Ajker Patrika

তিস্তার চরে মিষ্টিকুমড়া

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
তিস্তার চরে মিষ্টিকুমড়া

শুক্রবারের সকাল। চৈত্রের রোদ তখনো খুব একটা তেতে ওঠেনি। আমরা চলেছি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের গজঘণ্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক গ্রামের দিকে। এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। বসন্তে নদীর কিছু অংশে হাঁটুপানি থাকে, বাকিটা বিস্তীর্ণ চর। এই চরেরই একটি অংশ চর ছালাপাক।

চর ছালাপাক গ্রামে প্রায় ৫০০ কৃষক পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যা ২ হাজারের কিছু বেশি। এ জনসংখ্যার ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। তিস্তার এই বিশাল চর এসব কৃষকের শ্রমে-ঘামে কমলা-হলুদ সোনায় ভরে উঠেছে। চর ছালাপাকের কৃষকেরা এখন চরজুড়ে চাষ করছেন মিষ্টিকুমড়া, আলু, ভুট্টা, গম, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন, ধানসহ বিভিন্ন ফসল। পাশাপাশি গবাদিপশু।

নদী শুকিয়ে কাঠ। মাইলের পর মাইল মাইল পাড়ি দিতে হয় হেঁটে। আমরা ছালাপাক ঘাটে উপস্থিত হয়ে মাত্র ২০০ মিটার এলাকা নৌকায় পার হই। ক্যামেরা দেখে দুটি শিশু আমাদের সঙ্গী হয়। তাদের একজন দ্বিতীয়, অন্যজন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তারা এসেছে মিষ্টিকুমড়া নিতে। নদী পার হয়ে হাঁটতে 
শুরু করি। সামনেই চোখে পড়ে শসা, মিষ্টিকুমড়া, ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ঢ্যাঁড়সসহ নানান শস্যের খেত।

চরের বালু তেতে উঠেছে ততক্ষণে। সূর্য মধ্য আকাশে। গরম বালুর ওপর দিয়ে আমরা এগিয়ে যাই এক বিস্তীর্ণ কুমড়াখেতের দিকে। সেখানে ১২ থেকে ১৫ জন লোক দিয়ে ব্যবসায়ী রবিউল এক কৃষকের খেত থেকে কুমড়া কাটাচ্ছেন। নিয়ে যাবেন শহরে। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, এসব কুমড়া পাঠানো হবে রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু আমরা জানতে চাইলাম এই চরের কুমড়ার বিদেশে যাওয়ার কথা। তিনি জানান, কয়েক দিন আগে রংপুর অ্যাগ্রো নামে একটি প্রতিষ্ঠানের লোক এসেছিলেন। কিন্তু তখন ফলন কম ছিল বলে তাঁরা কুমড়া না কিনেই চলে যান। সেখানে উপস্থিত কুমড়াখেতের মালিক মিলন মিয়া (৪৫) জানান, দুই বছর থেকে তাঁরা মিষ্টিকুমড়া চাষ করছেন।

এই চরে ২৭ শতাংশ জমিতে ১ দন। সে হিসাবে মিলন মিয়া ৬০ দন জমিতে কুমড়া চাষ করেছেন। ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি করছেন ৩ লাখ টাকা। থ্রি-এক্স, ব্যাংকক-১, আন্ডার-১, অনিক, স্টাইল সুইট, মনিকা, সেরা, সেরা প্লাসসহ কয়েকটি জাতের কুমড়া চাষ করেছেন মিলন মিয়া। 
একটু এগোতেই উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর চল্লিশ সাল গ্রামের একটি চরে খেত থেকে কুমড়া তুলতে দেখা যায় আজিবর ও সুজা মিয়াকে। বিকেলের আগে শহরে পৌঁছানোর তাড়া তাঁদের। মূল সড়ক থেকে এই চরের দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। চরাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য সাধারণত ঘোড়াগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, গরুর গাড়ি এবং বাইসাইকেল ব্যবহার করেন চাষিরা। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থার কারণে প্রায় সময়ই উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন চাষিরা—অভিযোগ করেন আজিবর ও সুজা মিয়া।

এসব অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা বিকেলের মুখে ফিরে চলি গঙ্গাচড়ার দিকে। চাষি আর ব্যবসায়ীরা তখন মিষ্টিকুমড়া নিয়ে ছুটছেন রংপুর শহরে। তাঁদের কুমড়া যাবে দেশের দূর থেকে দূরতম জেলায়। সেখান থেকে আরও দূরের কোনো জনপদের কোনো পরিবারের রান্নাঘরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: ফেসবুকে বাকের মজুমদার

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় এক দিনে ১০০ ডলার কমল সোনার দাম

যুদ্ধ বলিউডের সিনেমা নয়: ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

টাকা চুরি করতে দেখে ফেলায় দুই খালাকে হত্যা করে কিশোর: ডিবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত