Ajker Patrika

৮০ বছরে কিমের দল, কুচকাওয়াজে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ে সামরিক কুচকাওয়াজে নতুন হোয়াসং-২০ আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেখানো হয়েছে। ছবি: সিএনএন
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ে সামরিক কুচকাওয়াজে নতুন হোয়াসং-২০ আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেখানো হয়েছে। ছবি: সিএনএন

উত্তর কোরিয়ার শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে এক বর্ণাঢ্য সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত ওই কুচকাওয়াজে নতুন হাইপারসনিক অস্ত্র ও আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) প্রদর্শন করেছে উত্তর কোরিয়ার সরকার।

কিম ইল সুং স্কয়ারে অনুষ্ঠিত ওই প্যারেডে প্রদর্শিত অস্ত্রগুলোর মধ্যে ছিল হোয়াসং-১১এমএ হাইপারসনিক গ্লাইড যান ও হোয়াসং-২০ আইসিবিএম, যেগুলোকে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম উত্তর কোরিয়ার ‘সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক কৌশলগত অস্ত্র ব্যবস্থা’ বলে অভিহিত করেছে।

এই আয়োজন এমন এক সময় হলো, যখন কিম জং-উন এক মাস আগেই বেইজিংয়ে চীনের বিশাল সামরিক প্যারেডে অংশ নিয়ে বড় কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেন। সেখানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে বৈশ্বিক কূটনীতিতে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেন।

বেইজিং সফরের পর কিম জং-উন চীনের সঙ্গে কৌশলগত ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও মজবুত করেন এবং পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যান। এরপর থেকে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে নতুন বা উন্নত অস্ত্রের খবর নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে হোয়াসং-১১এমএ, যার রয়েছে চালনাযোগ্য হাইপারসনিক ওয়ারহেড এবং নতুন হোয়াসং-২০ আইসিবিএম।

হোয়াসং-১১এমএ প্রথম দেখা যায় এক সপ্তাহ আগে পিয়ংইয়ংয়ে এক সামরিক প্রদর্শনীতে। এই সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল, যা রাশিয়ার ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের আদলে তৈরি। এই অস্ত্র ইউক্রেনে রুশ হামলায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

কুচকাওয়াজে অস্ত্রসহ হোয়াসং-১১এমএ হাইপারসনিক গ্লাইড যানও প্রদর্শন করা হয়। ছবি: সিএনএন
কুচকাওয়াজে অস্ত্রসহ হোয়াসং-১১এমএ হাইপারসনিক গ্লাইড যানও প্রদর্শন করা হয়। ছবি: সিএনএন

নতুন ১১এমএ মডেলটিতে এমন এক ওয়ারহেড বসানো হয়েছে, যা ‘বুস্ট গ্লাইড যান’-এর মাধ্যমে লক্ষ্যের দিকে বিভিন্ন গতিপথে অগ্রসর হতে পারে। ফলে প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় সেটি শনাক্ত বা প্রতিহত করা বেশ কঠিন। এই ক্ষেপণাস্ত্রকে হাইপারসনিক বলা হচ্ছে; কারণ, এটি শব্দের গতির পাঁচ গুণের বেশি বেগে এই কৌশলগত গতি পরিবর্তন করতে সক্ষম।

উত্তর কোরিয়া ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারির পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো তরল জ্বালানির পরিবর্তে সলিড-ফুয়েল বুস্টার রকেট ব্যবহার করা হয়, যা দ্রুত মোতায়েনযোগ্য এবং অল্প সময়ে ছোড়া যায়।

পিয়ংইয়ংয়ের কিম ইল সুং স্কয়ারে কুচকাওয়াজ করছে সৈন্যরা। ছবি: সিএনএন

বিশ্লেষকেরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া সম্ভবত রাশিয়ার কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের এই সংস্করণ ইউক্রেনে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে মার্কিন কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের আগস্টের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কিনঝালের কার্যকারিতা নিয়ে বহু বিশ্লেষক সন্দিহান।

চলতি বছরের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়া ঘোষণা করে, তাদের নতুন এক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রকেট ইঞ্জিন চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে; যা হোয়াসং-২০ ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ব্যবহৃত হবে। হোয়াসং-২০ আইসিবিএমের ক্ষেত্রে এটি ছিল প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি। যদিও ধারণা করা হচ্ছে, প্যারেডে প্রদর্শিত বস্তুটি ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী একটি ক্যানিস্টার মাত্র, যা ১১-অ্যাক্সেল ট্রান্সপোর্টার-লঞ্চ যানে স্থাপন করা ছিল। পিয়ংইয়ং এখনো এর পরীক্ষার দিন ঘোষণা করেনি।

কুচকাওয়াজে নতুন ট্যাংকও প্রদর্শিত হয়। ছবি: সিএনএন
কুচকাওয়াজে নতুন ট্যাংকও প্রদর্শিত হয়। ছবি: সিএনএন

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই সলিড-ফুয়েল ইঞ্জিনটি কার্বন ফাইবার কম্পোজিট উপাদানে তৈরি এবং এটি মাটিতে নয়বার পরীক্ষা করা হয়েছে। একই ইঞ্জিন হোয়াসং-১৯ আইসিবিএমেও ব্যবহার করা হবে, যার পরীক্ষা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, যখন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক কৌশলগত অস্ত্র ব্যবস্থা হোয়াসং-২০ আইসিবিএম স্কয়ারে প্রবেশ করে, দর্শকেরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে।’ তবে শুধু নতুন ক্ষেপণাস্ত্রই নয়, প্যারেডে প্রদর্শিত হয় উন্নত চনমা-২০ ট্যাংক।

এ ছাড়া কুচকাওয়াজে অংশ নেয় উত্তর কোরীয় সেই সৈন্যরা, যারা চলতি বছর ইউক্রেনের কুর্স্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে লড়ে কিয়েভের সেনাদের বিতাড়নে ভূমিকা রেখেছিল। প্যারেডে বিদেশি অতিথিদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ, দুই যুবক আটক

ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনাসদর

দূতাবাসে আফগানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারীদের বাধা, ‘কোনো ভূমিকা নেই’ বলল ভারত

বিয়ের আংটি পরলেন ইশরাক

ওকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: মাচাদোর সঙ্গে ফোনালাপ শেষে বললেন ট্রাম্প

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত