Ajker Patrika

বাড়িতেই শুরু ‘পুলিশি নির্যাতন’

সুনামগঞ্জ ও শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ০০
বাড়িতেই শুরু ‘পুলিশি নির্যাতন’

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শত্রুমর্দন গ্রামের বাসিন্দা উজির মিয়ার মৃত্যু পুলিশের নির্যাতনের কারণেই হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। তাঁরা বলেন, নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের সময়ই উজিরকে নির্যাতন শুরু করে পুলিশ। পরে থানায় নিয়েও ব্যাপক মারধর করে।

গরু চুরির মামলায় উজিরকে গ্রেপ্তারের সময় নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তাঁর ভাই ডালিম মিয়া ও বোন সিপা বেগম বলেন, ‘৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১২ টা। নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন উজির। শান্তিগঞ্জ থানা-পুলিশ তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে। উজির দরজা খুলতেই তাঁর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন পুলিশের এক সদস্য। এপর তাঁর ঘাড় ধরে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে।’

উজিরের তিন বোন ও দুই ভাই। এর মধ্যে উজির বড়। তিনি দুই মেয়ে সন্তানের জনক। উজির দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। দেশে ফেরেন বছর সাতেক আগে। প্রথমে দোকান দিলেও, পরে বিল ইজারা নিয়ে মাছের ব্যবসা শুরু করেন।

উজিরের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, শুধু গ্রেপ্তারের সময় নয়, থানায় নিয়েও ব্যাপক নির্যাতন করা হয় উজিরকে। একই রাতে চুরির এই মামলায় গ্রেপ্তার হন একই গ্রামের শহীদুল ইসলাম ও আক্তার মিয়া। তাঁদের ওপরও পুলিশ নির্যাতন করে।

উজিরের মা বানুছা বেগম, ভাই ডালিম মিয়া ও বোন সিপা বেগমসহ স্থানীয় বাসিন্দারা উজিরকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গ্রেপ্তারের পরদিন জামিনে মুক্তি পান উজির। এর পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই উজিরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড থেকে দেওয়া ছাড়পত্রে তাঁর অসুস্থতার কারণ হিসেবে ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট (শারীরিক আঘাত) উল্লেখ করা হয়।

হাসপাতাল থেকে ফেরার পর বাড়িতেই ছিলেন উজির। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হঠাৎ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সিলেট মেডিকেলে নেওয়ার পথে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ছাতক উপজেলার কৈতক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক উজিরকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাগলাবাজার এলাকায় উজিরের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান তাঁরা। এ কর্মসূচি চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার উজ জামান। তবে তাঁকে বহনকারী গাড়ি উজিরের লাশের ওপর দিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ইউএনও।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিম বলেন, লাশের ওপর দিয়ে ইউএনওর গাড়ি তোলার অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে। এদিকে এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকে কাছে জমা দেওয়া কথা ছিল। কিন্তু আরও তিন কার্য দিবস সময় নেওয়া হয়েছে।

এদিকে শান্তিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ সূত্রধরকে বদলি করা হয়েছে জেলার দিরাই থানায়।

তবে এ ঘটনার সঙ্গে বদলির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সাঈদ। তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী তাঁকে (দেবাশীষ) অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। তবে বদলি করা হলেও তদন্তাধীন ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও, কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও তিন কার্য দিবস সময় বাড়ানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত