Ajker Patrika

আশ্রয়ণের ঘরে পশুপাখির বাস

শাহীন রহমান, পাবনা
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১০: ৫৯
আশ্রয়ণের ঘরে পশুপাখির বাস

বরগুনার আমতলী উপজেলায় আশ্রয়ণের ৫৫টি ব্যারাকের ৫৫০টি ঘর সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। লতাগুল্ম ও আগাছায় ভরে গেছে এসব ঘর। মানুষের বদলে এখন শিয়াল–কুকুর বাস করছে সেখানে। ঘরের দরজা, জানালা ও চালার টিনগুলো মরিচা ধরে খসে খসে পড়ছে।

জানা গেছে, নদীভাঙনে গৃহহারা ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর আবাসনের জন্য ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ও নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গৃহ নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ ছাড়া ২০০৭ সালে সিডরের পর জাপান সরকারের সহায়তায় নির্মাণ করা হয় ‘ব্যারাক হাউস’ নামে আরেকটি প্রকল্প।

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় ৮টি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫৫টি ব্যারাকে ৫৫০টি ঘর রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ সকল ঘর সংস্কার না করায় বর্তমানে তা মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ঘরে এখন আর কোনো পরিবার বাস করে না।

গুলিশাখালীর কালিবাড়ীতে ১০টি ও হলদিয়া ইউনিয়নের সেনের হাটের পূর্বপাশে নির্মিত ঘরে ১০টি পরিবার থাকার কথা এখন কেউ নেই। ব্যারাক দুটি খালি পরে আছে। এই সুযোগে কালিবাড়ি আশ্রয়ণের ঘরের সব টিন খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

একই অবস্থা আমতলী সদর ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের স্লুইচ গেট সংলগ্ন আশ্রয়ণের। এখানে ১০টি পরিবারের থাকার কথা, আছে ১ টি। এখানেও দরজা, জানালা ও চালার টিন খুলে নিয়ে গেছে চোর। কেবল ফাঁকা স্ট্রাকচার পড়ে আছে। একই অবস্থা আমতলী সদর ইউনিয়নের চারঘাট, গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া এবং হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়ায় আশ্রয়ণের ঘরের।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়ার আশ্রয়ণের ঘর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখানে ১৫টি ব্যারাকে ১৫০টি পরিবারের বাস করার কথা। আছে মাত্র ১০–১২টি পরিবার। ভয়াবহ কষ্টের কারণে তারাও এ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে পারেন যে কোনো সময়। নির্মাণের পর সংস্কার না করায়, দরজা জানালা খুলে পড়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরে টিন মরিচা ধরে পড়ে গিয়ে লোহার স্ট্রাকচারগুলো কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার ওপর গুল্মলতা আর বুনো ঝোপে ভরে গেছে চারপাশ।

এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এসব ঘর মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বেশির ভাগ ঘরই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়ণে বসবাসরত রাজিয়া বেগম বলেন, ‘ঘরের অবস্থা এতই খারাপ যে মোরা এহন আর এই ঘরে থাকতে পারি না। চাল দিয়া খালি পানি পরে। হেইয়ার লইগ্যা ছাদে পাতা আর পলিথিন দিয়া ঘরে থাকতে হয়।’

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়ণের সভাপতি সুলতান মৃধা বলেন, ‘আশ্রয়ণের ঘর এহন ছাড়া বাড়ি অইয়া গ্যাছে। ঘরের টিন, লোহা, খুডি সব নষ্ট অইয়া যাওয়ায় সব মানুষ ঘর ছাইর‍্যা চইল্যা গ্যাছে। মানুষ না থাহায় আশপাশে ঝোপ জঙ্গল অইয়া ভইরর‍্যা গ্যাছে। এহন এই ঘরে মানুষের বদলে সাপ, খাডাশ আর শিয়াল থাহে। মোরা ভয়তে এহন আশ্রয়ণে যাই না।’

আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, ‘নির্মাণের পর আশ্রয়ণের ঘরগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। এগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুর রহমান বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্কারের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়া গেলে এবং বরাদ্দ পাওয়া গেলে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

আমতলীর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার হোসেন বলেন, ‘পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো যায় কিনা সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত