Ajker Patrika

পলাশ ফুটেছে ওই

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
পলাশ ফুটেছে ওই

ঘিওর উপজেলার রাথুরা গ্রামে অটল সাহার বাড়ি। প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে আছে ফুলে ফুলে ভরা পাতাহীন বিরাট এক পলাশগাছ। বৃন্ত থেকে খসে পড়া ফুলে গাছের নিচের মাটি রঙিন হয়ে গেছে। দেখে মনে হয় সাজের নকশিকাঁথা। মাটিতে পড়ে থাকা পলাশ ফুল নিয়ে খেলায় মগ্ন শিশুরা। কখনো সেগুলো ছুড়ে দিচ্ছে দূরে, কখনো এর-ওর গায়ে। গাছের আশপাশে উড়ছে মৌমাছি। অপার্থিব এ দৃশ্য থেকে চোখ ফেরানো দায়।

এসব অভূতপূর্ব দৃশ্যের জন্যই মানিকগঞ্জ, বিশেষ করে ঘিওর এলাকার মানুষ তপন চৌধুরীর গানেই আস্থা রাখেন। তপন যৌবন বয়সে গেয়েছিলেন, ‘পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে/ এসেছে দারুণ মাস’।

এখন বসন্ত এলে তপন চৌধুরীর জনপ্রিয় এ গান কানে ভাসে।

বসন্ত মানে ঘিওরের প্রান্তরে প্রান্তরে পলাশের দারুণ ঘনঘটা। সোনালি রোদ্দুরে নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে থোকা থোকা পলাশ ফুল দেখার সুযোগ খুব সম্ভবত ঘিওরেই সম্ভব। গাঁয়ের পথের ধারে পাতাহীন গাছের নগ্ন ডালে ফুটে থাকা এ ফুল নজর কাড়ে খুব সহজে। গাছতলায় পড়ে থাকা পলাশের পাপড়িতে রঙিন হয়ে ওঠে পথ। কিন্তু চিন্তার বিষয় এই যে, ঘিওর উপজেলাসহ মানিকগঞ্জের পথে-প্রান্তরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো পলাশগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে দ্রুত। কারণ, এর প্রতি মানুষের আগ্রহের ঘাটতি। পলাশ ফলদ বৃক্ষ নয় এবং এর কাঠ জ্বালানি ছাড়া কোনো কাজে আসে না। ফলে এই গাছ রোপণে মানুষের অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। 
উপজেলার বানিয়াজুরী, সিংজুরী, নালী, বালিয়াখোড়া, পয়লা, বড়টিয়া এলাকার শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মেঠো পথের ধারে অযত্ন আর অবহেলায় ফুটে থাকা কিছু পলাশগাছের দেখা মেলে এখনো। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন নার্সারিতে পলাশ ও শিমুলের চারা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন এবং বিক্রি বেড়েছে।

নিয়াজুরী রিফাত নার্সারির মালিক আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, তাঁদের নার্সারিতে কলম প্রক্রিয়ায় উন্নত মানের পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়ার চারা বিক্রি হচ্ছে। ভালো 
দামের পাশাপাশি ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়াও মিলছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা চিত্রা সরকার জানিয়েছেন, পলাশ ও শিমুলগাছ টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। গাছগুলোর বংশবৃদ্ধির বিষয়ে বাগানমালিক ও কৃষককে উদ্বুদ্ধ করছেন তাঁরা।

রাথুরা গ্রামের বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, ‘আমার বাড়িতে দুটি পলাশগাছ আছে। পূজা-পার্বণ ও বসন্তে এ ফুলের কদর বাড়ে। অনেকেই এ গাছের তলায় কিংবা ফুল নিয়ে ছবি তোলেন। ঔষধি হিসেবেও অনেকে পলাশ ফুল এবং এর গাছের বাকল ব্যবহার করেন। শুধু ফলই নয়, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতেও গাছতলায় মানুষ ভিড় করেন।’

প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন দেলোয়ার জাহান। পলাশ ও শিমুলগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশ চিন্তিত তিনি। জানালেন, পলাশ-শিমুলগাছ দিন দিন উজাড় হওয়ায় প্রকৃতির রূপ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এসব গাছ রোপণের কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করেন দেলোয়ার জাহান। আগে গ্রামগঞ্জের প্রায় সবখানে পলাশ নজরে পড়লেও এখন দেখা পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে পর্ণমোচী দেশীয় এ গাছটির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত