Ajker Patrika

বর্ষাকালে শাক খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়

আলমগীর কবীর
বর্ষাকালে শাক খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়

আমাদের লোকজ ও আয়ুর্বেদ মতে, বর্ষাকালে শাক খাওয়া নিষেধ বা সীমিত করতে বলা হয়। বর্তমান এআই যুগে লোকজজ্ঞান কতটা গুরুত্ব পাবে, সেটা ঋতুচর্যা বা ঋতু অনুযায়ী জীবনযাপন, শাকের প্রকৃতি এবং বর্ষাকালে খাদ্যাভ্যাসের নির্দেশনা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে।

বর্ষাকাল ও শরীরের অবস্থা

আয়ুর্বেদে বছরকে ছয় ঋতুতে ভাগ করা হয়। বর্ষাকাল হলো তার একটি। এই সময় প্রকৃতির পরিবর্তন শরীরের ত্রিদোষের (বাত, পিত্ত, কফ) ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলে।

বাত ও কফ দোষের প্রভাব: বর্ষাকালে আর্দ্রতা, শীতলতা এবং মেঘলা আবহাওয়ার কারণে বাতের দোষ বাড়ে। একই সঙ্গে, পূর্ববর্তী গ্রীষ্মকালে দুর্বল হয়ে যাওয়া পিত্ত দোষ এই সময়ে জমা হয় এবং কফ দোষ আর্দ্র পরিবেশের কারণে সক্রিয় হতে পারে। ফলে শরীরে হজমশক্তি (অগ্নি) দুর্বল হয়, যাকে আয়ুর্বেদে অগ্নিমান্দ্য বলা হয়।

শাকের প্রভাব: পাতাভর্তি শাকসবজি, যেমন পালংশাক, মেথিশাক, লালশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি সাধারণত শীতল, আর্দ্র ও ভারী গুণসম্পন্ন। এগুলো কফ ও বাতের দোষকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা বর্ষাকালে শরীরের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়।

পরিবেশগত প্রভাব: বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি, মাটির আর্দ্রতা এবং কম সূর্যালোকের কারণে শাকসবজিতে পোকামাকড়, ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। এসব শাক কাঁচা বা অপর্যাপ্ত রান্না করে খেলে আমাশয়, ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা হতে পারে।

শাক খাওয়া নিষেধের কারণ

শাক খাওয়া নিষেধের পেছনে কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে, যা বর্ষাকালের প্রকৃতি ও শরীরের সঙ্গে সম্পর্কিত। সেগুলো হলো—

হজমশক্তির দুর্বলতা: বর্ষাকালে জঠরাগ্নি বা পাচনশক্তি কমে যায়। শাক, বিশেষ করে কাঁচা শাক হজম করতে বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। এটি শরীরে আম বা বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করতে পারে, যা পেট ফাঁপা, গ্যাস, অম্লতা বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

শাকের গুণাগুণ: খাবারের গুণ বা প্রকৃতি বিবেচনা করা হয়। শাকসবজি সাধারণত শীতল, আর্দ্র এবং কখনো কখনো তিক্ত বা কষায় রসযুক্ত হয়। এগুলো বর্ষাকালে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, বিশেষ করে যদি কফ বা বাতের দোষ প্রবল থাকে।

সংক্রমণের ঝুঁকি: বর্ষাকালে শাকসবজি সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে তাতে জীবাণু বা পরজীবী থাকতে পারে। আয়ুর্বেদে এ ধরনের খাবারকে দুষ্ট ভোজন বলা হয়। এ ধরনের খাবার রোগের কারণ হতে পারে।

প্রকৃতির ভারসাম্য: আয়ুর্বেদে খাবারের সঙ্গে ঋতুর সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষাকালে শরীরকে উষ্ণ, হালকা রাখে এবং সহজে হজম হয়, তেমন খাবার দিয়ে ভারসাম্য রাখতে হয়। শাক এই ভারসাম্যের বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।

এড়িয়ে চলতে হবে যেসব খাবার

  • কাঁচা শাক, সালাদ বা অপরিষ্কার শাকসবজি।
  • ভারী, তৈলাক্ত বা ঠান্ডা খাবার; যেমন দই, ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম।
  • অতিরিক্ত মিষ্টি, লবণাক্ত বা তৈলাক্ত খাবার কফ বাড়ায়।
  • অপরিষ্কার পানি বর্ষাকালে জীবাণু ছড়াতে পারে।

আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ

  • বর্ষাকালে আর্দ্র পরিবেশে শাকসবজিতে ই. কোলাই বা সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। কাঁচা শাক খেলে খাদ্যজনিত রোগের আশঙ্কা বাড়ে।
  • বর্ষাকালে পানিদূষণ বেশি হয় এবং শাকসবজি ধোয়ার জন্য দূষিত পানি ব্যবহার করা হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • বর্ষাকালে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, পাচনতন্ত্র দুর্বল হতে পারে। কাঁচা শাক বা ভারী খাবার হজমে অসুবিধা হতে পারে।
  • বর্ষাকালে মানুষের হজমশক্তি দুর্বল থাকার কারণে পরিবেশগত সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। সে জন্য এ সময় শাক খাওয়া নিষেধ করা হয়। তবে শাক খাওয়ার প্রয়োজন হলে ভালোভাবে পরিষ্কার করে তারপর রান্না করে খাওয়া উচিত।

লেখক: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত