Ajker Patrika

রাজনীতির বিদেশনির্ভরতা

সম্পাদকীয়
রাজনীতির বিদেশনির্ভরতা

স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপের পরও জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।

স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে বিদেশিদের নাক গলানোর বিষয়টি যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য বিদেশি দূতাবাসগুলোতে কারণে-অকারণে ঘনঘন যাতায়াতের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বিদেশিদের কথা বলার সুযোগ আমরা নিজেরাই করে দিই। অনেক দেশেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আছেন। কিন্তু তাঁরা তো কোনো দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন না। এমনকি কোনো দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেন না। অথচ বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকেরা সুযোগ পেলেই নানা অনুষ্ঠানে যান, তাঁদের অতিথিও করা হয়, তাঁরা নানা বিষয়ে কথা বলেন এবং আমাদের দেশের গণমাধ্যমে তা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা বড় দলগুলো বিদেশিদের কাছে নালিশ জানাতে দ্বিধা করে না। রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে পরিবর্তন না এলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ পুরোনো ঘটনা, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিতে যখন সামরিক বাহিনী অংশগ্রহণ শুরু করে, তখন থেকেই বাংলাদেশ কী করবে, কীভাবে করবে—সব নির্দেশনাই আসতে থাকে বিদেশ থেকে। এখন হস্তক্ষেপের চিত্র কিছুটা পরিবর্তন হলেও কমছে বলা যাবে না। দেখা যাচ্ছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা কিছুদিন ধরে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। দেশের রাজনীতিবিদেরা যখনই সরকারের বাইরে থাকেন, তখনই ‘নালিশ’ নিয়ে গিয়ে হাজির হন বিদেশিদের কাছে। এটা এখানকার রাজনৈতিক বাস্তবতা। রাষ্ট্রদূতদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ শিষ্টাচারবহির্ভূত একটি কাজ। তবে শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কূটনীতিকেরা যেমন একদিকে দায়ী, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকাও সমানভাবে দায়ী। আগামী নির্বাচন নিয়ে অন্য দেশের সহযোগিতা চেয়ে কার্যত সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বিএনপি। এটার সুযোগ নিচ্ছে বিদেশিরা। 
বিদেশি কূটনীতিকদের কথাবার্তা যখন যে দলের পক্ষে যায়, তখন সেই দল সেটা নিয়ে খুশি থাকে, যার বিপক্ষে যায় তার হয় মন খারাপ। এ অবস্থা কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা নিশ্চিত নয়।

সবশেষ অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের দিকেই রাজনীতিসচেতন সবার মনোযোগ। ৯ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসেবে বিশেষ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের ফলাফল নিয়েই বাংলাদেশে আগ্রহ বেশি। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার অতি উৎসাহের পটভূমিতে ভারতের অবস্থান কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ কতটা ফলদায়ক হবে, সেটা নাকি দিল্লির কলকাঠি নাড়ার ওপরই নির্ভর করে বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত