Ajker Patrika

বিষখালির মাটি ইটভাটায়

বরগুনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০৯: ২৮
বিষখালির মাটি ইটভাটায়

বরগুনার পাথরঘাটায় ছয়টি ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য বিষখালি নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। এ ছাড়া এসব ভাটার ধোঁয়ায় বায়ুদূষণে অতিষ্ঠ ওই এলাকার বাসিন্দারা।

গত সোমবার সরেজমিনে পাথরঘাটা কাকচিড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাইনচটকি ফেরিঘাট ধরে উত্তর দিকে কালিরচর পর্যন্ত ছয়টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় ইট তৈরির জন্য খননযন্ত্র ব্যবহার করে নদীর তীরে জেগে ওঠা চরের মাটি কেটে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। ওই মাটি ভাটায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। মাটি কাটার জন্য প্রতিটি ভাটায় একাধিক খননযন্ত্র রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের খুব কাছ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধ। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষিজমিও বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বাইনচটকি এলাকার বাসিন্দা আবদুল হক বলেন, গাঙ্গে ভাটার সময় মাটি কাটা শুরু করে। নদীতীরের চরগুলো জাগতে পারে না। তার আগেই মাটি কেটে নিয়ে যায়।

নাসির মিয়া নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই ইটভাটার কারণে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দূষণের কারণে ঠিকমতো নিশ্বাস নেওয়া যায় না। বাঁধ ব্যবহার করে ইট নেওয়ার কারণে বাঁধের অবস্থাও খারাপ হয়ে গেছে। এ ছাড়া গরমের দিনে ধুলাবালি ঘরবাড়িতে এসে পড়ে। ভাটার কারণে গাছপালায় ফল ধরে না, জমিতে ফসল ফলে না ঠিকমতো।’

নুরুল আমিন নামের একজন বলেন, বাইনচটকি এলাকার আরএসবি ব্রিকসে এলাকার মানুষের জমি একপ্রকার জোর করে কিনে নেওয়া হয়েছে। কাউকেই সঠিক দাম দেওয়া হয়নি। আর যে পরিমাণ জমি কিনেছেন দখলে নিয়েছেন তার তিনগুণ। এখন আবার চর দখল করে মাটি কেটে ইট বানাচ্ছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নদীর তীরবর্তী আরএসবি ব্রিকসের মালিক গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, ‘যে জায়গার মাটি কাটা হচ্ছে, সেই জায়গা আমার রেকর্ড করা সম্পত্তি। এখানে নদীর কোনো জমি নেই। নদীতীরের মাটি কাটার তথ্য সত্য নয়।’

ওই এলাকার আল মামুন এন্টারপ্রাইজ ব্রিকসের মালিক ও বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন দাবি করে বলেন, ‘আমার নিজস্ব জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। নদী বা সরকারি কোনো জমি সেখানে নেই।’

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলায় প্রায় ৫০টির মতো ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ইটভাটার ইট তৈরির অনুমতিপত্র নেই। তবে যেসব ইটভাটার অনুমতিপত্র আছে, তারা সরকারি নিয়মনীতি মেনেই ইট তৈরি করছে।

বিআইডব্লিউটিএর বরগুনা নদীবন্দরের কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, বাইনচটকি এলাকা থেকে কালির চর পর্যন্ত ছয়টি ইটভাটা রয়েছে। নদীতে চর জেগে উঠলেই ভাটার মালিকেরা চর দখল করে নেন। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, নদীর চর ও তীর থেকে মাটি কেটে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। যদি নদীর তীর থেকে মাটি কাটা হয় এবং চর দখল করে ইটভাটা গড়ে তোলার কারণে যদি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়, তাহলে ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত