Ajker Patrika

ফেনসিডিল ও সর্বাঙ্গ ঢাকা এক নারী

সম্পাদকীয়
ফেনসিডিল ও সর্বাঙ্গ ঢাকা এক নারী

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে বাস তল্লাশি করার সময় ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা যখন একের পর এক ঘটছে, তখন সামান্য ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ এক নারীর আটকের ঘটনা নিয়ে সম্পাদকীয় কেন লিখতে হবে, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছি আজকের পত্রিকার অনলাইন সংবাদে, তাতে ৪০ বোতল ফেনসিডিলের পেছনে একজন নারী পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সর্বাঙ্গ ঢাকা এক নারীকে দেখা যাচ্ছে। এই নারীর সঙ্গেই ছিল ফেনসিডিলের বোতলগুলো।

মাদকাসক্তির জন্য একসময় ফেনসিডিল খুব নাম করেছিল বটে, কিন্তু ইদানীং এর জায়গা নিয়েছে ইয়াবা। ফেনসিডিল, গাঁজা ছিল সহজলভ্য। এরও আগে বিভিন্ন ঔষধালয়ের ‘মৃতসঞ্জীবনী সুরা’ ধরনের ওষুধও নেশার জন্য ব্যবহৃত হতো। এরপর মাদক ব্যবহারকারীরা আরও অনেক ধরনের মাদকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। অ্যালকোহল তো ছিলই, সেই সঙ্গে আফিম, হেরোইন, কোকেন, প্যাথিডিনকেও নেশার সঙ্গী বানিয়েছে।

সরকারি প্রচারণা, কিংবা মসজিদে খুতবার সময় মাদকবিরোধী প্রচারণা চালানোর যে আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী, তা কি সত্যিই কোনো কাজে লাগবে? এই সর্বনাশা নেশা থেকে বের হতে হলে তো প্রথম নজর দিতে হবে পরিবারের দিকে। একটি সাধারণ পরিবারে যদি প্রতিটি সদস্য স্বাভাবিক জীবনযাপন করে, তাহলে মাদকাসক্ত হওয়ার আগেই পরিবার তা টের পেয়ে যাবে। মাদকের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা চিহ্নিত করা মোটেও কঠিন কাজ নয়। কিন্তু আদৌ পরিবারগুলো কি সে রকম শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করছে? এরপর স্কুল বা কলেজজীবনের বন্ধুবান্ধবদের কেউ যদি ‘আদর করে’ মাদক ধরিয়ে দেয়, তাহলে সেই নেশা থেকে উঠে আসার সুযোগ থাকে কম। বন্ধুরাই ক্ষণিকের বিস্মরণের আনন্দের জন্য অন্য বন্ধুর জীবন নষ্ট করে দিতে পারে।

একবার একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ে; অর্থাৎ বাকি ৯০ শতাংশ বিক্রি হয় এবং তা পৌঁছে যায় মাদকাসক্ত ব্যক্তির হাতে। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ইউএনওডিসি) একবার বলেছিল, বাংলাদেশে বছরে ৪০ কোটি ইয়াবাই বিক্রি হচ্ছে।

এবার আমরা সেই সর্বাঙ্গ ঢাকা নারী মাদক কারবারির প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বাংলাদেশে প্রতিবছর বিক্রি হওয়া ৪০ কোটি ইয়াবার সঙ্গে তুলনা করলে ৪০ বোতল সস্তা ফেনসিডিলকে হাস্যকর একটি বিষয় বলে মনে হবে। এই নারী কেন ফেনসিডিল বিক্রি করতে গেলেন, তাঁর সামাজিক অবস্থান কী, আদৌ অন্য কোনো পেশায় তিনি যেতে পারতেন কি না ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে কিন্তু ভাবতে হবে। মাদক যে মূলত আমাদের তরুণ সমাজকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এ থেকে বের হওয়ার উপায় খোঁজা হচ্ছে নানাভাবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ফল কেন পাওয়া গেল না, সে বিষয়েই তো ভাবা প্রয়োজন। ৪০ কোটি ইয়াবা আর ৪০ বোতল ফেনসিডিল—দুটোই আমাদের ধ্বংস করছে, এ কথা বোঝাটাই জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত