Ajker Patrika

বাউফলে ইলিশ শিকারে বেড়েছে শিশুদের ব্যবহার

কৃষ্ণকান্ত কর্মকার, বাউফল (পটুয়াখালী)
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৫২
বাউফলে ইলিশ শিকারে বেড়েছে শিশুদের ব্যবহার

নিষেধাজ্ঞার সময়ে শিশুদের দিয়ে ইলিশ শিকারের প্রবণতা ক্রমশই বেড়েছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। জেল জরিমানা থেকে বাঁচার জন্য এ ধরনের কাজে সন্তানদের ব্যবহার করছেন জেলেরা। আবার কোনো কোনো ব্যক্তি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জাল ও নৌকা দিয়ে নদীতে নামিয়ে দিচ্ছেন। সম্প্রতি তেঁতুলিয়া নদীতে মৎস্য বিভাগ ও নৌ-পুলিশের যৌথ অভিযানে ১৪ অক্টোবর ২২ জন আটক হয়েছে, এর ১২ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার মা ইলিশের নির্বিঘ্নে প্রজননের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর টানা ২২ দিন মা ইলিশ বিক্রি, মজুত, শিকার ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটি অমান্য করলে রয়েছে জেল জরিমানার বিধান। জেলেরা যাতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীতে ইলিশ শিকার করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিয়মিত নদীতে টহল দেয়।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি নিষেধাজ্ঞা সময়ে ৫২ জন জেলে আটক হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৬ জন জেলের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেওয়া হলেও, বাকি ১৬ জন শিশু-কিশোর হওয়ায় মুচলেকার মাধ্যমে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সকল শিশু ও কিশোর অধিকাংশই উপজেলার চরবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন ও ভোলা জেলার রোহান উদ্দিনের চর ছাচরা এলাকার জেলে পরিবারের সন্তান। হতদরিদ্র পরিবারের অভিভাবকেরা জেল জরিমানা থেকে রেহাই পেতে এই শিশু-কিশোরদের ইলিশ ধরায় নামিয়ে দেয়। মাছ শিকার করতে গিয়ে শিশুরা যখন প্রশাসনের হাতে আটক হয় তখন প্রশাসন সার্বিক বিবেচনায় মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার কখনো কখনো অভিভাবকদের ডেকে এনে জরিমানা করে তবে ছাড়ে। এই সুযোগটা পেয়ে ওই অসাধু জেলেরা নিজ শিশু সন্তানদের নদী নৌকা জাল দিয়ে নদিতে পাঠায়। সুযোগ নেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও। টাকার প্রলোভন কিংবা জোর করে মাছ শিকারে বাধ্য করে তারা দরিদ্র পরিবারের শিশুদের।

প্রশাসনের হাতে আটক ভোলা জেলার সাচরা গ্রামের মান্নান মোল্লার ছেলে মো. রমজান (১২) জানায়, ভোলার বোরহান উদ্দিনের মহসিন নামে এক ব্যক্তি টাকার প্রলোভন দিয়ে তাদের জাল ও নৌকা দিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ শিকারের জন্য পঠিয়েছেন। একই গ্রামের মো. মুন্সি মোল্লার মো. ইয়াছিন (১২) লোকামান মৃধার ছেলে রাব্বি (১১) করিম মৃধার ছেলে মো. রিফাদ (৮) দুলাল মোল্লার ছেলে এরশাদ মোল্লাও (১০) একই কথা বলে।

বোরহান উদ্দিন উপজেলার দেউলা গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে ফয়সাল আহম্মেদ (১০) পুলিশের হাতে আটক হয়ে কাঁদতে শুরু করেছিল। তারে জিজ্ঞেস করতে আর্দ্র কণ্ঠে বলে, ‘আব্বায় রাইতে নৌকায় উডাইয়া দিছে। যা মাছ পাইলে হেইয়া দিয়া তোরে মোবাইল কিন্না দিমু। আমি হের লাইগ্যাই মাছ ধরতে আইছি।’

উপজেলার চরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে স্লোব বাংলাদেশ। এনজিওটির কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ শিশুদের দিয়ে অপরাধ করানো, যা প্রত্যক্ষভাবে অভিভাবকদের মদদে হচ্ছে, যা সত্যি দুঃখ জনক। গত দুবছর ধরে আমরা বিষয়টি লক্ষ করছি। চলতি বছর এ বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে জেলে পল্লিতে কাজ করব।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর শিশুদের দিয়ে মাছ শিকারের প্রবণতা বেশি। চলতি নিষেধাজ্ঞা সময়ে একই শিশু কয়েকবার আটক হওয়ার ঘটনা ঘটছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, শিশুদের এ ভাবে ব্যবহার করা এটা খুবই উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে জেলে পরিবারের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর সহজ উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত