Ajker Patrika

নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে বারবার হামলা কেন

রিফাত মেহেদী, সাভার (ঢাকা)
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৩৭
নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে বারবার হামলা কেন

ঢাকার সাভারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার মধ্যে দুটি ঘটনায় মামলাও করা হয়েছে। তবে মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কিংবা এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

এদিকে, নৌকার প্রার্থীরা নিজেরাই তাঁদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে দায় প্রতিপক্ষের ওপর দিতে চাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে নৌকার প্রার্থীরা তা অস্বীকার করেছেন।

গত তিন দিনে সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানা এলাকার পাথালিয়া ও শিমুলিয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ আমলে নিয়েই আশুলিয়া থানায় মামলা রেকর্ড হয়। গতকাল শনিবার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান।

এদিকে, গত শুক্রবার রাতে সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নেও নৌকা প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আমিনবাজারের সরকার বাড়ি এলাকা নৌকার প্রার্থী রকিব আহম্মেদের নির্বাচনী কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগের আমিনবাজারের নেতারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এসে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে শিমুলিয়ার বাতাইনা কলতাসুতী এলাকায় নৌকাপ্রার্থী সুরুজের নির্বাচনী অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একইভাবে তার আগের রাতে পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম চৌরাস্তা এলাকায় নৌকার নির্বাচনী অফিসে হামলার অভিযোগ ওঠে।

শিমুলিয়ার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেন হাবিবুর রহমান পালোয়ান। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৪০টি অফিস আছে। সেগুলোতে এখন আর ঝুঁকি মনে করছি না। যেহেতু মামলা করেছি।’

নৌকার হারকে ঠেকাতে প্রতিপক্ষের কর্মীদের মাঠ থেকে সরানোর জন্যই এমন মামলার আয়োজন বলে দাবি শিমুলিয়া ইউপি নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই এই কাজ করে আমাদের লোকজনের নামে মামলা দিয়েছে।’

পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন মামলার আগেই সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছিলেন নৌকার লোকজন নিজেরাই নিজেদের ক্যাম্প পুড়িয়ে অন্যদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনাগুলো অবশ্যই সাজানো নাটক। আমাদের হেনস্তা করার জন্যই এ ভাবে মামলা করা হয়েছে।’

তবে একটি মামলার বাদী ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সুরুজের কর্মী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সাজানো এমন কিছু আমরা করিনি। ভবিষ্যতেও এমন কিছু করার চিন্তাভাবনা নেই।’

এদিকে মামলার এজাহারে যাদের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দেখানো হয়েছে, বাস্তবে এমন প্রত্যক্ষদর্শী নেই। এ ব্যাপারে পাথালিয়ার ঘটনার বাদী হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এড়িয়ে যান। ওই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্বে থাকা এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কিন্তু কোনো প্রত্যক্ষদর্শী খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবগতি থাকার কথা থাকলেও কোনো প্রার্থী বা থানা-পুলিশও তা জানাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে শিমুলিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা সালেহ হাসান প্রামাণিক বলেন, ‘যাঁদের নির্বাচনী অফিসে হামলা হয়েছে, তাঁরা কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। এমনকি কেউ যদি মনে করে তাদের হয়রানির উদ্দেশ্যে এমন মামলা করা হয়েছে সেই হয়রানির শিকার হওয়া ব্যক্তিরাও কোনো অভিযোগ করেনি আমাদের কাছে। আমি এ বিষয়ে জানিই না।’

পাথালিয়া ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী অফিসে হামলার ঘটনায় কেউই কোনো অভিযোগ জানায়নি। লিখিত অভিযোগ জানালে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।

সাভার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফখর উদ্দিন শিকদার বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ না করলে আমরা আসলে কীভাবে ব্যবস্থা নেব?’

ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসেইন বলেন, ‘মামলার ব্যাপারে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

নির্বাচনী ঘটনা হলেও কেন রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অবগতি ছাড়াই মামলা নিচ্ছে পুলিশ, কেন এই সমন্বয়হীনতা-তা জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো অভিযোগ হলে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেটি ওই এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করেই আইনগত ব্যবস্থা নেন। কারও সঙ্গে সখ্য বা পক্ষপাতিত্ব করার কোনো সুযোগই নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত