Ajker Patrika

জাপানে উচ্চশিক্ষায় মেক্সট স্কলারশিপের খুঁটিনাটি

মুসাররাত আবির
আপডেট : ২২ মে ২০২২, ১৫: ০৪
জাপানে উচ্চশিক্ষায় মেক্সট স্কলারশিপের খুঁটিনাটি

প্রতিবছরই মেক্সট বৃত্তির জন্য বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী জাপানে আবেদন করেন। এরপরও দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী সঠিক গাইডলাইন পান না। তাই শিক্ষার্থীদের করা সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ২০২০ সালের মেক্সট বৃত্তিপ্রাপ্ত এম সায়হাম হোসেন।

মেক্সট বৃত্তি

উচ্চশিক্ষার জন্য এখন অনেক শিক্ষার্থীই জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে চান। জাপান সরকার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়ন করতে আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেক্সট বৃত্তি দেয়। বাংলাদেশি নাগরিকেরা বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাস ও জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। জাপান সরকারের দেওয়া বৃত্তিগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে সম্মানিত। গবেষণার মাধ্যমে বৃত্তিপ্রাপ্তির দেশ এবং জাপানের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতু হয়ে ওঠা মানবসম্পদকে উৎসাহিত করা এবং উভয় দেশ ও বৃহত্তর বিশ্বের উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যেই দেওয়া হয় এই বৃত্তি।

সাধারণত দুইভাবে পাওয়া যায় এ বৃত্তি। একটি হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে। আরেকটি হচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইছেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে। স্নাতক চার-পাঁচ বছর, স্নাতকোত্তর দুই-তিন বছর ও পিএইচডি তিন-চার বছরের হয়ে থাকে।

যেসব শাখায় স্কলারশিপ পাওয়া যাবে

১. সোশ্যাল সায়েন্সেস ও হিউম্যানিটিজ। এর দুটি ভাগ রয়েছে: এ আর বি। এ-র মধ্যে রয়েছে ল, পলিটিকস, পেডাগগি, সোশিওলজি, লিটারেচার, হিস্ট্রি আর জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ। বি-তে রয়েছে ইকোনমিকস আর বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।

২. ন্যাচারাল সায়েন্সেসের তিনটি ভাগ রয়েছে। এ, বি ও সি। এ-তে সায়েন্স (ম্যাথমেটিকস, ফিজিকস, কেমিস্ট্রি), ইলেকট্রিক এবং ইলেকট্রনিক স্টাডিজ, মেকানিক্যাল স্টাডিজ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, কেমিক্যাল স্টাডিজ ও বায়োটেকনলজি। বি-তে রয়েছে অ্যাগ্রিকালচারাল স্টাডিজ, হাইজিনিক স্টাডিজ নার্সিং ও বায়োলজি। মেডিসিন আর ডেন্টিস্ট্রি পড়ছে সি-এর মধ্যে।

৩. সাধারণত কোর্সগুলো চার বছরের হলেও মেডিকেল ডিগ্রি কোর্সটি ছয় বছরের। উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ের নাম প্রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া যাবে। সবগুলো বিষয় একটি ভাগের হতে হবে। শুধু যাঁরা ফার্স্ট প্রেফারেন্স সি থেকে দেবেন তাঁরা অন্য ভাগ থেকে পরের প্রেফারেন্স দিতে পারবেন, যেহেতু সি-তে সাবজেক্ট আছে দুটি।

৪. কলেজ অব টেকনোলজির মধ্যে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং, মেটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার অ্যান্ড সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদিতে এই বৃত্তি দেওয়া হবে। অধিকাংশ কোর্সের মেয়াদ তিন বছরের। তবে মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং সাড়ে চার বছর সময় লাগবে।

৫. যাঁরা স্পেশালাইজড ট্রেনিং কলেজে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক, তাঁরা টেকনোজি, পারসোনাল কেয়ার এবং নিউট্রিশন, এডুকেশন ও ওয়েলফেয়ার, বিজনেস, ফ্যাশন এবং হোম ইকোনমিকস, কালচার ও জেনারেল এডুকেশনের মতো নানা বিষয়ে পড়তে পারবেন। সাধারণত এসব কোর্সের মেয়াদ দুই বছর।

সুযোগ-সুবিধা

  • রিসার্চে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পাবেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ইয়েন।
  • মাস্টার্সে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পাবেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ইয়েন।
  • ডক্টরালে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পাবেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ইয়েন।
  • স্নাতকে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ১ লাখ ১৭ হাজার ইয়েন মাসিক ভাতা হিসেবে পাবেন।
  • পরীক্ষা ফি, টিউশন ফি স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
  • বাংলাদেশ থেকে জাপানে যাওয়ায়-আসার বিমান ভাড়া স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ বহন করবে।

আবেদনের যোগ্যতা

  • স্নাতক শিক্ষার্থীদের বয়স ১৭-২৫ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং ১২ বছরের শিক্ষাজীবন থাকতে হবে। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য বয়স ৩৫-এর কম হতে হবে এবং ১৬-১৮ বছরের শিক্ষাজীবন থাকতে হবে।
  • কোনো প্রার্থী একাধিক প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন না। যেকোনো একটি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  •  বৃত্তির আবেদন ফরম।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
  • একাডেমিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট।
  • ডিন বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের রেকোমেন্ডেশন লেটার।
  • আইইএলটিএস বা ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট।
  • পাসপোর্ট বা এনআইডি।
  • স্টাডি প্ল্যান।
  • আবেদনকারীর শিক্ষক/ পরামর্শদাতারা/নিয়োগকারী কর্তৃক দুটি সুপারিশ পত্র।
  • পাসপোর্ট স্ক্যান কপি।

গবেষণার শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে লাগবে:

  •  সিভি অধ্যয়নের পরিকল্পনা/উদ্দেশ্য বিবৃতি।
  • প্রাথমিক বিষয়বস্তুতে প্রয়োগের অনুপ্রেরণা, শিক্ষা/গবেষণা ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি।
  • একাডেমিক থিসিস বা প্রাসঙ্গিক প্রকাশনা।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: http://www.shed.gov.bd/site/view/scholarship/Apply

আবেদনপত্র দাখিলের নিয়ম

প্রাথমিক পর্যায়
আবেদনকারীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অনলাইন লিংকে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি সাবমিট করতে হবে। আবেদনকারীকে ওই অনলাইন লিংকে তথ্য দেওয়ার পর পূরণকৃত ওই ফরম, সার্টিফিকেট বা মার্কশিট, পাসপোর্ট/ ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ, আইইএলটিএস/ টোফেলের সার্টিফিকেটের কপি এবং সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্টের সত্যায়িত ফটোকপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঠিকানায় জমা দিতে হবে। 

প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে English Language Proficiency অথবা Japanese Language Proficiency-এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রার্থীদের প্রাথমিক বাছাই চূড়ান্তকরণের ক্ষমতা এ কমিটি সংরক্ষণ করে। 

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, কোনো প্রার্থী একাধিক প্রোগ্রামে আবেদন করলে তাঁর আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে; অর্থাৎ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট/ মাস্টার্স/ ডক্টরাল যেকোনো একটি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া পূরণকৃত তথ্য ছক ও ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রযোজ্য সার্টিফিকেট/ মার্কশিট ও অন্যান্য যাবতীয় ডকুমেন্টের হার্ড কপি মন্ত্রণালয়ে জমা না দেওয়া হলে কোনো আবেদন বিবেচনা করা হবে না। 

দ্বিতীয় পর্যায়
প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদনপ্রাপ্তির পর যাচাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রাথমিকভাবে প্রার্থী মনোনয়ন করা হবে। প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। জাপান দূতাবাস কর্তৃক চূড়ান্ত মনোনয়নের পর মেক্সটের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। 

জাপান দূতাবাসের প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের পর প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। জাপানিজ ও ইংরেজি ভাষার ওপর লিখিত পরীক্ষাটি হবে। সিলেকটেড প্রার্থীদের সেকেন্ড স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে সিলেক্ট করা হবে। 

যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন
প্রথমেই ঠিক করে নিন কিসের মাধ্যমে আবেদন করবেন। যদি দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে চান, তাহলে বিগত সালের প্রশ্নগুলো অনুশীলন করুন। ইন্টারনেটেই প্রশ্নগুলো পেয়ে যাবেন। 

যাঁরা স্নাতক পড়ার জন্য দূতাবাস থেকে শর্টলিস্টেড হবেন, তাঁদের ইংরেজি ও জাপানিজের ওপর লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিষয় নিলে অতিরিক্ত গণিত আর বিজ্ঞান বিষয় পছন্দ করলে অতিরিক্ত গণিত এবং বিজ্ঞানের দুটি (পদার্থ, রসায়ন জীববিজ্ঞান) বিষয়, মোট পাঁচটি বিষয়ের ওপর লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। এর মধ্যে রসায়ন অবশ্যই দিতে হবে। ক্যালকুলেটর ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। তবে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের কেবল ইংরেজি ও জাপানিজ ভাষার পরীক্ষায় বসতে হবে। 

দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করলে ব্যাচেলর পর্যায়ের ক্ষেত্রে সাধারণত জাপানিজ ভার্সনে পড়ানো হয়। তাই এই বৃত্তি পেয়ে জাপানে আসার পর প্রথম এক বছর ভাষা শিখে তারপর ব্যাচেলর ডিগ্রির পড়া শুরু করতে হয়। 

আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদন করলে সাধারণত লিখিত পরীক্ষার দরকার নেই। কিন্তু আপনাকে আগে ভার্সিটিতে একজন সুপারভাইজার ঠিক করতে হবে। অনেক সময় সুপারভাইজাররা স্কাইপে ছোটখাটো একটি ইন্টারভিউ নিতে পারেন। আবার উনি হয়তো আপনার গবেষণার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন। আর স্নাতকের ক্ষেত্রে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করলেই হবে। সে ক্ষেত্রে আবেদনপত্র রচনার দিকে ফোকাস রাখুন।

জাপানিজ অংশের উত্তর করতে হবে দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। তবে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি সেকশনে ভালো করতে হবে। জাপানিজে পরীক্ষায় মূলত আপনার জাপানিজ লেভেলটা যাচাই করা হয়। 

পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিগত সালের প্রশ্নগুলো দেখে সেই টপিকগুলো ভালোমতো পড়ুন। আর সাক্ষাৎকার অংশে নিজের সম্পর্কে কী কী বলবেন তা আগেই ঠিক করে নিন। জাপান, জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও আপনার ডিগ্রি সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নেবেন। অর্থপূর্ণ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। 

অনুলিখন: মুসাররাত আবির

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫) ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কাঁপল ইসরায়েল, তেহরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি থেকে বিদায় নিচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত