Ajker Patrika

তালিকা করেই দায় শেষ

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ২৪
তালিকা করেই দায় শেষ

পরিবেশ দূষণের অভিযোগে বরিশালে গত বছর ৯৬টি ইটভাটাকে অবৈধ ঘোষণা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরটি ওই বছরের শুরুতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে জেলার বাবুগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে। বছর শেষে সেই অবৈধ ইটভাটাগুলো আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জে অর্ধশত অবৈধ ইটভাটায় কাঠ পুড়ছে দেদারসে। চরের মাটি কেটে সাফ করে ফেলছেন তাঁরা। ফসলি জমি কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোর অধিকাংশই অবৈধ ড্রাম চিমনির। যদিও পরিবেশ দূষণকারী এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর এমনটাই অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

মেঘনা তীরের হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউপির কাইসমা বাজার সংলগ্ন মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকস। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রহীন এ ইটভাটা ড্রাম চিমনি টাইপের। অবৈধ এ ইটভাটায় দেদারসে পুড়ছে কাঠ। পাশেই মেসার্স একতা ব্রিকসের অবস্থাও একই। মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী কাঞ্চন ব্যাপারী বলেন, ‘ড্রাম চিমনি থাকলে সরকার সব বৈধ করে দেবে? পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকলেও এতে আয় হচ্ছে না? সারা বাংলাদেশে ইটভাটায় কাঠ পোড়ায়, শুধু হিজলা না।’

হিজলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইয়ামিন মুন্সি বলেন, ‘উপজেলায় ৩৪টি ইটভাটা আছে। কিছু আছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। কিছুর ছাড়পত্র নাই। অনেক ইটভাটায় কাঠ পোড়ায়। এগুলোর অধিকাংশই ড্রাম চিমনি। প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অভিযান দিলেও আইনের ফাঁক গলে এসব ইটভাটা চলছে।’

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হিজলার চর থেকে মাটি কেটে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর ও মুন্সিগঞ্জ এলাকায় ইটভাটার জন্য পাঠানো হচ্ছে। চলছে দেদারসে কাঠ পোড়ানো কর্মযজ্ঞ।

এ প্রসঙ্গে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তাঁরা কেন হিজলায় অভিযান করেন না। এখানে অনেক ইটভাটা।’ পরিবেশ রক্ষায় তিনি সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরাজ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের গত বছরের ঘোষিত জেলার ৯৬টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে এখনো অনুমোদনহীনভাবে সচল রয়েছে ৫০ টির অধিক ইটভাটা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ ইটভাটার মধ্যে হিজলায় প্রায় ২০ টি, মেহেন্দীগঞ্জের কাজিরহাটসহ আশপাশের ইউনিয়নে প্রায় ১০ টি, বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী, ফরিদপুরে প্রায় ১২ টি, বাবুগঞ্জে ৫ টি, বানারীপাড়ার বাইশারীতে ৪টি ড্রাম চিমনির ইটভাটা রয়েছে।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী, জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করার সব ইটভাটাই অবৈধ এবং দূষণকারী। এগুলো কাঠ পোড়ায় ১২০ ফিট ড্রাম চিমনির মাধ্যমে। আইন অনুযায়ী কাঠ পোড়ালে ৩ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩ বছর জেল অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। যদিও এ বছর এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। কবে নাগাদ অভিযান পরিচালিত হবে তাও জানায়নি অধিদপ্তরটি।

গত বছর ঘোষিত অবৈধ ইটভাটা চালু করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘তাতে কি হয়েছে।’ পরিবেশ দূষণকারী এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আ. হালিমকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ না করে কেটে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, ‘গত বছর যেসব ইটভাটা অবৈধ ঘোষণা করেছে সেগুলো ভেঙে মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন আবার চালু হওয়ায় ইটভাটাগুলো আবার বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে।’

বাপার রফিকুল আলম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আ. হালিমের বরাত দিয়ে বলেন, ‘গত বছর কিছু ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে দণ্ড দেওয়া হয়। সেই দণ্ডপ্রাপ্তদের তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাতারাতি বিনা শুনানিতে এবং নথি তলব না করেই অবমুক্ত করে দিয়েছিলেন। যে কারণে অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়েছে।’ তবে তিনি মনে করেন, দূষণকারী এসব ভাটা জরুরিভাবে ধ্বংস করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...