Ajker Patrika

মৃত্যুর মুখে বড়াল নদ

চারঘাট প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ৩৫
মৃত্যুর মুখে বড়াল নদ

রাজশাহীর চারঘাট-বাঘার ওপর দিয়ে বয়ে চলা একসময়ের প্রমত্ত বড়াল নদ এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুম ছাড়া সারা বছর থাকে পানিশূন্য। এ নদের বুকজুড়ে ধু ধু বালুচর। কোথাও চাষাবাদ, কোথাও গরু চরানো কিংবা ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার দৃশ্য চোখে পড়ে। অথচ মাত্র তিন যুগ আগেও এ নদের নৌপথে চলত ফেরি ও লঞ্চ। এ নদের তীরে গড়ে ওঠা ১ হাজার ১৭৮টি অবৈধ স্থাপনা এবং পানিদূষণের ১৪টি উৎস শনাক্ত করেছে প্রশাসন।

বড়াল নদের দৈর্ঘ্য ২১০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১২৫ মিটার। উৎপত্তি রাজশাহীর চারঘাট থেকে পদ্মা নদীর শাখা হিসেবে। জানা যায়, আশির দশকের আগের দিকে বড়াল নদে বড় ফেরি ও লঞ্চ চলাচল করত। তবে আশির দশকে বড়ালের উৎসমুখে স্লুইসগেট নির্মাণ এবং নানা জায়গা দখল ও অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণের ফলে পানির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। বৃহৎ এ নদের দুরবস্থার কারণে শুধু নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়নি, মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজারো পরিবারেও চলছে দুর্দিন। নদে পানি না থাকার ফলে কৃষিনির্ভর এ এলাকার সেচকাজও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বড়ালপাড়ের বাসিন্দা মিয়াপুর গ্রামের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ হারেজুল ইসলাম বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগেও নদের এত খারাপ অবস্থা ছিল না। ’

বড়ালের পাড়ের পুঠিমারী এলাকার বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে এই নদের মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালাতাম। আর এখন বর্ষাকাল ছাড়া পানি থাকে না। তাই মাছও নেই। সাত-আট বছর আগে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি। জীবিকার তাগিদে এখন অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই।’

চারঘাট বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, বড়ালে স্লুইসগেটসহ বেশ কয়েকটি বড় সেতু নির্মাণের ফলে নদের কিছু অংশ সংকুচিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া অবৈধ দখল ও পলিতে ভরাট হয়ে গেছে নদ। এখন পুরোদস্তুর ফসলের মাঠ। নদী খনন করে এর পানিপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে দ্রুত কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

বড়াল রক্ষা আন্দোলনের জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব মিজানুর রহমান বলেন, মুসা খাঁ ও নন্দকুঁজা নদী এবং চলনবিলে পানি সরবরাহ করে বড়াল। অথচ বড়াল নিজেই আজ পানিশূন্য। অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত স্লুইসগেট এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নদী শাসনের ফলে বড়ালের এই দৈন্যদশা।

বড়াল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান বলেন, এ নদের তীরে গড়ে ওঠা ১ হাজার ১৭৮টি অবৈধ স্থাপনা এবং পানিদূষণের ১৪টি উৎস শনাক্ত করেছে প্রশাসন। বড়াল নদ পর্যবেক্ষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বড়ালে পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ ছাড়া বড়াল দখলমুক্ত করতেও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত