Ajker Patrika

আপিল করেও মেলে না তথ্য

অরূপ রায়, সাভার থেকে
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ১৬
আপিল করেও মেলে না তথ্য

তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে ঢাকার সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে বংশী নদীর তীরের খাসজমি, অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। তবে এক বছর পার হলেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আপিল ও অভিযোগেও মেলেনি প্রতিকার।

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ৮ (১) অনুযায়ী রাষ্ট্রের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট এবং অন্য দেশের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে—এমন তথ্য ছাড়া যেকোনো তথ্য আবেদনকারীকে সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। আবেদনের ২০ কর্মদিবসের মধ্যে তা সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই আইন মানছেন না।

চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত এ প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে তথ্য চেয়ে সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ৩০টি আবেদন করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য না পেয়ে ২৪টি আপিল ও ১৫টি অভিযোগ করা হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত একটি আবেদনেরও তথ্য পাওয়া যায়নি।

সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে বংশী নদীর তীরের খাসজমি আর অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল গত বছর ডিসেম্বরে। তথ্য না পেয়ে গত ২৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করা হয়। আপিলে সাড়া না পেয়ে গত ৮ মার্চ তথ্য কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ অক্টোবর ও ৭ নভেম্বর কমিশনে ভার্চুয়াল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তথ্য দিতে নির্দেশ না দেওয়ায় তথ্যপ্রাপ্তির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কমিশনে শুনানির পর সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ এক পত্রে বংশী নদীর তীরের খাসজমি আর অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের তথ্য তাঁর দপ্তরে নেই বলে জানিয়ে দেন। ওই পত্রে তিনি জেলা রেকর্ডরুম থেকে খাসজমির তথ্য সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন। খাসজমির ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয় পৌরসভা থেকে।

তথ্য পাওয়া যায়নি সাভার ও ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে। এ বছর ওই দুই দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে এ প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য চেয়ে ১৬টি আবেদন করা হয়। তথ্য না পেয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমির হোসেনের কাছে আপিল করা হয়। তিনি চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দেন। এরপরও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে আমির হোসেন বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী কেউ তথ্যের জন্য আবেদন করলে তা দিতে হবে। সেই অনুযায়ী সাভার ও ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্য দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও তথ্য সরবরাহ না করার কারণ আমার কাছে বোধগম্য নয়। কেউ আইন অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’

খাসজমি ও অবৈধ স্থাপনার তথ্য সরবরাহ না করা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার বাকির হোসেন মৃধা বলেন, মাঠপর্যায়ে ভূমি-সংক্রান্ত প্রায় সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে। আইন অনুযায়ী সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে খাসজমি আর অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের তথ্য থাকার কথা। তাই সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ-সংক্রান্ত তথ্য না দিয়ে যে অজুহাত দেখিয়েছেন, তা তথ্য গোপন করার কৌশল।

বংশী দখলের তথ্য না দেওয়াকে প্রশাসনের উদাসীনতা হিসেবে দেখছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা। সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সহসভাপতি রহিম উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, খাসজমি ও অবৈধ দখলদারদের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কার্যত উদাসীন। প্রশাসনের এই ভূমিকা খতিয়ে দেখা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত