকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারি সৌদি আরব সফরের সময় এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আল-ইয়ামামা প্রাসাদে তাঁকে স্বাগত জানান সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান। চুক্তি স্বাক্ষরের পর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভ্রাতৃত্ব, ইসলামি সংহতি ও অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থের ভিত্তিতে এবং প্রায় আট দশকের দীর্ঘ অংশীদারত্বের ওপর দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই চুক্তি দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তিতে অবদান রাখার যৌথ অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও উন্নত করা এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ শক্তিশালী করাই এর লক্ষ্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যে কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন মানেই উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন।’

ইসরায়েল সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা চালিয়ে হামাসের নেতাদের টার্গেট করার কয়েক দিন পরই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। এ হামলায় মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা এ চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন অগ্রগতি’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিতে উন্নীত করেছে। পাকিস্তান পূর্বে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অংশ নিলেও এ চুক্তির বিশেষ দিক হলো—এতে যেকোনো আগ্রাসন উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে ধরা হবে।

তাঁরা বলছেন, এই পদক্ষেপ শুধু পাকিস্তান–সৌদি সম্পর্ককেই দৃঢ় করছে না, বরং দক্ষিণ এশিয়া ও মুসলিম বিশ্বের জন্যও এর গুরুত্ব রয়েছে। এতে পাকিস্তানকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার সবচেয়ে সক্ষম মুসলিম শক্তি হিসেবে তুলে ধরা হলো।

বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, সাম্প্রতিক আঞ্চলিক অস্থিরতা, ইসরায়েলের হামলা, দোহা সম্মেলন এবং আরব বিশ্বে সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই চুক্তির তাৎপর্য অনেক। এটি প্রমাণ করছে—বর্ধিত হুমকির সময় সৌদি আরব পাকিস্তানকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস করছে।

শাহবাজ শরিফ আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সৌদি যুবরাজকে ধন্যবাদ জানান উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তার জন্য। তিনি দুই পবিত্র মসজিদের অভিভাবক বাদশাহ সালমান ও যুবরাজের সুস্বাস্থ্য এবং সৌদি জনগণের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। সৌদি বাদশাহও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সুস্বাস্থ্য এবং পাকিস্তানের জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

বৈঠকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ এবং অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত