Ajker Patrika

ধর্ষণ মামলার আসামির পক্ষে সাফাই আ.লীগ নেতাদের

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১৯ মে ২০২২, ০৮: ৫৬
ধর্ষণ মামলার আসামির পক্ষে সাফাই আ.লীগ নেতাদের

ধর্ষণ মামলার আসামির পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কেফায়েত হোসেন রনির পক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। তাঁর পক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

ধর্ষণ মামলার আসামি রনি এ সময় উপস্থিত থাকলেও কথা বলেননি। এ সময় রনির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করে পিপি জাহাঙ্গীর জানান, তাঁরা শতভাগ নিশ্চিত যে এটি মিথ্যা মামলা।

উল্লেখ্য, রনি কাউন্সিলর হিসেবে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ।

অবশ্য একই দিন সকালে ধর্ষণ মামলার বাদী ওই কলেজছাত্রী ফেসবুক লাইভে এসে তাঁর সর্বনাশ করার জন্য কাউন্সিলর রনির বিচার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি ডিএনএ টেস্টেরও দাবি করেছেন। গতকাল বুধবার সকালে ৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের এ ফেসবুক লাইভ ভাইরাল হয়। কলেজছাত্রী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর কাছেও বিচার চান।

বুধবার দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে কেফায়েত হোসেন রনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ক্লাবের আশপাশে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য দিতে পারেন কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পিপি আমার কাছে মুখ্য নয়, দলীয়ভাবে এটি করছি। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, কাউন্সিলর রনি ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তা ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছি, ধর্ষণ মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক করা হয়েছে। এসব নিশ্চিত হয়েই মহানগর আওয়ামী লীগ রনির পাশে অবস্থান নিয়েছে।’

কারা ষড়যন্ত্র করছে, জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর বলেন, আগামী নির্বাচনে যাঁরা ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চান, তাঁরাই এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে রনির স্বাক্ষর করা লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযোগকারী তরুণীকে তিনি চেনেন না। রমজানের মধ্যভাগে ওই তরুণী তাঁকে ফোন করে বলেন, তাঁকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করবেন।

তবে ধর্ষণ মামলায় বাদীর আইনজীবী আজাদ রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হয়নি। পিপি রাষ্ট্রের আইনজীবী। আইন অনুযায়ী তিনি আসামির পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন না। এতে মামলার বিচার প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অভিযুক্ত কাউন্সিলর নির্দোষ দাবি করলেও আসামি এবং বাদীর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের কললিস্ট এবং ফেসবুকে চ্যাটিংয়ের তথ্য সংগ্রহে আছে। তাঁর মক্কেল ধর্ষণের শিকার হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তা ছাড়া বাদী এবং আসামির বাড়ি আলাদা ওয়ার্ডে। দুই ওয়ার্ডের দূরত্ব অনেক। তাহলে সিটি নির্বাচন সামনে রেখে কী করে ষড়যন্ত্র করা হয়?

অপর দিকে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ গতকাল বুধবার বিকেলে লাইভে এসে কাউন্সিলর রনিকে কর্মঠ দাবি করে বলেন, ‘তাঁকে নিয়ে কিছুদিন ধরে ষড়যন্ত্র চলছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, সামনের নির্বাচনে তাঁর অবস্থান ভালো। রনি স্থানীয় আওয়ামী লীগেরও সম্পাদক। তাঁকে সব সময় কাছে রাখি।’ মেয়র বলেন, তিনি যাঁকেই কাছে রাখেন, তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা হয়। রনি থানায় জিডি করেছেন। যেহেতু রনি মেয়রের পরিষদের কাউন্সিলর, সেহেতু এভাবে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করা গণমাধ্যমের কি ঠিক হয়েছে?

উল্লেখ্য, গত সোমবার ওই ছাত্রী আদালতে দেওয়া নালিশি অভিযোগে বলেছেন, অভিযুক্ত কেফায়েত হোসেন রনি বিয়ের প্রস্তাব দিলে তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং তিনি একাধিকবার রনি কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ইয়ারব হোসেন অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ১৬ জুনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বরিশাল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত