Ajker Patrika

ভুল অস্ত্রোপচারে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

নড়াইল প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ২৫
ভুল অস্ত্রোপচারে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

নড়াইলে ডাক্তারের ভুল অস্ত্রোপচারে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম ববিতা খাতুন। অভিযুক্ত চিকিৎসক সুব্রত কুমার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বিচারের দাবি করছেন নিহতের স্বজনরা।

মৃত ববিতা খাতুন (৩০) সদর উপজেলা হবখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা এলাকার আতিয়ার সরদারের মেয়ে এবং মাগুরার মুহাম্মদপুর উপজেলার বড়লিন গ্রামের লায়েব সেখের স্ত্রী। ববিতা খাতুন ৬ মাসের অন্তঃসত্বা ছিলেন। তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

জানা যায়, গর্ভকালীন নানা জটিলতার কারণে ববিতার মা রেবেকা বেগম চিকিৎসার জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে আসার পথে সার্জিক্যাল ক্লিনিকের সামনে দাঁড়ান। এ সময় জনতা ক্লিনিকের থাকা লিপি ও নাদিরা রেবেকা বেগমকে জানান তাঁদের ক্লিনিকে ভালো ডাক্তার আছে। আপনার মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে। এই বলে জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক শিপনের কাছে নিয়ে যান। ক্লিনিকের মালিক শিপন গর্ভবতী ববিতার চিকিৎসার কাগজ পত্র দেখে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যাবে বলে রেবেকা বেগমের কাছ থেকে ২২,০০০ হাজার টাকা নেন।

গত ১৯ নভেম্বর ২০২১ ববিতা খাতুনের সিজার করে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার। সিজার করার পর ২-৩ দিন রেখে রেবেকা বেগমকে বলেন আপনারা বাড়ি চলে যান তিন দিন পর ক্লিনিকে এসে সেলাই কেটে যাবেন।

বাড়িতে গিয়ে ববিতা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রেবেকা তাঁর মেয়ে ববিতা কে নিয়ে সদর হাসপাতালে গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (অব.) ডা. মীনা হ‌ুমায়ূন কবিরের কাছে নিয়ে যান। তিনি পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষা রিপোর্ট দেখে বলেন, রোগীর পেটের মধ্যে ২- ৩ প্যাকেট রক্ত পুঁজ জমা হয়ে আছে। তিনি জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক শিপনের সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা বললে শিপন ওই রোগী কে আবার ক্লিনিকে পাঠাতে বলেন। পরে রোগী ববিতাকে নিয়ে তাঁর মা রেবেকা আবার যান। পরে সেই রোগীকে আবারও অপারেশন করেন সুব্রত। রোগীর পেটে কোনো সেলাই না দিয়ে টেপ লাগিয়ে দেন। রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হলে ডাক্তার সুব্রত ও ক্লিনিকের মালিক শিপন রোগীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে তাঁদের রেখে পালিয়ে চলে আসেন শিপন এমন অভিযোগ করেন ববিতার মা।

পরে তাঁরা রোগীকে নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে ভর্তি করে। সেখান থেকে আবারও চিকিৎসকসহ ক্লিনিক মালিক শিপন তাঁদের যশোর উত্তরা প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে গেলে একদিন পর ১২ জানুয়ারি মৃত্যু হয়।

নিহত ববিতার চাচা হিরু সরদার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মেয়ে ববিতাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম জীবন বাঁচাতে। আর সেই ডাক্তার তাঁকে ভুল অপারেশন করে মেরে ফেলল। এসব ডাক্তাররা শহরে থাকে কি করে?’

নিহত ববিতার মা রেবেকা বলেন, ‘আমার মেয়েকে ডাক্তার সুব্রত একাধিকবার অপারেশন করেছে। সুব্রত ভুল চিকিৎসা করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলায়ছে। আমি এর বিচার চাই।’

নড়াইল জনতা ক্লিনিকের মালিক শিপন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় আমরা প্রথমে অপারেশন করতে রাজি হয়নি। রোগীর স্বজনরা আমার এবং ডাক্তারকে অনেক অনুনয়-বিনয় করার পরে আমরা রোগীর অপারেশন করতে রাজি হই। রোগী সুস্থ করার জন্য আমরা খুলনা ও যশোর নিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। রোগীর স্বজনরা সবকিছু জেনে এবং লিখিত দিয়েই অপারেশন করিয়েছে বলেও তাঁর দাবি।

অভিযুক্ত সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার ভুল অপারেশনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। রোগীর স্বজনদের পিড়াপিড়িতে অপারেশন করি। রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রোগী সুস্থ করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

ডা. সুব্রত কুমার আরও বলেন, ভাই আপনাদের এই বিষয় টা নিয়ে নিউজ করার দরকার নাই।

অভিযুক্ত ডা. সুব্রত কুমারের বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোরপূর্বক অপুর স্বীকারোক্তি নিয়েছেন বিএনপির ইশরাক, এনসিপির ব্যবস্থা করা সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর

‘মিরপুরের উইকেটের পাশে পুঁইশাক বের হচ্ছে, এত বছর হয়নি কেন’

ভোররাতে হাঁসের মাংস খেতে ৩০০ ফুটে যান আসিফ মাহমুদ, না পেয়ে যান ওয়েস্টিনে

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভুলভাবে কথা বলেছেন: প্রেস সচিব

নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস নাকি ওয়েস্টিনের—কোনটি সেরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত