Ajker Patrika

রং বলে দেবে পুষ্টিগুণ

মইনুল হাসান 
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৩২
রং বলে দেবে পুষ্টিগুণ

ফলমূল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ খাবারের ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক রং আছে। এসব রং শুধু চোখের স্বাচ্ছন্দ্য আর সৌন্দর্যের জন্যই নয়; বরং রং দেখেই বলে দেওয়া যাবে খাবারের পুষ্টিগুণ। এসব রংকে উদ্ভিদরঞ্জক বা প্ল্যান্ট পিগমেন্ট বলা হয়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এগুলো বেশ শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আমাদের শরীরের কোষগুলোকে বিষাক্ত উপাদান থেকে রক্ষা করতে এসব ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ পুষ্টি উপাদানের বিকল্প খুব কমই আছে।

সবুজ

এই রঙের শাকসবজি ও ফলমূলে পাওয়া যায় লুটিন, ক্লোরোফিল ও ইনডোল।

লুটিন: চোখের স্বাস্থ্যের জন্য এটি ভালো। এ ছাড়া লুটিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। রক্ত, ত্বক ও কোষের ক্ষয় কমায়।

উৎস: বাঁধাকপি, শসা, মটরশুঁটি, সবুজ শিম।

ক্লোরোফিল: দেহকোষ থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করতে সাহায্য করে এটি। ক্লোরোফিল লোহিত রক্ত কণিকা ও কোলাজেনের পরিমাণ বাড়ায়। মন ও শরীরকে চাঙা রাখতে সাহায্য করে।

উৎস: সব ধরনের সবুজ, হলুদ পাতার শাকসবজি, লাউ, ব্রকলি।

ইনডোল: ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে এটি। এ ছাড়া শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।

উৎস: ব্রাসেলস স্প্রাউট, ব্রকলি, চীনা বাঁধাকপি।

কমলা-হলুদ

কমলা ও হলুদ রঙের শাকসবজি ও ফলমূলে পাওয়া যায় ক্যারোটিন ও জ্যান্থোফিল।

রোটিন: আলফা, বিটা ও ডেল্টা ক্যারোটিন ভিটামিন এ-এর ভালো উৎস। ক্যারোটিনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ফলমূল ও শাকসবজিতে এটি থাকা মানেই ক্যানসারের ঝুঁকি কম থাকা। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখে ক্যারোটিন। ত্বকের উজ্জ্বলতা ও লাবণ্য বাড়িয়ে তারুণ্য ধরে রাখে এটি। তা ছাড়া দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের মিউকাসের সুরক্ষা দেয়।

উৎস: কমলা ও হলুদ রঙের ফলমূল ও সবজিতে পাওয়া যাবে। গাজর, কমলা, আম, ক্যাপসিকাম, মিষ্টি আলু, মিষ্টিকুমড়া, পাকা বরই, বাঙ্গি, বেরিজাতীয় ফল ইত্যাদি।

জ্যান্থোফিল: ভিটামিন এ-এর উৎস। চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, ক্যানসার প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়।

উৎস: সব ধরনের হলুদ-কমলা রঙের ফলমূল, লাল রঙের মাছ, ডিম ইত্যাদি।

লাল

এই রঙের শাকসবজি ও ফলমূলে পাওয়া যায় লাইকোপেন ও অ্যান্থোসায়ানিন।

লাইকোপেন: একধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ক্যানসার ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়।

উৎস: টমেটো।

অ্যান্থোসায়ানিন: ক্যানসার, বার্ধক্যজনিত রোগ ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমানো ছাড়াও স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষা দেয়; অর্থাৎ এটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্থোসায়ানিন লাল রঙের ফলমূল, শাকসবজির মতো নীল ও বেগুনি রঙের খাবারেও থাকে।

উৎস: আঙুর, চেরি, সবুজ চা, বেগুন, লাল বাঁধাকপি, গোল আলু, লাল মুলা, লাল বরবটি, লাল মিষ্টি আলু।

নীল-বেগুনি

নীল-বেগুনি রঙের শাকসবজি ও ফলমূলে পাওয়া যায় অ্যান্থোসায়ানিন ও রেসভারেট্রল।

অ্যান্থোসায়ানিন: নীল-বেগুনি রঙের ফলমূল ও শাকসবজিতে এটি পাওয়া যায় বেশ ভালো পরিমাণে।

উৎস: কালোজাম, করমচা, জামরুল, কলা, আপেল কুল, লটকন ও ডালিমে এটি পাওয়া যায়।

রেসভারেট্রল: অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ বলে ক্যানসারের ঝুঁকি ও প্রদাহ কমায়, হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, ধমনির সুরক্ষা দেয় ও আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধ করে।

উৎস: আঙুর, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি ও চকলেট।

সাদা

এই রঙের শাকসবজি ও ফলমূলে পাওয়া যায় অ্যালিল সালফাইড ও অ্যানথক্স্যান্থিনস।

অ্যালিল সালফাইড: রক্তনালি, হৃদ্‌যন্ত্রের সুস্থতায় এবং রোগ প্রতিরোধে এমন সালফার যৌগ খুব উপকারী।

উৎস: রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি।

অ্যানথক্স্যান্থিনস: রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিছু কিছু ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয়।

উৎস: রসুন, পেঁয়াজ, ফুলকপি, আলু, আদা, শালগম ও কলা।

বর্তমান পৃথিবীতে দুটি শীর্ষ ঘাতক রোগ হচ্ছে হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসার। এ দুটি রোগের ঝুঁকি কমিয়ে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ পুষ্টি উপাদানগুলো যেমন বর্ণিল, তেমনি সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু করে জীবনকে রাঙিয়ে দিতেও অতুলনীয়।

লেখক: ফ্রান্সপ্রবাসী গবেষক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত