Ajker Patrika

আমেরিকা গেল, তালেবান এল, আফগানিস্তান সেই তিমিরেই

আমিনুল ইসলাম নাবিল
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৫৭
আমেরিকা গেল, তালেবান এল, আফগানিস্তান সেই তিমিরেই

কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন পরাশক্তির হাতবদল হচ্ছে আফগানিস্তান। কখনো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আমল, কখনো তালেবান, আবার কখনো মার্কিন যুগে বাধ্য হয়েই পা রাখতে হয়েছে আফগানদের। সেই পালাবদলের চক্রে এবার ফের তালেবান শাসনে ফিরে গেছে আফগানিস্তান। কিন্তু আলো কি ফিরল? 

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবনে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলা বদলে দেয় পুরো বিশ্ব পরিস্থিতি। হামলার সঙ্গে জড়িত থাকায় আফগানিস্তানের উগ্রপন্থী সংগঠন আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে দেশটি। হামলার মাধ্যমে আফগানিস্তানের তৎকালীন তালেবান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। এরপর একে একে কেটে যায় ২০টি বছর। 

দীর্ঘ যুদ্ধে অনেক লাভক্ষতির হিসাব সামনে উঠে আসতে থাকে। দুই দশকের যুদ্ধে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি ডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধে প্রাণ হারায় প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা। যুদ্ধের বিপক্ষে জনমত তৈরি হতে থাকে। খোদ মার্কিন নাগরিকেরাই আফগান যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরে আসার পক্ষে মত দেয়। লাভক্ষতির হিসাব কষতে কষতে একপর্যায়ে আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। 

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার বিষয়টি জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলেও এর শুরুটা হয়েছিল মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের সময়। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনবেন এবং ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন। 

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর আফগানিস্তানে বড় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন ওবামা। তিনি যখন হোয়াইট হাউস ছাড়েন আফগানিস্তানে তখন সেনাসংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কম। সে সময় ওবামা বলেছিলেন, তাঁর উত্তরসূরি ক্ষমতায় এসে আফগানিস্তানের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। 

বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প, জো বাইডেনবারাক ওবামার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ক্ষমতায় এসে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিন্তু তালেবান নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করায় ২০১৭ সালের আগস্টে ট্রাম্প বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার কঠিন হচ্ছে। সে সময় তিনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। 

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ৩১ মের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। তালেবান তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সামনে যে কয়েক মাস মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর সেনাসদস্যরা আফগানিস্তানে আছে, তাদের ওপর কোনো প্রকার হামলা চালানো হবে না। দোহা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নতুন করে গতি পায়। 
 
দোহা চুক্তির পর তালেবানের উল্লাসডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে ২০২০ সালের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন জো বাইডেন। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর জো বাইডেনও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পথেই হাঁটেন। ওই বছরের ১৪ এপ্রিল জো বাইডেন ঘোষণা দেন, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগে আফগানিস্তানে থাকা আড়াই হাজার সেনা সদস্যকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এ ঘোষণার পর দ্রুত সেনা প্রত্যাহারের কাজ শুরু করে পেন্টাগন। গত ২ জুলাই বাগরাম বিমানঘাঁটি আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। 

এরপর জো বাইডেন নতুন সময়সীমা বেঁধে দেন। নতুন সময়সীমা অনুযায়ী ৩১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে আসবে বলে ঘোষণা হয়। এরপরই যেন তেতে ওঠে তালেবান। সে সময় মার্কিন গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকে ৩০ দিনে বিচ্ছিন্ন এবং ৯০ দিনের মধ্যে দখলে নিতে পারে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। কিন্তু পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়ে ১৫ আগস্টের মধ্যেই আফগানিস্তান দখলে নিয়ে নেয় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। 

আফগানিস্তান-তালেবান ইস্যু বছরজুড়েই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ২১ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের সরকারের পতন চলতি বছর বিশ্ব আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। দেশটির খবর জানতে বিশ্বজুড়ে মানুষ ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি ঢুঁ মেরেছে। চলতি বছর দেশটির নাম বিশ্বের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন গুগলে সবচেয়ে বেশি খোঁজ করা শব্দের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে। 

গুগল সম্প্রতি ২০২১ সালের বার্ষিক রিক্যাপ প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ এবং বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটে কী ট্রেন্ডিং ছিল এবং মানুষ কী বিষয়ে জানতে চেয়েছে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। গুগলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সংবাদ খোঁজার সময় আফগানিস্তানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। 

তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর বিশ্বজুড়ে তৈরি হয় নানান আলোচনা। কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়াই দেশ থেকে পালিয়ে যান তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি। আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিকেরাও পালানোর জন্য কাবুল বিমানবন্দরে ভিড় জমাতে থাকেন। হুড়োহুড়ি করে উড়োজাহাজে চড়ার সময় উড়োজাহাজ থেকে ছিটকে নিচে পড়ার দৃশ্য বিশ্ববাসীর হৃদয়ে দাগ কাটে। প্রশ্ন ওঠে, এই তালেবান কি সত্যিই আফগানিস্তানে শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে? এমন জল্পনাকল্পনার মধ্যেই কাবুল বিমানবন্দরে আইএসের হামলা নিয়ে নতুন শঙ্কা জাগে। ২৬ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ১৭৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি ও ১৩ মার্কিন সেনা। আফগানিস্তানে শান্তি ফেরার বিষয়ে বড় প্রশ্ন রেখে যায় সেই ঘটনা। ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। দেশের ক্ষমতা বুঝে নেয় তালেবান। 

কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে আফগানিস্তান ছাড়ছে মানুষ

ক্ষমতায় আসার পর সরকার গঠনে খুব বেশি দেরি করেনি তালেবান। ৮ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানকে ‘ইসলামিক আমিরাত’ ঘোষণা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দলটি। ৩৩ সদস্যের এই সরকারে প্রধানমন্ত্রী করা হয় তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের ঘনিষ্ঠ ও আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে। সরকার গঠন করলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় পদে পদে বিপদে পড়তে হয় তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারকে। একের পর এক দেশ তহবিল আটকে দিতে থাকে। বছরের শেষ দিকে এসে চরম খাদ্যসংকটে পড়েছে দেশটি। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, আফগানিস্তানের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশই আসে বিদেশি সাহায্য থেকে। 

আফগানিস্তানকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে অবশ্য এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। জার্মানির নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালনো বেয়ারবক বলেছেন, আফগানিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। একাধিক ক্ষেত্রে আফগানিস্তান কার্যত ভেঙে পড়েছে। জার্মানির হিসাবে, চলতি বছর শুধু তীব্র শীতে ২ কোটি ৪০ লাখ আফগানের মৃত্যু হতে পারে। এর মধ্যে অসংখ্য শিশুও আছে। বেয়ারবক বলেন, ‘চোখ বুজে রেখে এই মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারি না। আমাদের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাদের উদ্ধার করতে হবে।’ 

তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে আইএস। উল্লেখযোগ্য বড় দুটি হামলার ঘটনা ঘটে গত ৮ ও ১৫ অক্টোবর। পরপর দুই শুক্রবার আফগানিস্তানে জুমার নামাজ চলাকালীন হামলার ঘটনা ঘটে। প্রথম হামলাটি হয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুন্দুজে। আর দ্বিতীয়টি হয় দক্ষিণাঞ্চলের শহর কান্দাহারে। দুই হামলায় প্রাণ হারায় শতাধিক মানুষ। 

মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালীন আইএসের হামলা

অর্থনৈতিক সংকট ও আইএসের হামলার পাশাপাশি তালেবানের সামনে বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল নারী ইস্যু। এ ক্ষেত্রে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই নানা সুমধুর বাণী শোনাতে থাকে। সরকারেও নারীর অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেয় গোষ্ঠীটি। তবে তালেবান সরকার গঠনের পর একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করা হয় নারীদের ওপর। আফগানিস্তানে টেলিভিশন নাটকে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ২০ বছর আগের তালেবানের চেয়ে এখনকার তালেবান নারী অধিকারের বিষয়টি কিছুটা হলেও নমনীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনামলে নারীদের কোনো পুরুষ সঙ্গী এবং পর্দা ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। মেয়েদের শিক্ষাও ছিল নিষিদ্ধ। এবার সেসব দিক থেকে অন্তত খানিকটা সরে এসেছে তালেবান। 

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকটি সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চার অপহরণকারী নিহত হওয়ার পর তাঁদের মরদেহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে প্রদর্শন করা হয়। আর এর দুই দিন পর আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে দাঁড়ি কামানো অথবা ছাঁটার ব্যাপারে নরসুন্দরদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও আরও নানা ইস্যু নিয়ে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আলোচনায় ছিল তালেবান। 

নারীদের ছবি মুছে দিচ্ছে তালেবানতালেবান ক্ষমতায় আসার পর হুমকির মুখে পড়েছে আফগানিস্তানের সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ। এ নিয়ে সমলোচনা হচ্ছে বেশ। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রিপোর্টারস উইথআউট বর্ডারস (আরএসএফ) এবং আফগান ইন্ডিপেনডেন্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (এআইজেএ) করা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগানিস্তানে ৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন। ২৩১টির বেশি সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নারী সাংবাদিকেরা, ৮০ শতাংশই তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন।

নানান উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া আফগানিস্তানকে অবশ্য বছরের শেষ সময়ে এসে বাকি বিশ্বের মানবিক সহায়তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। আপাতত আফগানিস্তানের লড়াইটা শুধু ক্ষুধার বিরুদ্ধে। অভুক্ত মানুষকে তো আর বুলেট-বোমায় ঠেকিয়ে রাখা যায় না! ধারণা করা হচ্ছে, এই লড়াইয়ে টিকে থাকার ওপরই নির্ভর করছে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের ভবিষ্যৎ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রসৈকতে বন্দুকধারীদের হামলা, নিহত কমপক্ষে ১০

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি বিচে বন্দুকধারীদের গুলি, নিহত অন্তত ১০

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৯
সিডনির বন্ডি সমুদ্রসৈকতে বন্দুকধারীদের হামলায় অনেক হতাহত। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সিডনির বন্ডি সমুদ্রসৈকতে বন্দুকধারীদের হামলায় অনেক হতাহত। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত বন্ডি সমুদ্র সৈকতে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন হামলাকারী বা বন্দুকধারীও রয়েছে। এই ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন সাধারণ নাগরিক এবং ২ জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় মোট দুজন হামলাকারী জড়িত ছিল। নিহত ১০ জনের মধ্যে একজন বন্দুকধারী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। অন্য বন্দুকধারী আহত অবস্থায় রয়েছে এবং তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

কর্তব্যরত অবস্থায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। আহত নাগরিকদের পাশাপাশি তাঁদেরও চিকিৎসা চলছে।

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে একটি বিশেষ নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করেছে। একই সঙ্গে, ঘটনাস্থল থেকে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বা হাতে তৈরি বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য বিশেষায়িত সরঞ্জাম এবং দলকে আনা হয়েছে।

যদিও পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে একটি এক্সক্লুশন জোন তৈরি করেছে, তবে সেই নির্দিষ্ট এলাকার অবস্থান এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এইচ–১বি ভিসার ফি বাড়ানোয় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২০ অঙ্গরাজ্যের মামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প এইচ–১বি ভিসার ফি বাড়ানোয় তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে ২০ মার্কিন অঙ্গরাজ্য। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প এইচ–১বি ভিসার ফি বাড়ানোয় তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে ২০ মার্কিন অঙ্গরাজ্য। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দেশটিতে বিদেশি দক্ষ শ্রমশক্তি নিয়োগ দেওয়ার ভিসা এইচ–১ বি’র ফি বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করেছেন। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ২০টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বনটা গত শুক্রবার ঘোষণা করেছেন, এইচ–১বি ভিসা আবেদনের ফি বাড়িয়ে ১ লাখ মার্কিন ডলার করায় ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়া ও আরও উনিশটি রাজ্য মামলা করছে।

বনটা দাবি করেন, দক্ষ কর্মীদের জন্য নির্ধারিত এই ভিসার জন্য ফি বৃদ্ধি বেআইনি। কারণ, এটি কংগ্রেসে অনুমোদিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং এই কর্মসূচি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাদের মূল উদ্দেশ্যকে ক্ষুণ্ন করছে। মামলার সঙ্গে যুক্ত সকল রাজ্যেই অ্যাটর্নি জেনারেলরা ডেমোক্র্যাট দলের।

সান ফ্রান্সিসকোতে একটি সংবাদ সম্মেলনে বনটা সাফ বলেন, ‘কোনো প্রেসিডেন্টের প্রশাসন অভিবাসন আইনকে নতুন করে লিখতে পারে না। কোনো প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের মতো সরকারকে উপেক্ষা করতে পারেন না, সংবিধান বা আইনকেও এড়িয়ে যেতে পারেন না।’

এই ভিসার সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী হলো বড় টেক কোম্পানিগুলো, যারা দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়ে আসে। ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন ক্যাম্পেইনের রিপাবলিকান সমর্থকেরা অভিযোগ করছেন, কোম্পানিগুলো সস্তা শ্রমের জন্য আমেরিকানদের পাশ কাটিয়ে এই কর্মসূচির অপব্যবহার করছে। কিন্তু বনটা যুক্তি দেন, এই ফি আরোপের ফলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য খাতেও শ্রমিকের ঘাটতি আরও বাড়বে। এতে চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক, নার্স ও সরকারি সেবাকর্মীর মতো পদগুলো পূরণ করা আরও কঠিন হবে।

তিনি এও সতর্ক করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সেপ্টেম্বরে এক নির্বাহী ঘোষণায় যে ১ লাখ ডলারের ফি ধার্য করেছেন, তা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোমের ইচ্ছানুযায়ী বেছে বেছে প্রয়োগ করা হতে পারে। দক্ষ অভিবাসন এবং বিশেষ করে এইচ–১বি ভিসা এর আগেও ট্রাম্পের জনতুষ্টিমূলক সমর্থক আর বিশ্বজুড়ে প্রতিভা আকর্ষণে চিন্তিত সিলিকন ভ্যালির মিত্রদের মধ্যে মতভেদের কারণ হয়েছিল।

এই নীতি ঘোষণার পর এবং প্রোগ্রামটি ব্যবহারকারী প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার পর প্রেসিডেন্ট তাঁর অবস্থানে খানিকটা নমনীয় হয়েছেন বলেই মনে হয়। গত মাসে ফক্স নিউজের উপস্থাপক লরা ইনগ্রাহামের সঙ্গে এইচ–১বি ভিসা নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এই দাবি অস্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট প্রতিভাবান মানুষ রয়েছে; তিনি তখন বলেছিলেন যে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মীর প্রয়োজন এখনো আছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টেইলর রজার্স গত শুক্রবার প্রশাসনের পদক্ষেপের পক্ষ নিয়ে বলেন, এটি কেবল আইনসম্মতই নয়, বরং এটি ‘এইচ–১বি প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয় সংস্কারের দিকে একটি জরুরি, প্রাথমিক, ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপ।’

মামলার জবাবে এক বিবৃতিতে রজার্স বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান কর্মীদের প্রথম স্থানে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এবং এইচ–১বি ভিসার ওপর তাঁর এই সাধারণ পদক্ষেপ সে কাজটাই করছে। এটি কোম্পানিগুলোকে সিস্টেমের অপব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করবে এবং আমেরিকানদের মজুরি কমিয়ে দেওয়া থেকে বিরত রাখবে, আবার যে সকল নিয়োগকর্তার বিদেশ থেকে সেরা প্রতিভা আনার প্রয়োজন, তাঁদের কাছে নিশ্চয়তাও দেবে।’

বনটা শুক্রবার এইচ–১বি প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট কোনো সংস্কারের সুপারিশ করেননি, যদিও তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন যে যেকোনো প্রোগ্রাম বা নীতির মতোই এরও ‘সম্ভবত উন্নতির সুযোগ রয়েছে।’ চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউএস চেম্বার অব কমার্স একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে এই নতুন ফি-এর বিরুদ্ধে আলাদা একটি মামলা দায়ের করেছিল। তাদের আপত্তি ছিল যে প্রশাসন এইচ–১বি প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী আইনের বিধানগুলো অগ্রাহ্য করেছে। এ ছাড়া, ভিন্ন ভিন্ন খাতের শ্রমিক সংগঠনসহ আরও বড় একটি গোষ্ঠী থেকেও আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নতুন মামলা ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা হবে এবং এর নেতৃত্ব দেবেন বনটা ও বে স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া জয় ক্যাম্পবেল। এই নিয়ে বনটা চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ৪৯ বারের মতো আদালতে গেলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণ সূচকে সর্বোচ্চ সীমায় দিল্লি, জনজীবন বিপর্যস্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভয়াবহ বায়ুদূষণে সৃষ্ট ধোঁয়াশার কারণে ভোর বেলাতেও দৃষ্টসীমা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ছবি: এক্স
ভয়াবহ বায়ুদূষণে সৃষ্ট ধোঁয়াশার কারণে ভোর বেলাতেও দৃষ্টসীমা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ছবি: এক্স

ভারতের রাজধানী দিল্লির আকাশ ঘন ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা। শহরটির বাতাসের মান ‘সিভিয়ার বা গুরুতর’ শ্রেণিতেই আটকে আছে বেশ কয়েক দিন ধরে। আজ রোববার সকালের ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) জানায়, সকাল ৬টায় দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই ছিল ৪৬২।

দিল্লির ৪০টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সব কটিতেই বাতাসের দূষণ নির্দেশক সূচক ‘লাল’, অর্থাৎ বাতাসের মান ‘গুরুতর’ পর্যায়ে রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম দিল্লির রোহিণীতে একিউআই রেকর্ড করা হয়েছে ৪৯৯। সেখানে প্রধান দূষক ছিল পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ বা পিএম ২.৫ কণা। এর পরেই আছে জাহাঙ্গীরপুরী ও বিবেক বিহার, যেখানে একিউআই ছিল ৪৯৫।

স্মগ বা ধোঁয়াশার কারণে দিল্লির একাধিক এলাকায় দৃষ্টিসীমা কমে গেছে। পূর্ব দিল্লির পাটপারগঞ্জ থেকে পাওয়া দৃশ্যে দেখা যায়, সকাল ৬টায় সেখানে একিউআই ছিল ৪৮৮ এবং মানুষজন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছেন।

একিউআই বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স হলো—জনস্বাস্থ্যের একটি সূচক, যার মাধ্যমে বাতাসে দূষণের মাত্রা বা বায়ুর গুণমান সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানো হয়। সিপিসিবির তথ্য অনুযায়ী, কোনো এলাকার একিউআই নির্ধারণে আটটি দূষককে প্রধান সূচক হিসেবে ধরা হয়। এগুলো হলো পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএস) ১০, পিএম ২.৫, ওজোন, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা এবং অ্যামোনিয়া।

সিপিসিবি জানায়, একিউআই যদি ০ থেকে ৫০—এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো।’ ৫১ থেকে ১০০ হলে ‘সন্তোষজনক’, ১০১ থেকে ২০০ ‘মাঝারি’, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খারাপ’, ৩০১ থেকে ৪০০ ‘অত্যন্ত খারাপ’ এবং ৪০১ থেকে ৫০০ হলে তা ‘গুরুতর’ হিসেবে ধরা হয়। এই প্রতিটি স্তরই দূষণের মাত্রা এবং তার সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। যেমন, একিউআই যদি ‘গুরুতর’ পর্যায়ে থাকে, তাহলে তা সুস্থ মানুষের জন্যও বিপজ্জনক। এ অবস্থায় বাইরে বের হওয়া বা খোলা জায়গায় শরীরচর্চা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এই অবস্থায় দিল্লির দূষণ বর্তমানে একিউআইয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৫০০ ছাড়াতে পারে কী—এই প্রশ্নও সামনে এসেছে। ভারতের একিউআই স্কেল সর্বোচ্চ ৫০০ পর্যন্ত নির্ধারিত। অর্থাৎ ৫০০-এর বেশি হলে সেটিও ‘গুরুতর’ শ্রেণির মধ্যেই ধরা হয়, যা একটি জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের চেয়ার প্রফেসর অধ্যাপক ড. গুফরান বেগ বলেন, ‘৪০০-এর ওপরে একিউআই অত্যন্ত বিপজ্জনক। ধরে নেওয়া হয়, একিউআই ৫০০ আর একিউআই ৯০০-এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব প্রায় একই। তাই বেশি সংখ্যা দেখিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করার প্রয়োজন নেই।’

তবে এনভায়রোক্যাটালিস্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিশ্লেষক সুনীল দাহিয়া বলেন, একিউআই ৫০০-তে সীমাবদ্ধ রাখার পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই, যদিও প্রযুক্তিগতভাবে এর চেয়েও বেশি মান নির্ণয় করা সম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘এটা ঠিক যে, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তুলনামূলক কম ঘনত্বে বেশি হয় এবং খুব উচ্চ ঘনত্বে বাড়লেও তা ধীরে বাড়ে। কিন্তু তাৎক্ষণিক ঝুঁকি তখন অনেক বেশি হয়। বিশেষ করে দূষণ হঠাৎ খুব বেড়ে গেলে হৃদ্‌রোগী, শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষ এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য তা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা চিকিৎসাজনিত জরুরি অবস্থার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। খড় পোড়ানোর মৌসুম বা দীপাবলির সময় আমরা এমন পরিস্থিতি বারবার দেখেছি।’

দিল্লিতে বাড়তে থাকা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে শনিবার বায়ু মান ব্যবস্থাপনা কমিশন গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান বা গ্র্যাপ-এর তৃতীয় ধাপের বিধিনিষেধ জারি করে। পরে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেটি আরও কঠোর করে গ্র্যাপ-৪ কার্যকর করা হয়।

একিউআই হঠাৎ খারাপ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংস্থাটি জানায়, উত্তর-পশ্চিম ভারতে ধেয়ে আসা দুর্বল পশ্চিমা ঝঞ্ঝাই ছিল এর প্রধান কারণ, স্থানীয় নির্গমন নয়। কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতিতে বাতাসের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, অনেক সময় একেবারেই স্থির হয়ে পড়ছে। বাতাসের দিক পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে ঘুরেছে এবং নিম্ন বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়েছে। শীতকালীন এ ধরনের পরিস্থিতি ধোঁয়াশা ও কুয়াশা তৈরির জন্য অনুকূল, ফলে দূষকগুলো সহজে ছড়িয়ে না পড়ে ভূপৃষ্ঠের কাছেই আটকে থাকে। এই বিরূপ আবহাওয়ার কারণেই হঠাৎ করে বায়ুর মানের অবনতি ঘটেছে।

গ্র্যাপ-৪-এর আওতায় একাধিক কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। দিল্লিতে অপ্রয়োজনীয় ট্রাকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে যেসব ট্রাক জরুরি পণ্য বা পরিষেবা বহন করে, অথবা এলএনজি, সিএনজি, বিদ্যুৎ চালিত কিংবা বিএস-ফাইভ ডিজেলে চলে, সেগুলো এর বাইরে থাকবে। দিল্লিতে নিবন্ধিত মাঝারি ও ভারী পণ্যবাহী ডিজেলচালিত যানবাহন, বিশেষ করে বিএস-৪ ও তার আগের মানের যান, নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু জরুরি পরিষেবায় ব্যবহৃত যানবাহন এ ক্ষেত্রে ছাড় পাবে। দিল্লির বাইরে নিবন্ধিত হালকা বাণিজ্যিক যান, যেগুলো ইভি, সিএনজি বা বিএস-৬ ডিজেল মান পূরণ করে না, সেগুলোর প্রবেশও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ থাকবে।

এ ছাড়া সব ধরনের নির্মাণ ও ভাঙচুর কার্যক্রম, এমনকি মহাসড়কের মতো সরকারি প্রকল্পও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি ও ভারতের কেন্দ্রীয় রাজধানী অঞ্চল যেসব রাজ্যের মধ্যে পড়েছে সেসব রাজ্যের সরকারগুলোতে ষষ্ঠ থেকে নবম এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সশরীরে ক্লাসের বদলে অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকারি, পৌর এবং বেসরকারি দপ্তরগুলোকে অন্তত ৫০ শতাংশ কর্মী দিয়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি অফিসের সময় ধাপে ধাপে নির্ধারণ করার কথাও বলা হয়েছে, যাতে ব্যস্ত সময়ের যানজট ও দূষণ কিছুটা কমানো যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ওপর আইসিসের হামলার জবাব দেবেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০৩
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সিরিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএস বা আইসিসের (দায়েশ) হামলার জবাব দেবেন তিনি। এক বার্তা ট্রাম্প এই অবস্থান ব্যক্ত করেন। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার সিরিয়ার পালমিরায় এই হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও তাদের এক দোভাষী নিহত হয়।

তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে—ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাদের সেনাদের ওপর আইএসআইএসের হামলার জবাব আমরা দেব। যদি মার্কিন বাহিনীর ওপর আবারও হামলা হয় সেটার জবাও আমরা দেব।’

এর আগে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলকেন্দ্রিক কমান্ড ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানায়, আইসিসের হামলায় দুই মার্কিন সেনা এবং তাদের এক দোভাষী নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আরও তিনজন সেনা গুরুতর আহত হয়েছে। সেন্টকম আরও বলেছে, ‘বন্দুকধারীকে শনাক্ত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

এক বছর আগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর এটিই প্রথম কোনো হামলা, যাতে মার্কিন বাহিনীর প্রাণহানি ঘটল। সেন্টকম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানায়, হামলাকারীকে পাল্টা অভিযানে হত্যা করা হয়েছে। পেন্টাগনের নীতিমালা অনুযায়ী, নিকটাত্মীয়দের না জানানো পর্যন্ত নিহত সেনাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে না।

এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, হামলাকারীকে ‘হত্যা করা হয়েছে’। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘জেনে রাখুন, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে আমেরিকানদের ওপর হামলা হলে আমরা আপনাকে খুঁজে বের করব এবং হত্যা করব।’

এর আগে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, পালমিরার কাছে হোমস প্রদেশে যৌথ টহলের সময় সিরীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। ঘটনার পর দেইর আজ জোর-দামেস্ক মহাসড়কে সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয় এবং এলাকায় সামরিক বিমান টহল দেয়। সানা আরও জানায়, আহত ব্যক্তিদের ইরাক সীমান্তের কাছে আল-তানফ ঘাঁটিতে মার্কিন হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিরীয় সামরিক কর্মকর্তা জানান, পালমিরার একটি সিরীয় ঘাঁটিতে সিরীয় ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক চলাকালে গুলির ঘটনা ঘটে। শহরের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি ঘাঁটির ভেতর থেকে গুলির শব্দ শুনেছেন। আইএসবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এক দশক ধরে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সেনা মোতায়েন রেখেছে। সেখানে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

২০১৫ সালে সিরিয়ায় সামরিক শক্তির চূড়ায় থাকা অবস্থায় আইএস পালমিরা দখল করে নেয়। প্রায় ১০ মাস পর শহরটি তাদের হাতছাড়া হয়। ওই সময় আইএস পালমিরার বহু প্রাচীন নিদর্শন ধ্বংস করে এবং কিছু স্থানে প্রকাশ্যে গণহত্যা চালায়। ২০১৮ সালে সিরিয়ায় আইএস পরাজিত হলেও তারা এখনো ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিচ্ছিন্ন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ১৪ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনের চেষ্টা চালালেও সিরিয়া এখনো নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত