Ajker Patrika

আমের ‘টনিক’ হয়ে এল বৃষ্টি

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ২৮
আমের ‘টনিক’ হয়ে এল বৃষ্টি

শেষবার কবে বৃষ্টি হয়েছিল, তা ভুলেই গিয়েছিলেন রাজশাহীর মানুষ। কখনো তীব্র, কখনো মাঝারি দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল প্রাণিকুল। খরার কবলে পুড়ছিল বরেন্দ্রর ফসলের খেত, ঝরে পড়ছিল গাছের আম। একটু বৃষ্টির জন্য আকাশপানে চেয়ে ছিলেন চাষিরা। অবশেষে রাজশাহীতে সেই স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে।

গতকাল বুধবার ভোর ৪টা ৪৩ মিনিটে বৃষ্টি শুরু হয়। চলে ৫টা ৮ মিনিট পর্যন্ত। এই ২৫ মিনিটে ১৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কোনো এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ১০ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ‘মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত’ বলা হয়। রাজশাহীতে এই বৃষ্টিই হয়েছে। এই বৃষ্টিটাই আমের জন্য ‘টনিক’ বলছেন গবেষকেরা।

বৃষ্টির পর গাছের আম প্রাণ ফিরে পেয়েছে। চকচকে সবুজ পাতার ফাঁকে আমগুলোকেও দেখাচ্ছে সুন্দর। তাই বৃষ্টি হওয়ায় উৎফুল্ল চাষিরা।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মিলিকবাঘা গ্রামের আমচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, খরার কারণে ছোট ছোট আম ঝরে পড়ছিল। বড় হচ্ছিল না। এখন দ্রুত আম বড় হবে। ঝরে পড়বে না। এ রকম একটা বৃষ্টির জন্য আমের গুটি আসার পর থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।

বৃষ্টির পর সকালে বাগানে আম দেখতে বেরিয়েছিলেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলীম। বৃষ্টি কেমন হলো জানতে চাইলে বলেন, ‘এটা তো আমের জন্য টনিক হয়ে গেল। শক্তিবর্ধক টনিক যেমন মানুষের উপকার করে, এই বৃষ্টি আমের জন্য তা-ই। টানা খরার পর এ রকম বৃষ্টি খুব উপকারী। এখন আম দ্রুত বড় হবে। খরা হলে আমরা গাছের গোড়ায় পানি দিতে বলি চাষিদের। কিন্তু প্রাকৃতিক পানির আলাদা একটা গুণ আছে। রাজশাহীতে এবার গাছে আম কম। খরায় কিছু গুটি ঝরে গেছে। তা-ও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি আশা করছেন। কারণ, বাগান বেড়েছে। তা ছাড়া গাছে আম কম থাকলে তা আকারে বড় হয়। এখন বৃষ্টি হওয়ায় আমের বড় হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।’

বৃষ্টিতে অন্য ফসলের চাষিদেরও উপকার হয়েছে। কিছু জায়গায় ধান একটু হেলে পড়লেও ক্ষতির চেয়ে উপকার বেশি হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বোরো ধানে অনেক পানি লাগে। প্রাকৃতিক পানি পেয়ে যাওয়ায় চাষির খরচ কমল। তা ছাড়া অনেক জায়গাতেই লম্বা সিরিয়াল ছাড়া সেচের পানি পাওয়া যায় না। বৃষ্টিতে সবাই পানি পেলেন। এখন কয়েক দিন তাপমাত্রা শীতল থাকবে। টানা খরার পর এটাও কৃষির জন্য বেশ উপকারী। কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়েই এসেছে এই বৃষ্টি।

মোজদার হোসেন আরও বলেন, বৃষ্টিতে সবজিচাষিদেরও উপকার হয়েছে। যেসব এলাকায় সেচের ব্যবস্থা নেই, সেখানেও পাট ও তিলের চাষ হয়। প্রাকৃতিক বৃষ্টির অভাবে পাট ও তিলবীজ ছিটানো যাচ্ছিল না। এখন চাষিরা পাট ও তিলবীজ ছিটাবেন।

কয়েক দিন আগেই রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। বৃষ্টির পর শীতল আবহাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, গত মঙ্গলবারও রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির পর গতকাল বুধবার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাওয়া গেছে ২০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন কয়েক দিন তাপমাত্রা সহনীয় থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত