Ajker Patrika

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে নামাজরত অবস্থায় মারা গেছে ৫ শতাধিক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ৩৫
ভূমিকম্প সাগাইন অঞ্চলে বিধ্বস্ত হওয়া একটি মসজিদ। ছবি: বিবিসি
ভূমিকম্প সাগাইন অঞ্চলে বিধ্বস্ত হওয়া একটি মসজিদ। ছবি: বিবিসি

মিয়ানমারের সাগাইন অঞ্চলে গত শুক্রবার যখন জুমার নামাজের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছিল, তখন শত শত মুসলমান মসজিদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল দ্রুত। তারা রমজানের শেষ শুক্রবারের নামাজ আদায় করতে উৎসুক ছিল। কারণ, পবিত্র মাসের সমাপ্তি শেষে ঈদ উৎসবের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি ছিল। কিন্তু তাদের আনন্দযাত্রা নিমেষেই পরিণত হয় শোকের মিছিলে।

সেদিন স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে এক মারাত্মক ভূমিকম্প আঘাত হানে। তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদ মায়োমাও ছিল। এর ভেতরে প্রায় সবাই মারা যায়। জান্তা সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, সেখানকার পাঁচটি মসজিদে থাকা পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা গেছে।

সাগাইন ও মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কাছে সংঘটিত এই ভূমিকম্পে ২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার অব্যাহত রেখেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাগাইন বৌদ্ধপ্রধান অঞ্চল এবং এই অঞ্চল প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর জন্য পরিচিত। তবে এই অঞ্চলের শহরগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিমের বসবাস আছে। দেশটির জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং সোমবার জানিয়েছেন, মসজিদে নামাজ পড়ার সময় পাাঁচ শতাধিক মুসলমান নিহত হয়েছে।

সাগাইন অঞ্চলের প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, শহরের মসজিদগুলোর মধ্যে মায়োমা স্ট্রিটে অবস্থিত মসজিদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। ওই সড়কের আরও অনেক বাড়িও ধসে পড়েছে। শত শত মানুষ এখন রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে—কারও বাসা ভেঙে গেছে, কেউ আবার আফটারশকের ভয়ে ঘরে ফিরতে সাহস পাচ্ছে না। খাদ্যের সরবরাহও সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।

শুধু মায়োমাতেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ৬০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে, আর মিয়োদাও ও মোইকিয়া মসজিদেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখান থেকে আরও মৃতদেহ উদ্ধার করা হচ্ছিল।

এদিকে, মিয়ানমারে গত শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানীর ৭০ শতাংশ ভবন। স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পানিই নেই, খাবার তো দূরের কথা। বিদ্যুৎ নেই। জ্বালানি, ওষুধ, আশ্রয়—এসব এখন বিলাসিতা।’

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়া দেশটিতে একের পর এক যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। গত শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর গৃহযুদ্ধের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম এখন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী অং সান সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করার পর এই সংঘাত শুরু হয়।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ (এনইউজি)। তবে এই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী গতকাল শনিবার ঘোষণা দিয়েছে, তারা রোববার থেকে দুই সপ্তাহের জন্য একতরফা যুদ্ধবিরতি পালন করবে। তবে সেনা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সংঘাতে বাস্তুচ্যুত ৩০ লাখের বেশি মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহে সেনাবাহিনী আগে থেকেই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে। সমালোচকেরা বলছেন, সেনারা ত্রাণকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানের সংবিধান সংশোধন: সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আসছে যেসব পরিবর্তন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পাকিস্তান সরকার দেশটির সংবিধানে ২৭তম সংশোধনী আনতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এই বিষয়ক বিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে দেশটির বিচারব্যবস্থা ও সামরিক কমান্ড কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আজারবাইজান থেকে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভা বৈঠক পরিচালনা করে ২৭তম সংবিধান সংশোধনী খসড়ায় অনুমোদন দেন। এরপরই বিলটি সিনেটে উত্থাপন করা হয় এবং তা পাঠানো হয় আইন ও বিচারবিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে।

আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার বিলটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২৭তম সংশোধনী আসলে ২০০৬ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘চার্টার অব ডেমোক্রেসির’ অংশ। কিন্তু ১৮তম সংশোধনীর সময় তা সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি।

সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, সংবিধানের ২৪৩ ধারা—যেখানে বলা হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও কমান্ড ফেডারেল সরকারের হাতে থাকবে’ এবং ‘সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন রাষ্ট্রপতি’—এ কিছু পরিবর্তন আনা হবে। খসড়া অনুযায়ী, সশস্ত্রবাহিনীর ‘চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি’ (CJCSC) পদটি বাতিল করে নতুন একটি পদ তৈরি করা হবে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস।’

এ ছাড়া বিলটিতে বলা হয়েছে, সেনা কর্মকর্তা বা বিমান ও নৌবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দেওয়া সম্মানসূচক উপাধি—যেমন ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স ও অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট—আজীবন বহাল থাকবে। আইনমন্ত্রী বলেন, এসব উপাধি বাতিল করার ক্ষমতা কেবল পার্লামেন্টের হাতে থাকবে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের সুপারিশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে একজন কর্মকর্তাকে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেবেন।

সংশোধনীর আরেকটি বড় প্রস্তাব হলো, একটি নতুন আদালত গঠন—ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট। এই আদালত প্রতিষ্ঠিত হলে সুপ্রিম কোর্টের কিছু ক্ষমতা কমে যাবে। খসড়ায় বলা হয়েছে, সংবিধানের কিছু বিশেষ এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্ট থেকে সরিয়ে নতুন ফেডারেল সংবিধান আদালতে স্থানান্তর করা হবে।

বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। পাশাপাশি নতুন আদালতে বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে পার্লামেন্টের হাতে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফেডারেল সংবিধান আদালতে দেশের সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এই আদালতের প্রধান বিচারপতির মেয়াদ হবে তিন বছর।

২৭তম সংবিধান সংশোধনীর প্রধান বিষয়গুলো

  • নতুন পদ ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ তৈরি হবে, যা ২০২৫ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
  • সেনাপ্রধান (Chief of Army Staff) একই সঙ্গে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
  • ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স, অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট উপাধি আজীবন বহাল থাকবে।
  • প্রধানমন্ত্রী “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের’ সুপারিশে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধান নিয়োগ দেবেন।
  • নতুন ফেডারেল সংবিধান আদালত গঠন করা হবে।
  • আদালতে সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
  • বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা বাড়বে।
  • ফেডারেল সংবিধান আদালতে বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণ করবে পার্লামেন্ট।
  • সুপ্রিম কোর্টের কিছু ক্ষমতা নতুন আদালতে স্থানান্তর হবে।
  • ফেডারেল সংবিধান আদালতের প্রধান বিচারপতির মেয়াদ হবে তিন বছর।
  • রাষ্ট্রপতি আজীবনের জন্য ফৌজদারি মামলার দায়মুক্তি পাবেন।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় মরছে মানুষ, নিহত ছাড়াল ৬৯ হাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৩
গাজার শাতি শরণার্থীশিবিরে ধ্বংসস্তূপের মাঝে হেঁটে যাচ্ছে শিশুরা। ছবি: এএফপি
গাজার শাতি শরণার্থীশিবিরে ধ্বংসস্তূপের মাঝে হেঁটে যাচ্ছে শিশুরা। ছবি: এএফপি

হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার প্রায় এক মাস পরও গাজায় মৃত্যুর মিছিল থামছে না। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে লাশ উদ্ধারের কাজ চলতে থাকায় নতুন করে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ১৬৯ জনে। নতুন করে কিছু লাশ উদ্ধার ও পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় এই সংখ্যা বেড়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গত এক মাসে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। শনিবারও নতুন হত্যাকাণ্ডের খবর মিলেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘হলুদ রেখা’ পেরিয়ে সেনাদের কাছে পৌঁছে যাওয়া এক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

এই ‘হলুদ রেখা’ হচ্ছে সেই সীমারেখা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হটতে রাজি হয়েছিল। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলেও আরেক ফিলিস্তিনি ওই রেখা পেরিয়ে তাদের সেনাদের ওপর ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ তৈরি করায় তাকেও হত্যা করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনারা এখনো সীমারেখার কাছে যাওয়া সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। পরিবারগুলো এতে হতাহত হচ্ছে। গাজার খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলে যাওয়া বিস্ফোরক বিস্ফোরিত হয়ে এক ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে নাসের হাসপাতাল।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) রাফাহ সীমান্ত আবার খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে আহত ও অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠানো যায়। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ফিলিস্তিনি রোগী রাফাহ হয়ে মিসর ও অন্যান্য দেশে গেছেন চিকিৎসার জন্য। তবে আরও প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ রোগী চিকিৎসার অপেক্ষায় আছে।

সংস্থাটি বলেছে, ‘রাফাহ সীমান্ত গাজার চিকিৎসা সরবরাহ প্রবেশ ও রোগীদের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ। জরুরি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য মিসর এখনো অন্যতম প্রধান গন্তব্য।’

এদিকে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান ও দখলদার ইসরায়েলি বসতকারীদের হামলা অব্যাহত আছে। অভিযোগ উঠেছে, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যেই এসব হামলা চলছে। শনিবার নাবলুসের দক্ষিণে বেইতা শহরে অলিভ তুলতে যাওয়া ফিলিস্তিনি কৃষক, কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় একদল ইসরায়েলি বসতকারী।

ইসরায়েলি বর্ণবৈষম্যবিরোধী কর্মী জোনাথন পোলাক আল জাজিরাকে বলেন, তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে জলপাই তুলতে গিয়েছিলেন। তখন ডজনখানেক মুখোশধারী ইসরায়েলি বসতকারী লাঠি নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে এসে তাদের দিকে বিশাল পাথর ছুড়ে মারে। পোলাক আরও বলেন, ‘ওরা পাথর ছুড়তে শুরু করলে আমরা প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দিই।’

জোনাথন পোলাক জানান, হামলায় অন্তত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছে, যাদের চিকিৎসা নিতে হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সাংবাদিক গুরুতরভাবে মার খেয়েছেন, আর ৭০ বছর বয়সী এক কর্মীর গাল ও চোয়ালের হাড় ভেঙে গেছে।

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন জানিয়েছে, হামলায় পাঁচ সাংবাদিক আহত হয়েছেন—রানিন সাওয়াফতে, মোহাম্মদ আল-আত্রাশ, লুয়াই সাঈদ, নাসের ইশতাইয়েহ ও নাঈল বুয়াইতেল। সংগঠনটি হামলাটিকে ‘সাংবাদিকদের হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের দুই কর্মী—একজন সাংবাদিক ও তার সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই হামলায় আহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া: লাভরভ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ছবি: সংগৃহীত
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। শনিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস এ তথ্য জানিয়েছে।

লাভরভ বলেন, ‘৫ নভেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পুতিন যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ফলাফল সম্পর্কে জনসাধারণকে পরে জানানো হবে।’

তাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিনের এই নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণার পর আসে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করবে।

লাভরভ আরও জানান, রাশিয়া এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ট্রাম্পের এই নির্দেশনা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পায়নি।

গত কয়েক সপ্তাহে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মারাত্মকভাবে খারাপ হয়েছে। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প এক দিনে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাবেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফলাফল না আসায় তিনি পুতিনের কর্মকাণ্ডে বারবার হতাশ হয়েছেন। এর ফলে সম্প্রতি পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত একটি বৈঠক বাতিল করেছেন এবং জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ নির্যাতনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের জি-২০ সম্মেলন বয়কট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: ইপিএ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: ইপিএ

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যা চলছে। এসব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরকারি প্রতিনিধি দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবেন না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় জি-২০ সম্মেলন আয়োজন করা লজ্জাজনক। আফ্রিকানরা সেখানে বসতি স্থাপনকারী ডাচ, ফরাসি ও জার্মান বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গদের হত্যা করছে, তাদের জমি ও খামার জোর করে দখল করছে। যত দিন সেখানে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন চলবে, তত দিন পর্যন্ত কোনো মার্কিন প্রতিনিধি সেখানে যাবে না।’

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, আফ্রিকানারদের (দক্ষিণ আফ্রিকায় বসতি স্থাপনকারী ডাচ, ফরাসি ও জার্মান বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ) একচেটিয়া শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী হিসেবে চিত্রিত করা ইতিহাস বিকৃতি। পাশাপাশি, এই সম্প্রদায় নিপীড়নের শিকার—এমন দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জি-২০-এ থাকা উচিত নয় এবং তিনি নিজে না গিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সকে পাঠাবেন। তবে এখন হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো কর্মকর্তাই এই সম্মেলনে অংশ নেবেন না।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শেষের দিকে জোহানেসবার্গে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছর জি-২০ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একটি দেশ এই সম্মেলনের আয়োজক হয় এবং তারাই সম্মেলনের অ্যাজেন্ডা নির্ধারণ করে। এ বছর আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা, পরের বছর যুক্তরাষ্ট্র।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বলছে, তাদের দেশে ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ চলছে এমন দাবি ‘ভিত্তিহীন ও অবিশ্বস্ত সূত্রনির্ভর’। দেশটির কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত শরণার্থী কর্মসূচি ঘোষণার পরও খুব অল্পসংখ্যক আফ্রিকান এই সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, আমাদের দেশে শ্বেতাঙ্গরা নিরাপদে আছেন।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্প একাধিকবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের ওপর বৈষম্য ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। গত মে মাসে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময়ও একই অভিযোগ করেন।

এরপর ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানারদের ‘গণহত্যার শিকার’ আখ্যা দিয়ে শরণার্থী মর্যাদা দেয়। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস ঘোষণা করে, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশের সর্বোচ্চ সীমা ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে এবং শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার একটি আদালত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের এই গণহত্যার দাবিকে ‘কল্পনাপ্রসূত ও প্রমাণহীন’ বলে খারিজ করে দেয়।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে এশীয় অর্থনৈতিক সংকটের পর জি-২০ গঠিত হয়, যাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা বিশ্বের মোট সম্পদের ৮৫ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। ২০০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় ‘আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্য’ নিয়ে প্রথম জি-২০ নেতাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে প্রতিবছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকান ইউনিয়ন বিশ্ব অর্থনীতি ও নানা বৈশ্বিক ইস্যুতে আলোচনা করতে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত