Ajker Patrika

রমজানে স্বাস্থ্য সমস্যা

মো. আরমান বিন আজিজ
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ০৮
রমজানে স্বাস্থ্য সমস্যা

সারা দিন রোজা পালনের পর অনেক ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার কারণে রোজা পালন থেকে বিরত থাকেন। তবে নিয়ম মেনে রোজা পালন করলে তা শরীরের জন্য উপকারী।

বুকজ্বালা বা হার্ট বার্ন
হার্ট বার্ন বা বুকজ্বালা পরিচিত একটি রোগ। খাবার হজম করার জন্য পাকস্থলীতে সব সময় অ্যাসিড থাকে। খাদ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়াও এই অ্যাসিডের প্রভাবে মারা যায়। কোনো কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হলে বা পাকস্থলীতে খাবার না থাকায় অ্যাসিড নিঃসরণ হলে অথবা পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড ইসোভেগাসে বা খাদ্যনালীর অংশে চলে এলে বুক জ্বলে। রোজার সময় এই হার্ট বার্ন বা বুকজ্বালা সমস্যাটি অনেকেরই হয়।

এ ধরনের সমস্যা নিরাময়ের জন্য বাজারে বিভিন্ন ওষুধ রয়েছে। সাহরি খাওয়ার সময় এ জাতীয় ওষুধ খেলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে ওষুধ খেয়ে এ সমস্যা দূর করার চেয়ে খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনাই ভালো। এ জন্য যা করতে পারেন:

  • তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, বাসি ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন
  • ধূমপান বাদ দিন
  • টক ঢেকুর উঠলে ও বুক জ্বালা করলে শোয়ার সময় একটু উঁচু বালিশ ব্যবহার করুন
  • যাঁদের আগে থেকে হার্ট বার্ন বা বুক জ্বলা সমস্যা আছে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শে গ্যাসের ওষুধের মাত্রা বাড়াতে পারেন।

মাথাব্যথা
মাথাব্যথা হয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

মাথাব্যথার কারণ

  • পানিশূন্যতা
  • ক্ষুধা
  • ঘুম ও বিশ্রাম রেস্ট কম হওয়া
  • চা, কফি পান না করা।

রোজায় এ ধরনের কারণ বেশি ঘটে থাকে। তাই এ সময় অনেকেই এ সমস্যায় ভোগেন। এ সমস্যা থেকে দূরে থাকতে,

  • প্রতিদিন ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত পানি ও ফ্রুটজুস জাতীয় তরল খাবার বেশি বেশি খেতে পারেন
  • মাথাব্যথার সমস্যা যাদের নিয়মিত হয় তাঁরা সাহরিতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন
  • যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রোজা রাখবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন
কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাটি অন্যান্য সময়ের চেয়ে রোজায় বেশি দেখা যায়। পানিশূন্যতা ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়ার ফলে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। শাকসবজি, ফলমূল, ইসবগুলের ভুসি, লাল আটা ও ঢেঁকিছাঁটা চাল এ সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে। এরপরও সমস্যা থাকলে ল্যাক্সেটিভ ওষুধ খেতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা
অনেকের মতে, রোজা রাখার ফলে মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ কমে যায়। ফলে সন্তান দুধ থেকে বঞ্চিত হয় ভেবে অনেক মা রোজা পালন থেকে বিরত থাকেন। তবে চিকিৎসকদের মতে, এ ধরনের কোনো কথার ভিত্তি নেই। তবে রোজা পালনকারী মাকে অবশ্যই সাহরি ও ইফতারে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে এবং শোয়ার আগ পর্যন্ত ঘণ্টায় ঘণ্টায় অল্প অল্প করে পানি খেতে হবে।

যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিনঅ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট
রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো, সাহরি ও ইফতারের সময় ইনহেলার নিতে হবে। হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।

চোখের ছানি
চোখে ড্রপ দিলে তা অনেক সময় মুখে চলে যেতে পারে, যা রোজার জন্য ক্ষতিকর। খেয়াল করলে দেখবেন, কিছু কিছু ড্রপ চোখে দেওয়ার পর গলায় তেতো স্বাদ অনুভূত হয়। চোখে ড্রপ নেওয়ার সময় নাকের পাশে চোখের ভেতরের কোনায় চেপে ধরলে নালিটি কিছুটা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওষুধ নাকে বা গলায় যাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। সে ক্ষেত্রে রোজা রেখে আপনি অনায়াসে চোখে ড্রপ দিতে পারেন। প্রয়োজনে পদ্ধতিটি রপ্ত করার জন্য আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নির্দেশনা
রমজানের সুশৃঙ্খল জীবন যাপন এবং ইবাদত বন্দেগি, ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। রমজানের ফরজ রোজাকে সঠিকভাবে পালনের জন্য রোজার আগে থেকে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নিন। ডায়াবেটোলজিস্টই ডায়াবেটিস রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হওয়ার জন্য খাদ্য, ব্যায়াম ও ওষুধের সমন্বয় করে দেবেন।

 খেয়াল রাখবেন

  • রোজায় নিজে নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।
  • সাহরির খাবার শেষ সময়ের কিছু আগে খেয়ে নিন।
  • ইফতারে বেশি চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন।
  • রোজায় দিনের বেলায় ব্যায়াম করবেন না। তাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
  • রোজায় রাতের বেলায় পর্যাপ্ত পানি, সম্ভব হলে ডাবের পানি, কম মিষ্টি রসাল ফল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

যাঁদের রোজা রাখা উচিত হবে না

  • রমজান শুরুর তিন মাস আগে যাঁদের মারাত্মক হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছিল।
  • যাঁদের বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়।
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়া হচ্ছে কিন্তু রোগী বুঝতে পারছেন না।
  • যাঁদের ডায়াবেটিস সব সময়ই বাড়তি থাকে।
  • রমজানের তিন মাস আগে কিটোএসিডোসিস হয়ে থাকলে।
  • টাইপ-১ ডায়াবেটিস।
  • হঠাৎ অসুস্থ হলে।
  • যাঁরা খুব বেশি কায়িক পরিশ্রম করেন।
  • গর্ভবতী।
  • ডায়ালাইসিস রোগী।
  • ডায়াবেটিস ১৫০-৩০০ মিলিগ্রাম পার ডেসিলিটার হলে।
  • কিডনি সমস্যাজনিত রোগ থাকলে।
  • জটিল হৃদ্‌রোগ ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী।
  • ইনসুলিন বা সালফোনাইল ইউরিয়া ব‍্যবহারকারী রোগী।
  • বার্ধক্যজনিত অসুস্থ রোগী।
  • মানসিক ভারসাম্য পরিবর্তন হওয়ার মতো ওষুধ সেবনকারী রোগী।

রোজা কখন ভাঙা জরুরি

  • রক্তে চিনির মাত্রা ৩ দশমিক ৩ মিলি মোল বা লিটারের নিচে নেমে গেলে অথবা সাহরির প্রথম কয়েক ঘণ্টায় ৩ দশমিক ৯ মিলি মোল বা লিটারের নিচে নামলে।
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ, যেমন বুক ধড়ফড় করলে, বেশি ঘাম হলে, শরীর কাঁপতে থাকলে, মাথা ঘোরালে, খিঁচুনি হলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে।
  • রক্তে সুগার ১৬ দশমিক ৭ মিলি মোল বা লিটারের বেশি থাকলে অথবা অসুস্থ থাকলে। 

যখন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া জরুরি

  • অতিরিক্ত ডায়রিয়া বা বমি হলে
  • শ্বাস নিতে কষ্ট বা শ্বাস দ্রুত হলে
  • পেটে ব্যথা হলে
  • প্রস্রাবে কিটোন থাকলে
  • চিন্তা ও আচরণ এলোমেলো এবং অসংলগ্ন হলে

 রোজা রেখে যা করা যাবে, যা করা যাবে না
রোজা রাখা অবস্থায় চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কী কী করা যাবে আর কী কী করা যাবে না, তা নিয়ে সাধারণ রোগীদের মধ্যে জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে নানান সংশয় ও বিভ্রান্তি রয়েছে চিকিৎসকদের মাঝেও। এ সব বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ১৯৯৭ সালের জুন মাসে মরক্কোয় অনুষ্ঠিত নবম ফিকাহ চিকিৎসা সম্মেলন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সম্মেলনে জেদ্দা ইসলামিক ফিকাহ অ্যাকাডেমি, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর ও ইসলামিক শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (আইএসইএসসিও) বিজ্ঞ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সে সম্মেলনের মূল আলোচনার বিষয় ছিল, রোজা অবস্থায় যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ প্রয়োগে রোজা নষ্ট হবে না সে বিষয়ে একটা সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। এ লক্ষ্যে ইসলামিক চিন্তাবিদগণ চিকিৎসা বিজ্ঞান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও গবেষণা করে রোজা অবস্থায় ওষুধ প্রয়োগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে সুচিন্তিত তথ্য উপস্থাপন করেন। ২০০৪ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ হিসেবে তা প্রকাশিত হয়।

তবে নাকের ড্রপের ব্যাপারে অনেক স্কলার আপত্তি করেন। অনেক সময় এসব ফিকাহী বিষয়ে বিভিন্ন স্কলারদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে। সব স্কলারের মতামতের প্রতিই আমাদের শ্রদ্ধা থাকা প্রয়োজন।

  • রোজা অবস্থায় চোখ ও কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে।
  • রোজা অবস্থায় ইনহেলার-স্প্রে ব্যবহার করা যাবে।
  • হার্টের এনজাইনার সমস্যার জন্য বুকে ব্যথা উঠলে ব্যবহৃত নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট বা স্প্রে জিহ্বার নিচে ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না।
  • রোজা রেখে শিরাপথে খাদ্য উপাদান ছাড়া কোনো ওষুধ ত্বক, মাংসপেশি বা হাড়ের জোড়ায় ইনজেকশন হিসেবে প্রয়োগ করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
  • রোজা রাখা অবস্থায় স্যালাইন বা গ্লুকোজ জাতীয় কোনো তরল শিরাপথে গ্রহণ করা যাবে না।
  • চিকিৎসার প্রয়োজনে রোজা রেখে অক্সিজেন কিংবা চেতনা নাশক গ্যাস গ্রহণে রোজা নষ্ট হবে না।
  • চিকিৎসার প্রয়োজনে ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করলে এবং এ সব উপাদান ত্বকের গভীরে প্রবেশ করলেও রোজার কোনো সমস্যা হবে না।
  • রোজা রেখে দাঁত তোলা যাবে। দাঁতের ফিলিং ও ড্রিল ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া দাঁত পরিষ্কার করার সময় অসাবধানতাবশত কিছু গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হবে না।
  • রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিতে বাধা নেই।
  • কাউকে রক্তদানে ও রক্ত গ্রহণেও বাধা নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, রক্তদাতা যাতে পরে দুর্বল হয়ে না যান।
  • চিকিৎসার জন্য যোনিপথে ট্যাবলেট কিংবা পায়ুপথে সাপোজিটোরি ব্যবহার করলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
  • পরীক্ষার জন্য যোনিপথ কিংবা পায়ুপথে চিকিৎসক বা ধাত্রী আঙুল প্রবেশ করালেও রোজার সমস্যা হবে না।
  • রোজা রেখে জরায়ু পরীক্ষার জন্য হিস্টেরোস্কপি এবং আই. ইউ. সি. ডি ব্যবহার করা যাবে।
  • হার্ট কিংবা অন্য কোনো অঙ্গের এনজিওগ্রাফি করার জন্য কোনো রোগ নির্ণয়কারক দ্রবণ শরীরে প্রবেশ করানো হলে রোজার ক্ষতি হবে না।
  • কোনো অঙ্গের অভ্যন্তরীণ চিত্রধারণের জন্য সেই অঙ্গের প্রবেশপথে কোনো ক্যাথেটার বা নালির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তরল রঞ্জক প্রবেশ করালে রোজা নষ্ট হবে না।
  • রোগ নির্ণয়ের জন্য এন্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি করলেও রোজা নষ্ট হয় না। তবে এন্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি করার সময় ভেতরে তরল কিংবা অন্য কোনো কিছু প্রবেশ করানো যাবে না যার খাদ্যগুণ রয়েছে।
  • রোজা রাখা অবস্থায় না গিলে মাউথওয়াশ, মুখের স্প্রে ব্যবহার করা যাবে এবং গড়গড়া করা যাবে।
  • রোজা রাখা অবস্থায় লিভারসহ অন্য কোনো অঙ্গের বায়োপসি করা যাবে।
  • রোজা রাখা অবস্থায় পেরিটোনিয়াল কিংবা মেশিনে কিডনি ডায়ালাইসিস করা যাবে।

রমজান মাস আত্মশুদ্ধি ও আত্মোপলব্ধির মাস। আমাদের প্রত্যেকের উচিত বরকতময় এ মাসে নিজেদের আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি পরিবার, সমাজ তথা দেশকে ভালো রাখার চেষ্টা করা।

লেখক: সাবেক ফ্যাকাল্টি ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম

রমজান মাস সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন কমল ৩৬৭টি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন কমল ৩৬৭টি

সরকারি মেডিকেল কলেজের সঙ্গে বেসরকারি মেডিকেল কলেজেও এমবিবিএস ডিগ্রিতে শিক্ষার্থী ভর্তির আসন কমানো হয়েছে। মোট ৩৬৭টি আসন কমানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ সূত্রে আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) বিষয়টি জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ১০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন কমানো হয়েছে। অন্যদিকে দুটি বেসরকারি কলেজে আসন বাড়ানো হয়েছে এবং একটি কলেজের নতুন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর উত্তরায় শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ১৪০টি থেকে ১৫টি আসন কমানো হয়েছে। ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ৯০ থেকে ১৫টি, কিশোরগঞ্জে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজে ৯৫টি থেকে ৪৫টি, ফরিদপুরে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজে ৯০ থেকে ৪০টি, গাজীপুরে সিটি মেডিকেল কলেজে ৮০ থেকে ৩০টি, রাজধানীতে মার্কস মেডিকেল কলেজে ৭০ থেকে ২০টি, ডেলটা মেডিকেল কলেজে ৯০ থেকে ১৫টি, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে ৯০ থেকে ১৫টি, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে ১০০ থেকে ৫০টি এবং এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজে ১১৫ থেকে ১৫টি আসন কমানো হয়েছে। এই ১০টি মেডিকেল কলেজ থেকে আসন কমানো হয়েছে ২৬০টি।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ৬০টির সঙ্গে নতুন করে ২০টি আসন এবং খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজে পাঁচটি বাড়িয়ে ৫৫টি করা হয়েছে। এতে মোট আসন বাড়ানো হয়েছে ২৫টি।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দুই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ওই দুই মেডিকেল হলো—শরীয়তপুরের মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ ও মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর ভূঁইয়া মেডিকেল কলেজ। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে ভূঁইয়া মেডিকেল কলেজে ৫৭ ও মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজে ৫০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো।

দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা কয়েক বছর আগে ৭০টির বেশি ছিল। ২০২৩ সালে ছয়টি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এরপর কয়েকটির অনুমোদনও বাতিল করা হয়। বর্তমানে দেশে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। নতুন করে ব্যারিস্টার রফিকুল হক মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে বেসরকারি কলেজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬টিতে। নতুন ওই কলেজের আসনসংখ্যা ৫০। আজ রাতে অনুমোদনের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন।

চলতি অর্থবছরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস শিক্ষার্থী ভর্তির আসন ৬ হাজার ২৯৩টি। আগামী শিক্ষাবর্ষে দুটি মেডিকেল কলেজে (১০৭টি আসন) ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত ও ১০টি মেডিকেলে কলেজে ২৬০টি আসন কমানোয় আসন কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯২৬টি। একই সঙ্গে ২৫টি আসন বাড়ায় ও নতুন করে ৫০টি আসন নিয়ে একটি কলেজের অনুমোদন হওয়ায় আসনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার একটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি মেডিকেল কলেজের আসনসংখ্যা পুনর্বিন্যাস

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২৮
সরকারি মেডিকেল কলেজের আসনসংখ্যা পুনর্বিন্যাস

দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের আসনসংখ্যা পুনর্বিন্যাস করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্য থেকে ১৪টিতে আসন কমানো হয়েছে আর বাড়ানো হয়েছে তিনটিতে। অন্যান্য মেডিকেলের আসনসংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে।

আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠান স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা-১) সঞ্জীব দাশ।

বিদ্যমান আসন পুনর্বিন্যাস করে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৩৮০টি থেকে কমিয়ে ৫ হাজার ১০০টি আসন নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ২৮০টি আসন কমানো হয়েছে। আর তিন প্রতিষ্ঠানে মোট আসন বেড়েছে ৭৫টি।

চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কোর্সের বিদ্যমান আসন পুনর্বিন্যাস করা হলো।

চিঠি অনুযায়ী, দেশের প্রথম সারির পুরোনো আটটি মেডিকেল থেকে ২৫টি করে আসন কমানো হয়েছে। ২৫০ থেকে কমে এই আট প্রতিষ্ঠানে আসনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৫-এ। এগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট এম এ জি ওসমানী, বরিশাল শেরেবাংলা, ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ ও রংপুর মেডিকেল কলেজ। এ ছাড়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজেও ২৩০ থেকে পাঁচটি কমিয়ে ২২৫টি আসন নির্ধারণ করা হয়েছে।

আর হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ থেকে ৫০টি এবং নেত্রকোনা, নীলফামারী, নওগাঁ, মাগুরা ও চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ২৫টি করে কমিয়ে ৫০টি করে নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে আসনসংখ্যা বাড়ানো তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে—গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ ও পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ। এর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন ও টাঙ্গাইল মেডিকেলে ২৫ করে বাড়িয়ে আসন দাঁড়িয়েছে ১২৫টি আর পটুয়াখালী মেডিকেলে ২৫ বাড়িয়ে আসন নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০টি। অর্থাৎ তিন প্রতিষ্ঠানে মোট আসন ৭৫টি বেড়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কুমিল্লা, খুলনা, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান, ফরিদপুর ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ডিগ্রিতে আসনসংখ্যা ২০০ করে। আর ১০০ করে এই ডিগ্রির জন্য আসন রয়েছে পাবনা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া, জামালপুর ও মুগদা মেডিকেল কলেজে।

অপর দিকে ১২৫টি করে আসন রয়েছে গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে। আর রাঙামাটি ও নীলফামারী মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে ৭৫টি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ০৩
দুই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত

শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দেশের দুই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন। তবে তিনি কলেজ দুটির নাম তাৎক্ষণিক জানাননি।

অধিদপ্তরের চিকিৎসাশিক্ষা শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, গতকাল রোববার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হতে যাওয়া দুই মেডিকেল কলেজ হলো—শরীয়তপুরের মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ ও মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর ভূঁইয়া মেডিকেল কলেজ। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা ও শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় এই দুই মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিদ্যমান শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরও একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অনুমোদন পেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ০৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে আসনসংখ্যা কমানো হলেও আরও একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই মেডিকেল কলেজের নাম ব্যারিস্টার রফিকুল হক মেডিকেল কলেজ। রাজধানীতে এই মেডিকেল কলেজে কার্যক্রম শুরু হবে।

আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা কয়েক বছর আগে ৭০টির বেশি ছিল। পরে ২০২৩ সালে ছয়টি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এরপর কয়েকটির অনুমোদনও বাতিল করা হয়। বর্তমানে দেশে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। নতুন করে আরও একটি কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

রুবীনা ইয়াসমীন বলেন, ৬৭টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে দুটি কলেজে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ তারা ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। তবে বিদ্যমান শিক্ষাবর্ষের একাডেমিক কার্যক্রম চলবে। এই হিসাবে দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬টিতে।

চিকিৎসাশিক্ষার মান নিয়ে বিতর্কের মধ্যে সরকার কেন নতুন করে একটি কলেজের অনুমোদন দিয়েছে—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন অনুযায়ী শর্ত মেনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই কলেজকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আজ সরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তির আসন কমানো হলেও বেসরকারি কলেজের আসন কমানো হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টিকে আসন পুনর্বিন্যাস বলছি। সরকারিতেই শুধু নয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যেও যেসব কলেজ বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে পারেনি, তাদেরও কমানো হয়েছে। শিগগির প্রকাশ করা হবে।’

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন মেডিকেল কলেজ অনুমোদনসহ আসন্ন এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নানা বিষয়ে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন এই মেডিকেল কলেজে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই মেডিকেলের কার্যক্রম শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত