Ajker Patrika

পণ্যের দামে ভোক্তার নাভিশ্বাস

জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা (গাইবান্ধা)
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২২, ১৪: ০২
পণ্যের দামে ভোক্তার নাভিশ্বাস

গাইবান্ধার সাঘাটার পবনতাইড় গ্রামের আব্দুল জলিল। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করেন। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তাঁর মতো হাজারো শিক্ষক। একদিকে আয়-রোজগার বন্ধ, অন্যদিকে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের প্রয়োজনীয় খাদ্যচাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা গেছে খাদ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক দামের চিত্র। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্ত, বেকার, চাকরি হারানো ও খেটে খাওয়া মানুষের। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৮০ টাকা, ছাগলের মাংস ৮০০, মুরগি ১৫০-২৫০ টাকা, মোটা চাল ৪০ টাকা, চিকন চাল ৫০-৮০ টাকা, ইলিশ মাছ ৬০০-৯০০ টাকা, সিং মাছ ৪০০ টাকা, অন্যান্য মাছ ৩০০ টাকা (গড়ে), সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা, সরিষার তেল ১৯০ টাকা, বিভিন্ন ডাল ১০০-১৪০ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, শাকসবজি প্রকারভেদে ২৫-৮০ টাকা, প্রতিটি ডিম ৯-১৪ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া মসলাসহ নিত্যপণ্যের দামও আকাশচুম্বী। এসব দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষ করে মানুষ বাড়ি থেকে পরিকল্পনা করে বাজারে গেলেও হিসাবমতো পণ্য ক্রয় করতে পারছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় লকডাউন আর বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। এর প্রভাবে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েন। ইতিমধ্যে হুহু করে বেড়ে চলেছে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম। এতে বেসামাল সাধারণ মানুষ। দিন দিন তাদের ব্যয় বাড়লেও বাড়ছে না আয়-রোজগার। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে ছিন্নমূল পরিবারের অনেকে বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি।

সেই সঙ্গে মানুষের অভাব-অনটনকে পুঁজি করে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীরাও। বিভিন্ন পরিবারের লোকজন তাদের দায়ভার সারতে ওই সব সুদখোরের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাদন ব্যবসায়ীরাও চড়া সুদ নিচ্ছেন।

মনোয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, যেভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে তুলনায় আয় বাড়েনি তাঁর। এতে করে পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়ছে ঋণের বোঝা।

সাঘাটা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী পরিমল সাহা বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল-ডাল-তেল-মসলাসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে করে ক্রেতাসাধারণ ক্ষুব্ধ।

কাঁচামাল ব্যবসায়ী ভুট্টু মিয়া জানান, বেশি মূল্যে ক্রয় করে বিক্রি করতে হয়, এতে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রায় কথা-কাটাকাটি হয়।

গাইবান্ধার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি অব্যাহত রয়েছে। যারা কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখার লক্ষ্যে সম্প্রতি চাতাল-মিল মালিকসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে ভোক্তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত