Ajker Patrika

১১১ ইটভাটার সবকটি অবৈধ

মেহেরপুর সংবাদদাতা
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৪: ৪২
১১১ ইটভাটার সবকটি অবৈধ

মেহেরপুরে ১১১টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স আছে মাত্র ১টির। অন্যদিকে ১১১টি ইটভাটার মধ্যে একটিরও নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। সম্প্রতি একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিলেও অন্যগুলো আছে ঠিকই। ভাটা মালিকেরা জানান, নিয়মিত তাঁরা ভ্যাট দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ও সরবরাহে গেলেই তাদের ভ্যাট দিতে হবে। হোক সেটা বৈধ আর অবৈধ। 

গত ৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স না থাকায় অভিযান চালানো হয় সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আলিফ ব্রিকসে। ভাটাটির মালিক মো. চঞ্চল। কাগজপত্র না থাকা ও ইট পোড়াতে কাঠ ব্যবহার করায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ইটভাটাটি। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ। 
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ জানান, ভাটার লাইসেন্স না থাকা ও ভাটাতে কাঠ পোড়ানোর অপরাধে আলিফ ব্রিকসে অভিযান চালানো হয়। 
ভাটা মালিক চঞ্চল জানান, ভাটার লাইসেন্সের জন্য ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলেন। এ ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরেও ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেন। এখন পর্যন্ত কোনো লাইসেন্সই তাঁকে দেওয়া হয়নি। এভাবেই কয়েক বছর ধরেই ভাটা চালিয়ে আসছেন। সে মোতাবেক তিনি গত ৭ ডিসেম্বর ভাটার চিমনিতে আগুন দেন। এতে খরচ হয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও অন্যান্য খরচতো রয়েছে। পর দিনই অভিযান চালিয়ে ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন।

চঞ্চল বলেন, গ্রামবাসীদের সহায়তায় আবারও ভাটা সংস্কার করে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। ইট পুড়িয়ে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করব। তবে আবারও আমার ভাটায় অভিযান চালানো হলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ব। কারণ ব্যাংক ও বিভিন্ন জায়গা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ভাটা চালু করেছি। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভাটা মালিক বলেন, জেলার একটি ভাটা ছাড়া কোনো ভাটার লাইসেন্স নেই। আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেও লাইসেন্স পাইনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ভাটার লাইসেন্স দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কাউকেই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। এখন আমরা কোথায় যাব। আমরা অবৈধ হলেও প্রত্যেক ভাটা থেকে প্রতি বছরই জেলা প্রশাসকের ফান্ডে আমাদের দিতে হয় ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।

ইটভাটা মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ সাজ্জাদুর রহমান মিলন জানান, মেহেরপুরে অনুমোদিত হাওয়া ভাটার সংখ্যা ৩৫টি। অথচ এ হাওয়া ভাটাগুলোকেও লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। গত বছরে আমরা জেলার ৯৯টি ভাটা থেকে ভ্যাট প্রদান করেছি ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এবার আমাদের আনা হয়েছে এনবিআরের নিবন্ধনের তালিকায়। তারপরও আমরা অবৈধ। আমার নিজের ভাটার লাইসেন্সের জন্য ইউনিয়ন, ভূমি অফিস ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, স্থানীয় জনগণেরও অনাপত্তিপত্র দিয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র পাইনি।

মেহেরপুর কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহকারী কমিশনার এসএম শারাফত হোসেন জানান, কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ও সরবরাহে গেলেই তাদের ভ্যাট দিতে হবে। সে প্রতিষ্ঠান বৈধ হোক আর অবৈধ। আর ইটভাটাগুলো আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যাটের আওতায় চলে আসে। ৩১ মার্চের মধ্যেই তাদের পুরো ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। গত বছর জেলার প্রতিটি ভাটা থেকে শতভাগ ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। আর বেশ কয়েক বছর আগের বেশ কয়েকটি ভাটার ভ্যাট বাকি রয়েছে। সেগুলো ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে বকেয়া ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুনছুর আলম খান বলেন, পর্যায়ক্রমে জেলার প্রতিটি অবৈধ ভাটায় অভিযান চালানো হবে। তবে ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে জেলা প্রশাসন টাকা নিয়েছে কি না বিষয়টি আমার জানা নেই। আর যাঁরা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন ক্রায়টেরিয়া ফুলফিল করতে না পারায় তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়াপত্রের কাগজ ভাটা মালিকেরা আবেদনপত্রে দিতে পারিনি বলে জানান তিনি। 
কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতাউর রহমান বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী যে ধারাগুলো রয়েছে তার কোনোটিই ইটভাটা মালিকেরা পূরণ করতে পারেননি। সে জন্য তাঁদের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া যায়নি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত