পরাগ মাঝি
‘পাশ দিয়ে যাবে যখন, দয়া করে দেখে নিও আমার সমাধি। অসংখ্য মাতালের জন্য মন্দির এটি।’
সম্প্রতি ইরানে অনুষ্ঠিত একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পারসি কবি হাফিজের এই লাইনগুলোই যেন ঘুরপাক খাচ্ছিল আগত অতিথিদের মাঝে। যাঁর স্মরণ অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসেছিলেন তিনি আর কেউ নন—ইরানের বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী খসরু হাসানজাদেহ। চলতি মাসের শুরুতেই ‘আরাঘ’ পান করে তীব্র বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন তিনি।
আরাঘ হলো একধরনের ইরানি মদ। দীর্ঘকাল ধরে ইরানিদের পান-অভ্যাসের সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে এই পানীয়টি। যদিও ১৯৭৯ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে মদ্যপানকে নিষিদ্ধ করেছে ক্ষমতাসীন ইসলামিক রিপাবলিক। এর ফলে মদ্যপানের অভ্যাস যাঁদের রয়েছে, তাঁরা মূলত অবিশ্বস্ত উপায়ে কালোবাজার থেকেই এটি সংগ্রহ করেন।
দীর্ঘ ঐতিহ্যের জন্যই নিষিদ্ধের পরও অবৈধ পথে মদ কেনা-বেচার বিষয়টিকে একটু হালকাভাবে দেখে দেশটির ইসলামিক সরকার। এর ফলে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ইরানের অবৈধ মদ ব্যবসায়ীরা। ধারণা করা হয়, সরকারের নজর এড়িয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মদের বাজার তৈরি করেছেন তাঁরা। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞার ফলে মান নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় না থাকায় ক্রেতাদের কাছে প্রায় সময়ই মানহীন বিষাক্ত পানীয় সরবরাহ করা হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানের গণমাধ্যমগুলোতেও মদ্যপানের বিষক্রিয়ায় অসংখ্য মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হচ্ছে। অনেকের অভিযোগ, দেশটির ইসলামি সরকারের চক্রান্তেই বিষাক্ত মদের আদান-প্রদান বেড়ে গেছে। তবে এ ধরনের অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে ইরানের পুলিশপ্রধান আহমেদ রেজা রাদান বলেছেন, ‘যাঁরা মদ্যপান করেন, জেনে রাখা উচিত তাঁদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে।’
৬০ বছর বয়সী খসরু হাসানজাদেহ মৃত্যুর ১০ দিন আগে শেষবারের মতো আরাঘ পান করেছিলেন। পানের পরপরই তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান এবং কোমায় চলে যান। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার ইরান প্রতিনিধি নাজমাহ বোজোর্গমেহর।
ইরানি এই নারী সাংবাদিক হাসানজাদেহেকে নিয়ে লিখেছেন, তাঁর শিল্প সাধনা আর জীবনযাত্রায় খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ছিল আরাঘ। পানের মধ্য দিয়ে তিনি ইরানের প্রাগৈতিহাসিক লুথি ঐতিহ্যকে বহন করতেন। আরাঘের আচার-অনুষ্ঠান এই ঐতিহ্যেরই অংশ। এর মাধ্যমেই সম্মানিত পুরুষেরা একে অপরকে নম্র অভিবাদন জানান।
হাসানজাদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বক্তারা ইরানের শিল্পে তাঁর অবদান তুলে ধরেন। তাঁদের একজন কম্পিত গলায় বলে উঠেছিলেন, ‘আমি আমার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করি—খসরু! তুমি কি সত্যিই এটি পান করে মরে গেছো? আমরা কোথায় আছি?’
ইরানি কর্তৃপক্ষ চাইলেও মদ্যপান বিরোধী আইন কঠোর করতে পারে না। কারণ এমনটি করলে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু ইসলামি অনুশাসন থাকা তুরস্কের মতো মদ্যপানকে বৈধ করারও আত্মবিশ্বাস নেই তাদের। ইরান সরকার মনে করে—এমনটি করলে তাদের আদর্শিক পরিচয় হুমকির মুখে পড়বে। অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হবেন।
ইরানের অনেক শিল্পীর কাছে আরাঘ এখন হাসানজাদেহ এবং যে সংস্কৃতিকে তিনি বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিবেদিত ছিলেন তার সঙ্গে যুক্ত। তবে হাসানজাদেহের মৃত্যু ইরানিদের মদ্যপানের দীর্ঘ ঐতিহ্যে একটি প্রভাব ফেলবে। এই ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে অন্তহীন কবিতা আর শিল্পের সৃষ্টি হয়েছে।
সেদিনের সেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়ও অতিথিদের মাঝে হঠাৎ করেই পরিবেশন করা হয় আরাঘ! পানীয়টি দেখে এ সময় আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। যিনি পরিবেশন করছিলেন, তিনি ঘোষণা করেন—‘ভয় নেই, এটি আমি নিজে তৈরি করেছি।’
একজন অতিথি এ সময় বলেন, ‘আমাদের সবার উচিত এখন থেকে ঘরে বসেই আরাঘ এবং ওয়াইন তৈরি করা।’
তাঁর কথায় সায় দিয়েছেন প্রায় সবাই।
‘পাশ দিয়ে যাবে যখন, দয়া করে দেখে নিও আমার সমাধি। অসংখ্য মাতালের জন্য মন্দির এটি।’
সম্প্রতি ইরানে অনুষ্ঠিত একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পারসি কবি হাফিজের এই লাইনগুলোই যেন ঘুরপাক খাচ্ছিল আগত অতিথিদের মাঝে। যাঁর স্মরণ অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসেছিলেন তিনি আর কেউ নন—ইরানের বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী খসরু হাসানজাদেহ। চলতি মাসের শুরুতেই ‘আরাঘ’ পান করে তীব্র বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন তিনি।
আরাঘ হলো একধরনের ইরানি মদ। দীর্ঘকাল ধরে ইরানিদের পান-অভ্যাসের সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে এই পানীয়টি। যদিও ১৯৭৯ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে মদ্যপানকে নিষিদ্ধ করেছে ক্ষমতাসীন ইসলামিক রিপাবলিক। এর ফলে মদ্যপানের অভ্যাস যাঁদের রয়েছে, তাঁরা মূলত অবিশ্বস্ত উপায়ে কালোবাজার থেকেই এটি সংগ্রহ করেন।
দীর্ঘ ঐতিহ্যের জন্যই নিষিদ্ধের পরও অবৈধ পথে মদ কেনা-বেচার বিষয়টিকে একটু হালকাভাবে দেখে দেশটির ইসলামিক সরকার। এর ফলে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ইরানের অবৈধ মদ ব্যবসায়ীরা। ধারণা করা হয়, সরকারের নজর এড়িয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মদের বাজার তৈরি করেছেন তাঁরা। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞার ফলে মান নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় না থাকায় ক্রেতাদের কাছে প্রায় সময়ই মানহীন বিষাক্ত পানীয় সরবরাহ করা হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানের গণমাধ্যমগুলোতেও মদ্যপানের বিষক্রিয়ায় অসংখ্য মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হচ্ছে। অনেকের অভিযোগ, দেশটির ইসলামি সরকারের চক্রান্তেই বিষাক্ত মদের আদান-প্রদান বেড়ে গেছে। তবে এ ধরনের অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে ইরানের পুলিশপ্রধান আহমেদ রেজা রাদান বলেছেন, ‘যাঁরা মদ্যপান করেন, জেনে রাখা উচিত তাঁদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে।’
৬০ বছর বয়সী খসরু হাসানজাদেহ মৃত্যুর ১০ দিন আগে শেষবারের মতো আরাঘ পান করেছিলেন। পানের পরপরই তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান এবং কোমায় চলে যান। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার ইরান প্রতিনিধি নাজমাহ বোজোর্গমেহর।
ইরানি এই নারী সাংবাদিক হাসানজাদেহেকে নিয়ে লিখেছেন, তাঁর শিল্প সাধনা আর জীবনযাত্রায় খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ছিল আরাঘ। পানের মধ্য দিয়ে তিনি ইরানের প্রাগৈতিহাসিক লুথি ঐতিহ্যকে বহন করতেন। আরাঘের আচার-অনুষ্ঠান এই ঐতিহ্যেরই অংশ। এর মাধ্যমেই সম্মানিত পুরুষেরা একে অপরকে নম্র অভিবাদন জানান।
হাসানজাদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বক্তারা ইরানের শিল্পে তাঁর অবদান তুলে ধরেন। তাঁদের একজন কম্পিত গলায় বলে উঠেছিলেন, ‘আমি আমার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করি—খসরু! তুমি কি সত্যিই এটি পান করে মরে গেছো? আমরা কোথায় আছি?’
ইরানি কর্তৃপক্ষ চাইলেও মদ্যপান বিরোধী আইন কঠোর করতে পারে না। কারণ এমনটি করলে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু ইসলামি অনুশাসন থাকা তুরস্কের মতো মদ্যপানকে বৈধ করারও আত্মবিশ্বাস নেই তাদের। ইরান সরকার মনে করে—এমনটি করলে তাদের আদর্শিক পরিচয় হুমকির মুখে পড়বে। অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হবেন।
ইরানের অনেক শিল্পীর কাছে আরাঘ এখন হাসানজাদেহ এবং যে সংস্কৃতিকে তিনি বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিবেদিত ছিলেন তার সঙ্গে যুক্ত। তবে হাসানজাদেহের মৃত্যু ইরানিদের মদ্যপানের দীর্ঘ ঐতিহ্যে একটি প্রভাব ফেলবে। এই ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে অন্তহীন কবিতা আর শিল্পের সৃষ্টি হয়েছে।
সেদিনের সেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়ও অতিথিদের মাঝে হঠাৎ করেই পরিবেশন করা হয় আরাঘ! পানীয়টি দেখে এ সময় আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। যিনি পরিবেশন করছিলেন, তিনি ঘোষণা করেন—‘ভয় নেই, এটি আমি নিজে তৈরি করেছি।’
একজন অতিথি এ সময় বলেন, ‘আমাদের সবার উচিত এখন থেকে ঘরে বসেই আরাঘ এবং ওয়াইন তৈরি করা।’
তাঁর কথায় সায় দিয়েছেন প্রায় সবাই।
তাঁর ভাষ্য, ইরানের রাজনৈতিক শাসন টিকে গেছে এবং সম্ভবত আরও শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। দেশটির মানুষ এখন আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এমনকি যারা আগে নির্লিপ্ত ছিল বা বিরোধিতা করত, তারাও এখন এই নেতৃত্বের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
১৪ মিনিট আগে৪৫ মিনিটের এই ফোনালাপের উদ্যোগ এসেছিল ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের কাছ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার পরেই তিনি এই উদ্যোগ নেন।
২৩ মিনিট আগেখোররামশহর-৪ বা খাইবার ক্ষেপণাস্ত্রকে ইরানের চতুর্থ প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি শব্দের গতির চেয়ে ১৬ গুণ বেশি গতিতে বায়ুমণ্ডলের বাইরে এবং শব্দের গতির চেয়ে ৮ গুণ বেশি গতিতে বায়ুমণ্ডলের ভেতরে চলতে সক্ষম। উচ্চ গতি এবং কৌশলগত সক্ষমতার জন্য এটিকে শনাক্ত ও প্রতিহত করা কঠিন...
২৬ মিনিট আগেইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া ও স্পেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলার যে দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা যে যুক্তিই তুলে ধরা হোক না কেন, তা আন্তর্জা
৩৪ মিনিট আগে