Ajker Patrika

উচ্ছেদ থেমে আছে ২২ দিন

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২২, ১১: ৪৬
উচ্ছেদ থেমে আছে ২২ দিন

সাভারে বংশী নদীতীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে। এক দখলদারের অনুরোধে অভিযান স্থগিত করার পর নানা জটিলতায় তা আটকে যায়। আবার উচ্ছেদ অভিযান চলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সাভারের সচেতন নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে বংশীতীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছিল। দেরিতে হলেও উপজেলা প্রশাসন গত ২০ ফেব্রুয়ারি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযানে নামে। ওই দিন নদীর তীরে গড়ে তোলা আব্দুল আলিমের পাকা বাড়ি থেকে অভিযান শুরু করা হয়। কিন্তু আব্দুল আলিম মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করলে টিনের প্রাচীরের কিছু অংশ আংশিক ভেঙে অভিযান স্থগিত করা হয়। এরপর আর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো অভিযান চালানো হয়নি।

শুধু আব্দুল আলিমের বাড়ি উচ্ছেদের ক্ষেত্রেই নয়, বংশী নদীতীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রক্রিয়া আটকে আছে বছরের পর বছর ধরে। উচ্ছেদ নথি তৈরি করে জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হলেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে এ প্রতিবেদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, বংশী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে ও উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে তীরের জায়গা আরও বেশি করে বেদখল হচ্ছে। অনেকে খাসজমিতে পাকা স্থাপনাও নির্মাণ করছেন।

অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরিতেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য গোপন করে পাঁচ বছর আগে দুই দফায় মাত্র ৬৫ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি।

দখলদারদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশও উপেক্ষিত হয়েছে। হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালীন এক আদেশে বংশী নদীর ভেতরে সব ধরনের ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং নদী দখল ও স্থাপনা নির্মাণকারীদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর পর দুই বছর পার হয়ে গেলেও হাইকোর্টের ওই আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে নদীর তীরে আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়। এরপর ওই ভরাট অংশে অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। কোনো বাধা না এলে পরে সেখানে পাকা বা আধা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এরপর দখলদার ওই স্থাপনা নিজে ব্যবহার করেন অথবা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে দখল হয়ে আসছে বংশী নদী ও নদীর তীর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাভারের গেন্ডা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, দখলদারদের অধিকাংশই নামাবাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। এ কারণেই নদীর ওই অংশে উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে নানা অজুহাত।

আব্দুর রহমান নামের এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতা ঠেলে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকেও পিছু হটতে হলো।’

সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সহসভাপতি রহিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সীমানা চিহ্নিত করে বংশী নদী ও নদীর তীর দখলমুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হচ্ছে। স্থানীয় সাংসদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানসহ নদী কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে এসব দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

রহিম উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বংশী নদী ও নদীর তীর উদ্ধারে আদালতের নির্দেশও প্রতিপালিত হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না তা সবার জানা। কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই।

জানতে চাইলে ইউএনও মাজহারুল ইসলাম বলেন, আব্দুল আলিম তাঁর দখলে থাকা সরকারি ভূমি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

১৯৪৭ থেকে ২০২৫: ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ফলাফল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত