মিরপুরে একটু স্বস্তির খোঁজে বাংলাদেশ

প্রত্যাশিত ফল না আসায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর রাসেল ডমিঙ্গোর মাথার ওপর ‘টিম ডিরেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনকে। সুজন অবশ্য মিরপুর টেস্টে দলের সঙ্গে নেই। তবে তিনি গতকাল দলের অনুশীলন দেখতে এসেছিলেন। সাপোর্টিং স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে গেলেন দূর থেকেই। সুজন হয়তো চেষ্টা করছেন দূর থেকেই দলকে উজ্জীবিত করতে।

বাংলাদেশ দলকে এই মুহূর্তে উজ্জীবিত করতে পারে আসলে একটা ইতিবাচক ফল। জয় যদি কঠিনও হয়, একটি ড্রও এনে দিতে পারে স্বস্তির সুবাতাস।

দলের দুর্দশার শুরু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজেও চিত্রটা বদলায়নি। টানা ৯ ম্যাচ হেরে দলের আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার জ্বালানি হয়ে উঠতে পারে চোট কাটিয়ে সাকিব আল হাসানের ফেরাটা। বাঁহাতি অলরাউন্ডার অবশ্য প্রথম টেস্টের দলেও ছিলেন। কিন্তু খেলতে পারেননি ফিটনেসে ঘাটতি থাকায়। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিবের খেলাটা নিশ্চিতই বলা যায়। তবে ফিটনেস পরীক্ষায় উতরাতে না পারলে একাদশের বাইরেই থাকতে হতে পারে চোট থেকে মাত্র সেরে ওঠা পেসার তাসকিন আহমেদকে।

অনেক অস্বস্তির মধ্যে বাংলাদেশের একটু স্বস্তি মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের ছন্দে ফেরা। টি-টোয়েন্টিতে রানখরায় ধুঁকতে থাকা মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটার জ্বলে উঠেছেন চট্টগ্রাম টেস্টে। মুশির দুর্ভাগ্য, ৯ রানের জন্য লাল বলের ক্রিকেটে অষ্টম শতকটা পাননি। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা লিটন ঠিকই দারুণ ইনিংসটার পূর্ণতা দিয়েছেন; তুলে নিয়েছেন স্বপ্নের প্রথম সেঞ্চুরি।

চট্টগ্রামের মতো মিরপুরেও বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের নিশ্চিত কঠিন পরীক্ষা নেবেন দুর্দান্ত ছন্দে থাকা শাহিন শাহ আফ্রিদি-হাসান আলীদের নিয়ে গড়া পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং বিভাগ। পাকিস্তানের বোলাররাও এ কদিনে বেশ বুঝে গেছেন, বাংলাদেশের টপ অর্ডার দ্রুত ধসিয়ে দেওয়ার চেয়ে ‘সহজ’ কাজ আর নেই! ৩০-৪০ রান তুলতেই যদি একটা দল নিয়মিত ২-৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে, প্রতিপক্ষের বোলারদের কাছে কাজটা সহজই হওয়ার কথা। ধারাবাহিক টপ অর্ডারের বিপর্যয় ঠেকাতে প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে আনা হয়েছে মোহাম্মদ নাঈমকে। যদিও তাঁর খেলার সম্ভাবনা কতটা, সেটা বলার সুযোগ ছিল না গতকালও। বরং চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে দলে থাকা মাহমুদুল হাসান জয়ের খেলার গুঞ্জন বেশি। এ নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, উদ্বোধনী জুটির সমন্বয় ডান-বাম হতে পারে। দুজন বাঁহাতিও হতে পারে। আসলে ডান-বাম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’

ডান-বাম হলে বাঁহাতি ওপেনার সাদমান ইসলামের সঙ্গে ডানহাতি জয়কে দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশের সামনে যখন সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্য, পাকিস্তান চাইছে টি-টোয়েন্টির মতো টেস্টেও বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করতে। তবে এই মুহূর্তে তাদের জল্পনা মিরপুরের উইকেট নিয়েই বেশি। সেটির কারণও আছে—মিরপুরের উইকেট যে বড়ই রহস্যময়! প্রতিপক্ষ উপমহাদেশের হওয়ায় বাংলাদেশ দলের চাওয়া চট্টগ্রামের মতো ব্যাটিংসহায়ক উইকেট। অন্তত রান করে যদি হার থেকে মুক্তি মেলে! যদিও দ্রুত সময়ে মিরপুরের উইকেটের চরিত্রে আমূল পরিবর্তন আনা একটু কঠিনই।

বাংলাদেশ কোচ ডমিঙ্গোর জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন। বিশ্বকাপে ভরাডুবি ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই সংস্করণে টানা চার হারে সুতোয় ঝুলছে আফ্রিকান কোচের বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ। মিরপুর টেস্টের একটি ইতিবাচক ফল হতে পারে তাঁর বড় ‘লাইফ লাইন!’ শুধু ডমিঙ্গো নয়, একটা ইতিবাচক ফল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই এখন গুরুত্বপূর্ণ; যেটিতে কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে টানা হারের ক্লান্তি।