Ajker Patrika

হয়ে গেল আরেকটি নির্বাচন

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮: ১৬
হয়ে গেল আরেকটি নির্বাচন

আরও একটি নির্বাচন হয়ে গেল। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করলেও নিবন্ধিত বাকি দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। তাতে কোথাও কোথাও নির্বাচনী আমেজ দেখা গেছে। তবে যেসব নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী যথেষ্ট শক্তিশালী, সেই সব এলাকায় অন্য দলগুলো তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম প্রায় গুটিয়ে নিয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হলে সাংবিধানিকভাবে এই নির্বাচনের একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। কিন্তু আদতে তা গণতন্ত্রকে সংহত করবে কি না, সেই প্রশ্ন এড়ানো যাবে না।

আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করছি, পৃথিবীর বহু গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ খুব একটা কাজ করছে না। ক্যাডারভিত্তিক দল হিসেবে যে দলগুলোর সুনাম ছিল, সেই দলগুলোও একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে আপস করে নিয়েছে। দলের মধ্যে গণতন্ত্রহীনতা রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য কতটা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বস্তুত এখন নিষ্ঠা ও সততা থাকলেই দলের নেতা হওয়া যায় না। রাজনৈতিক ময়দান গণতন্ত্রের জন্য সংকীর্ণ হতে হতে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যাকে গণতন্ত্র বলা হলেও ‘গণতন্ত্র’ বলে ভাবতে ভয় লাগে।

আমরা লক্ষ করে দেখেছি, এবার নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের (বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের) কোনো কোনো নেতা এমন সব অগণতান্ত্রিক আচরণ করেছেন, যা একটি দলের নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ইত্যাদির বিপরীত। এহেন অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কতটা আস্থা রাখা যায়, সে ব্যাপারে জনগণ সন্দিহান।

বিশ্ব এখন একটি ভয়াবহ সময় পার করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ পুরো পৃথিবীকেই অস্থিতিশীল করে রেখেছে। আলাদাভাবে বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, মুদ্রাস্ফীতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে দেশের সাধারণ নাগরিকেরা বিপাকে পড়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে সেটা কতটা সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।

প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন যাঁরা, তাঁদের কি আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে? যে ব্যাংকাররা লাভবান হওয়ার বিনিময়ে এই দুর্বৃত্তদের টাকা পাচারের সুযোগ করে দিয়েছেন, তাঁদের কি বিচার হবে? দেশে কি পরমতসহিষ্ণুতার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ক্ষমতাসীন দল কোনো পদক্ষেপ নেবে? পুলিশ বাহিনী কি নিরপেক্ষভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে কাজ করবে, নাকি ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি করবে?

এ রকম অজস্র প্রশ্ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নির্বাচনে তাঁর দলকে জয়ী করে আনলে তিনি তাঁর সরকারের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের করা ভুলত্রুটির কোনো তালিকা কি করা হয়েছে?তালিকা ধরে ধরে ভুলগুলো সত্যিই কি শুধরে নেওয়া সম্ভব হবে? সেই তালিকাটি কি সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে?

অপরদিকে, যারা নির্বাচন বর্জন করল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহিংসতার জন্ম দিল, তারা আসলে কাদের সমর্থনে ক্ষমতায় আসবে বলে ভেবেছিল? জনসমর্থন থাকলে এই সময়ে তারা আন্দোলনের তীব্রতায় সরকারকে তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করতে পারত। কিন্তু তারা জনগণের ওপর নির্ভর না করে নির্ভর করেছে সরকারের অজনপ্রিয়তার ওপর। নির্ভর করেছে বিদেশি শক্তির জ্যাঠামির ওপর।

নিজেরা এমন কোনো পথ দেখায়নি যে পথটাকে জনগণ সমর্থন করতে পারত। জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়েছে, কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই বিরোধী দল ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে। শুধু ক্ষমতার লোভই বিরোধী রাজনীতির চালিকাশক্তি হয়েছে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মতো অনেক ভুলই করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই ভুলগুলো চিহ্নিত করে আওয়ামীবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা কঠিন ছিল না। কিন্তু বিএনপি বা সমমনা দলগুলো সেই সুযোগ কাজে লাগায়নি। তাতে স্পষ্ট হয়েছে, বিএনপি চেয়েছে ক্ষমতার পরিবর্তন। নিজ দল ক্ষমতায় আসুক, সেটাই তাদের মূল দাবি। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারা কী এমন পরিকল্পনার জন্ম দেবে, যা আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে ভালো, সেটা আর তারা প্রকাশ করেনি।

বিএনপি ক্ষমতায় এলে কীভাবে দুর্নীতির মোকাবিলা করবে, কিংবা জনগণের সেবার জন্য কোন পথ বেছে নেবে, তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই বিএনপির নেতাদের কথাবার্তায়। শুধু সরকারের সমালোচনা করা হবে, অথচ নিজেরা কী করে সেই সংকট মোকাবিলা করবেন, সেটা বলা হবে না—এটা কখনোই জনগণের মনে আস্থা আনতে পারে না। তাই বিএনপি নির্বাচন বর্জন করল কি করল না, তা নিয়ে সাধারণ জনগণ খুব বেশি পীড়িত হয়েছে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।

ক্ষমতায় থাকলে সরকার জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। সরকারের ভেতর যাঁরা দুর্নীতিবাজ, তাঁদের কার্যকলাপ প্রকাশিত হয়ে পড়ায় সরকারও বিপদে পড়ে। তখন সেই দুর্নীতিবাজদের যথাযথ শাস্তি দিয়ে আবার জনগণকে বোঝাতে হয়, দুর্নীতি যিনিই করে থাকুন না কেন, তাঁর কোনো নিস্তার নেই। এটা যদি পালন করা হয়, তাহলে দলের মধ্যে থাকা দুর্নীতিবাজেরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন না।

তৃণমূল পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসে। জনগণের সঙ্গে তাঁদের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। আর যদি দুর্নীতির দিকে চোখ বন্ধ করে রাখা হয়, তাহলে জনগণ সরকারকে আর যোগ্য সরকার বলে মনে করে না। আওয়ামী লীগকে সে কথা গভীরভাবে ভাবতে হবে।

২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে পরের পাঁচ বছর বিএনপি যেভাবে জঙ্গিবাদের মদদ দিয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, হাওয়া ভবনের মাধ্যমে যেভাবে সরকারি কাজও নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে, তাতে তাদের ভাবমূর্তিও ভালো নয়। ক্ষমতায় এলে লুটপাটের রাজনীতির বিপরীতে কোনো দিগ্‌দর্শন তারা দিতে পারবে, তার কোনো স্পষ্ট সমাধান দেখা যায়নি।

২০০১ সালের নির্বাচনে যে ইশতেহার দিয়েছিল বিএনপি, তার কতটা তারা বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল, সে কথাও এখন উঠে আসবে। দেখা যাক, ইশতেহারে থাকা কোন অঙ্গীকারগুলো তারা পালন করেনি। ইশতেহারে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিদের সম্পদের হিসাব দেওয়া হবে।

সেটা আর দেওয়া হয়নি। বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণ হয়নি, রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও-টিভির স্বায়ত্তশাসন হয়নি, স্থায়ী পে-কমিশন হয়নি, গঙ্গার পানি চুক্তির পরিবর্তন হয়নি, পার্বত্য চুক্তির নতুন সমাধান হয়নি, সবার জন্য বিদ্যুৎ হয়নি। এ ছাড়া প্রবাসী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ও তৈরি পোশাকশিল্প মন্ত্রণালয় হয়নি।

আওয়ামী লীগের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোও কি রাখা হয়েছে? জনগণ তো এই প্রশ্ন করতেই পারে। সেই প্রশ্নের উত্তরও আশাপ্রদ নয়।জনগণ তাহলে কী করবে? কার ওপর ভরসা রাখবে?

সফল নির্বাচন কাকে বলা হয়, তা নিয়ে ঐকমত্য নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, ২ শতাংশ ভোট পড়লেই নির্বাচন হয়ে যাবে। কথাটা মন্দ নয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই স্পষ্ট হবে, ২ শতাংশ ভোট পড়লে নির্বাচন হয়ে যাবে, সেটা যেমন ঠিক, তেমনি সেই নির্বাচনে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষের অংশগ্রহণ যে থাকে না, সেটাও তো ঠিক। গণতন্ত্র তাতে কীভাবে রক্ষা হয়? এ প্রশ্নটি আগামী দিনের একটি বড় প্রশ্ন হয়ে উঠতে পারে। গণতন্ত্র রক্ষা করা মানে মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা, তা মনে রাখা খুব জরুরি।

রাজনীতি এক আজব খেলার মাঠ। যে আওয়ামী লীগ একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেই আওয়ামী লীগই একসময় বলল, তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থার আর দরকার নেই। যে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর ছিল, সেই বিএনপি এখন চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রাজনীতির আজব খেলার মাঠটিতে রাজনৈতিক দলগুলো খেলছে। আর জনগণ যেন তাদের পায়ের কাছে ফুটবল হয়ে পড়ে রয়েছে। যে যখন পারে, সে-ই ফুটবলরূপী জনগণকে লাথি মারে।

নির্বাচন বর্জন করলে তাতে যেমন জনগণের কোনো প্রত্যাশা পূরণ হয় না, তেমনি যেনতেনভাবে নির্বাচন করলেও তাতে লাভবান হয় না জনগণ। এই সহজ সত্যটা রাজনীতির দিকপালেরা বুঝতে চান না।

আরেকটি নির্বাচন হয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু আমজনতার জীবনযাপন পদ্ধতিতে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারলে নির্বাচন শুধুই ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলগুলোর ‘টাগ অব ওয়ার’ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তাতে আমজনতার প্রত্যাশা পূরণ হবে না।

লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত