Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন /তীক্ষ্ণ নজরে ভারত-পাকিস্তান ‘ডগ ফাইট’ দেখছে বিশ্বের বড় সামরিক শক্তিগুলো

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ১৭: ৫৩
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার চির বৈরী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান সম্প্রতি সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে। এই সংঘাতে উভয় দেশই যুদ্ধবিমানের ব্যাপক ব্যবহার করেছে। চীনা প্রযুক্তিতে তৈরি পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ও ফরাসি রাফাল জেট নিয়ে ভারতের লড়াই বেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে অন্য দেশগুলো। ভবিষ্যতের সংঘাতে সামরিক সুবিধা পেতে এ থেকে শিক্ষা নেবে পরাশক্তিসহ অন্য দেশগুলোর সেনাবাহিনী।

গত বুধবার চীনা প্রযুক্তির একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান অন্তত দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন। বেইজিংয়ের উন্নত যুদ্ধবিমানের জন্য এটি এক বড় মাইলফলক হতে পারে।

দুই দেশের এই ডগ ফাইট বা আকাশপথের লড়াই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীগুলোর জন্য এক বিরল সুযোগ। তারা এখান থেকে সক্রিয় যুদ্ধে পাইলট, যুদ্ধবিমান এবং এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা অধ্যয়ন করতে পারবে। এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের বিমানবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উন্নত অস্ত্রের বাস্তব ব্যবহার বিশ্বজুড়ে বিশ্লেষণ করা হবে। এর মধ্যে শুরুর দিকেই থাকবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রও। তাইওয়ান বা বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য তারা উভয়ই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এক মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, পাকিস্তানের চীনা প্রযুক্তির জে-১০ বিমান ব্যবহার করে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের বিষয়ে তাদের যথেষ্ট বিশ্বাস রয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলোতে পাকিস্তানের ব্যবহার করা চীনা পিএল-১৫ এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ভারতের ব্যবহার করা ইউরোপীয় এমবিডিএ গ্রুপের তৈরি মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মেটিওর একটি রাডার-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র। তবে এসব অস্ত্র আসলেই ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, তার কোনো সরকারি নিশ্চিতকরণ নেই।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সামরিক মহাকাশ বিভাগের সিনিয়র ফেলো ডগলাস ব্যারি বলেছেন, চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের আকাশপথের যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে গভীর আগ্রহী হবেন। তাঁরা কৌশল, পদ্ধতি, ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং কোনটি কার্যকর ছিল বা কোনটি হয়নি, তার যতটা সম্ভব সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করবেন।

ব্যারি বলেন, ‘যদি সত্যিই এটি (মেটিওর) বহন করা হয়ে থাকে, তবে আপনারা সম্ভবত পশ্চিমের সবচেয়ে সক্ষম অস্ত্রের বিরুদ্ধে চীনের সবচেয়ে সক্ষম অস্ত্রকে দেখছেন। আমরা এটা জানি না।’ তিনি বলেন, ফরাসি ও মার্কিনরা ভারত থেকেও একই ধরনের তথ্য পাওয়ার আশা করবেন। একজন প্রতিরক্ষা শিল্প নির্বাহী বলেছেন, ‘পিএল-১৫ একটি বড় সমস্যা। এটি এমন কিছু, যার দিকে মার্কিন সামরিক বাহিনী অনেক মনোযোগ দেয়।’

রাফাল নির্মাতা দাসো (ইংরেজি ড্যাসল্ট) অ্যাভিয়েশন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। এমবিডিএ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গেও ফরাসি সরকারি ছুটির কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা যায়নি। পশ্চিমা বিশ্লেষক ও শিল্প সূত্রগুলো বলেছে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এর মধ্যে মেটিওর বহন করা হয়েছিল কি না এবং পাইলটরা কী ধরনের ও কতটা প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন, তা-ও অন্তর্ভুক্ত। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোও প্রযুক্তিগত কার্যকারিতা এবং অপারেশনাল কারণগুলোকে আলাদাভাবে দেখতে আগ্রহী হবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং ক্যাপিটাল আলফা পার্টনার্সের ম্যানেজিং পার্টনার বায়রন ক্যালান বলেছেন, ‘কোনটি কাজ করে এবং কোনটি করে না, তার নিরীক্ষা অবশ্যই হবে। তবে আমার মনে হয়, এর ওপর যুদ্ধের ধোঁয়াশার একটি প্রভাব রয়েছে।’ তিনি বলেন, মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো ইউক্রেন যুদ্ধে তাদের পণ্যগুলো কীভাবে কাজ করছে, সে সম্পর্কে নিয়মিত প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে।

বায়রন ক্যালান বলেন, তাই আমি নিশ্চিতভাবে আশা করি, ভারতের ইউরোপীয় সরবরাহকারীদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটবে। পাকিস্তান ও চীন সম্ভবত একই প্রতিক্রিয়া ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। যদি পিএল-১৫ প্রত্যাশার চেয়ে ভালোভাবে কাজ করে, তবে চীনারা তা শুনতে আগ্রহী হবে।

মেটিওর ব্যবহারকারী একটি পশ্চিমা দেশের প্রতিরক্ষাশিল্পের একটি সূত্র বলেছে, অনলাইনে দেখা একটি সিকারের ছবি দেখে মনে হচ্ছে, এটি এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্রের অংশ, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল। পাকিস্তান কি চীনের বিমানবাহিনী পিএলএএএফ-এর কাছ থেকে পিএল-১৫-এর ঘরোয়া সংস্করণ পেয়েছে, নাকি ২০২১ সালে প্রকাশ্যে আনা কম-পাল্লার রপ্তানি সংস্করণ, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর রয়েছে।

ব্যারি এই পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বিস্তারিত অধ্যয়ন করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানের কাছে সম্ভবত রপ্তানি সংস্করণটিই রয়েছে। একটি পশ্চিমা শিল্প সূত্র রকেটচালিত পিএল-১৫ মেটিওর—এর এর চেয়ে বেশি পাল্লার দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। তবে স্বীকার করেছে যে এর সক্ষমতা ‘যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি হতে পারে’।

মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। শিল্প সূত্রটি বলেছে, ‘এই মুহূর্তে কোনো কিছু বিচার করা সম্ভব নয়। আমরা খুব অল্পই জানি।’ পিএল-১৫ এর পাল্লা এবং কার্যকারিতা বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এর উত্থানকে এমন একটি লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়, চীন সোভিয়েত-যুগের প্রযুক্তিনির্ভরতা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র লকহিড মার্টিনের মাধ্যমে এআইএম-২৬০ জয়েন্ট অ্যাডভান্সড ট্যাকটিক্যাল মিসাইল তৈরি করছে। এটি আংশিকভাবে পিএল-১৫ এবং এর ভিজ্যুয়াল রেঞ্জের বাইরের পারফরম্যান্সের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে। এটি চীনের দিকে পশ্চিমা অগ্রাধিকারের একটি বৃহত্তর পুনর্বিন্যাসের অংশ।

ইউরোপীয় দেশগুলো মেটিওর-এর মধ্যকালীন আপগ্রেডের কথা ভাবছে। বিশেষজ্ঞ প্রকাশনা জেনেস বলেছে, এতে প্রপালশন (ধাক্কা) এবং গাইডেন্স (নির্দেশনা) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, অগ্রগতি ধীর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্চ মাসে বোয়িংকে মার্কিন বিমানবাহিনীর সবচেয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরির চুক্তি দিয়েছিলেন। এতে সম্ভবত স্টেলথ প্রযুক্তি, উন্নত সেন্সর এবং অত্যাধুনিক ইঞ্জিন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের চীনা জে-১০ দিয়ে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস, যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নজরে এই টক্কর

একটি দলের ওপর ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব: মাহফুজ আলম

গতকাল রাতে ৪৮টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

অহনার দাবি, নিজের দোষ ঢাকতে ডাবল টাইমিংয়ের কথা বলেছেন শামীম

পাকিস্তানে হামলায় ভারত এক দিনেই হারিয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি রুপির সামরিক সরঞ্জাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত