Ajker Patrika

এভাবেই বাড়ুক সচেতনতা

সম্পাদকীয়
এভাবেই বাড়ুক সচেতনতা

আমাদের দেশের সামাজিক ব্যাধিগুলোর মধ্যে বাল্যবিবাহ অন্যতম। দুর্নীতির মতো এই ব্যাধিরও যেন সেরে ওঠার নাম নেই। কিন্তু হঠাৎ কোথাও যখন এই রোগের ওষুধ পাওয়া যায়, তখন আনন্দ লাগে বৈকি। এই যেমন রাজশাহীর দুর্গাপুরের পৌর এলাকায় বন্ধ হলো ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া ১১ বছরের এক ছোট্ট মেয়ের বিয়ে। তাকে ‘বালিকা বধূ’ হওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন তারই বড় ভাই। এ খবর মনে স্বস্তি দেয়।

বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্তেই বাড়ির মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়। কিন্তু জানে আলম জনি বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানতেন। একমাত্র ছোট বোনের বিয়েতে তাই তাঁর সম্মতি ছিল না। বোনকে তিনি আরও লেখাপড়া করাতে চান। অথচ তাঁর মা-বাবা প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম নামের এক ঘটকের প্রলোভনে ১১ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দিতে চান ৩২ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে।

জনি তাঁর মা-বাবাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছেন যে এত অল্প বয়সে বোনের বিয়ে দেওয়া যাবে না। কিন্তু তাঁরা ছেলের কথা কানে না নিয়ে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। গত শুক্রবার উপায় না পেয়ে জনি থানায় যান। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও মেয়েটির মা-বাবাকে সতর্ক করে আসে। এরপরও যদি আবার বাল্যবিবাহ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক।

এ যাত্রায় তো মেয়েটি বেঁচে গেল বাল্যবিবাহের হাত থেকে। কিন্তু যাদের এই মেয়েটির মতো ভাই নেই, তারা তো বাঁচতে পারে না! চলতি বছরেই বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৩ প্রতিবেদনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাল্যবিবাহের হারে বাংলাদেশ এখনো শীর্ষে, আর বিশ্বে পঞ্চম। ২০০৬ থেকে ২০২২ সালের তথ্য তুলে ধরে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে; যা কিনা মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, মৃত্যুঝুঁকিও আছে—এসব তথ্য আমাদের শঙ্কায় ফেলে দেয়।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ে এবং ২১ বছরের কম বয়সী ছেলেরা বিয়ের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক। আবার বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা-২০১৮ অনুসারে, বিশেষ বিধানের আওতায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে।

সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহ নির্মূল এবং ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহ এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ পুরোপুরি নির্মূলের অঙ্গীকারও রয়েছে।

শুধু সরকারের অঙ্গীকার আর প্রচারণা কিংবা আইন-বিধান দিয়ে বাল্যবিবাহ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। সবার আগে পরিবারের সদস্যদেরই বুঝতে হবে যে বাল্যবিবাহ মানে স্বাস্থ্য ও মৃত্যুঝুঁকির জাল বুনে দেওয়া। তাই এই সমাজে জনির মতো ভাইদের খুব দরকার। তাঁরাই বাড়াবেন সচেতনতা, নির্মূল হবে বাল্যবিবাহ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত