Ajker Patrika

১১ হাজার হেক্টরে রবিশস্য

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ৩১
১১ হাজার হেক্টরে রবিশস্য

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিস্তীর্ণ চর এলাকার চার ইউনিয়নের প্রায় ১১ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে এবার রবিশস্যের চাষ হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও এ চরে ডাল, পেঁয়াজ-রসুন, আলু, গম, ভুট্টা ও সরিষার চাষ হয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানি কমে গেলে চরে রবিশস্যের চাষ শুরু হয়। চর এলাকার অর্থনীতিতে ও মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ভূমিকা রাখে এসব ফসল।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থ বছরে পদ্মার চরে এবার ৭৫৪ হেক্টর জমিতে খেসারি, ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, ৭৬৪ হেক্টর জমিতে রসুন, ৪০০ হেক্টর জমিতে আলু, ২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে গম, ১ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ২ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে মসুর, ৩৯৪ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। তা ছাড়া কম-বেশি অন্যান্য রবি শস্য আবাদ হয়েছে এই চরে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, চরাঞ্চলের চার ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চর জুড়ে সবুজের সমারোহ। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ফসলের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। এসব ফসলকে ঘিরে আনন্দ কাজ করছে এসব এলাকার কৃষকদের মাঝে। সম্প্রতি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় জীবনযাত্রা অনেকটায় বদলে গেছে জানিয়েছেন দুই ইউনিয়নবাসী।

গত বছর এই চরে প্রায় ১ হাজার ২২১ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। হারুন ইসলাম নামের এক কৃষক জানান, এই রবি মৌসুমে দুই ধরনের ফসল ঘরে তুলতে পারেন চর এলাকার কৃষকেরা। পলিমাটি পড়া এই চরের মাটিতে সব ফসলের ফলনও ভালো হয়। মসুর তুলে সে এখন ধান লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত করছেন তিনি।

কথা হয় চিলমারী ইউনিয়নের পোলট্রির মোড় এলাকার এক অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি জানান, বছরের বেশ কয়েক মাস বর্ষা, বন্যার পানি ও নদীভাঙনে এখানকার মানুষকে প্রতিনিয়ত লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। এই এলাকার মানুষের প্রধান চালিকা শক্তি কৃষি। স্বল্প সময়ে অল্প খরচে প্রায় সব ফসলের ভালো ফলন পাওয়ায় লাভবান হন এই এলাকার কৃষকেরা।

এ দিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় কৃষি ফসল ঘরে তোলা ও বাজারজাতকরণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী এই দুই ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কৃষকেরা। ইতিমধ্যে তাঁদের কষ্ট লাঘবে এই এলাকার সাংসদ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের বলেন, চরে সম্প্রতি বিদ্যুতের ব্যবস্থা হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেও খারাপ। অনেক জায়গায় কোনো সড়ক ও সেতু নেই। বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় এলাকাবাসীকে। সড়ক আর সেতু নির্মাণ করা হলে চরের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। পাশাপাশি বিস্তীর্ণ চর এলাকায় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ রবিশস্য বাজারজাত করা সহজ হবে, যা এই এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে বলে মনে করি।’

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘চরে পলিমাটি থাকার কারণে সহজেই ফসলের ভালো ফলন হয়। চরের জমি অনেক উর্বর হওয়ায় কীটনাশক প্রয়োগও কম করা লাগে। বিস্তীর্ণ চরের প্রান্তিক কৃষকেদের আমরা আলাদাভাবে নজরদারিতে রাখি। তাঁদের সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি সব ধরনের সহায়তা করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিবারের মতো এবারও রবিশস্যের ভালো ফলন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত