Ajker Patrika

একজন মেসির গল্প

সম্পাদকীয়
একজন মেসির গল্প

টান টান উত্তেজনা নিয়ে যাঁরা বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলাটি দেখেছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে আর্জেন্টিনার অবিস্মরণীয় জয়ের কথা জেনে গেছেন। এ রকম চিত্তাকর্ষক বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই মনে রাখার মতো। একদিকে মেসি, অন্যদিকে এমবাপ্পে—ফাইনালকে বানিয়ে ফেলেছিলেন রণক্ষেত্র। এবং শেষ সময়ে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্তিনেজের অসাধারণ স্নায়ুর জোর আর্জেন্টিনাকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপার অধিকারী করল।

ফাইনাল নিয়ে বহুদিন বহু কথা হবে। আমরা আজ বলব লিওনেল মেসির কথা। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বকাপ প্রতিবারই অধরা থেকে গেছে তাঁর। অনেকেই মনে করে থাকেন, বয়সের কারণে এটাই মেসির শেষ বিশ্বকাপ। ফলে, আর্জেন্টিনার এই ফুটবলারের ওপর প্রত্যাশার চাপ ছিল। টুর্নামেন্টের প্রথম খেলাতেই সৌদি আরবের কাছে পরাজয়ের পর অনেকেই আর্জেন্টিনাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন।কিন্তু কী অসাধারণ নৈপুণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ফিরে এল আর্জেন্টিনা, সে যেন এক রূপকথার গল্প। আর সে গল্পে অনেক পার্শ্বনায়ক থাকলেও অনবদ্যভাবে মূল নায়ক লিওনেল মেসি।

ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে আমরা আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের সেরা দল হিসেবে পাই ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে। প্রথমবার মারিও ক্যাম্পেস এবং দ্বিতীয়বার ডিয়াগো ম্যারাডোনার ছিল নেতৃত্বের ভূমিকা। সে ভূমিকাতেই মেসিকে দেখতে চেয়েছিলেন আর্জেন্টাইনরা।ম্যারাডোনার শৈল্পিক ক্রীড়াশৈলীর কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আর্জেন্টিনার ভক্তদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। ক্লাব ফুটবলে মেসির অনবদ্য নৈপুণ্য, একাধিকবার ব্যালন ডি’অর প্রাপ্তি তাঁকে নিয়ে যে রূপকথার জন্ম দিয়েছিল, তার বাস্তব অনুবাদ হচ্ছিল না কেবল আর্জেন্টিনার হয়ে খেলার সময়। জাতীয় দলে মেসির পদচারণ শুরু হয়েছিল ২০০৬ সাল থেকে। তখনো বিশাল অভিজ্ঞতার ঝুলি তাঁর কাঁধে নেই। প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় হিসেবেই পরিচিত তিনি। ম্যারাডোনার পর আর একজন ফুটবল জাদুকর এসেছেন—এমনটাই ছিল তাঁকে নিয়ে ভাবনা।

মেসির ফুটবল-জীবনের শুরুতে প্রশিক্ষক জেরার্দো সোলারিও রেখেছিলেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলের জন্য তিনিই গড়ে তুলেছিলেন মেসিকে। সে সময় মেসির বয়স ১৮। এরপর তিনি মেসিকে বুঝিয়েছিলেন, তিন-চারটি গোলের ব্যর্থ সুযোগ সৃষ্টি করার চেয়ে একটি গোল করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে মেসির সম্পর্ক ছিল শিক্ষক-ছাত্রের মতো। ২০১০, ২০১৪, ২০১৮ পর্যন্ত প্রতিবারই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মিলন ঘটেনি। এবং একসময় মনে হয়েছিল, লিওনেল মেসির পক্ষে বিশ্বকাপ জয়ী হওয়া আর সম্ভব নয়। সেই অসম্ভবই সম্ভব হলো ২০২২ সালে এসে।

এখানে শিক্ষণীয় ব্যাপার একটাই—‘একবার না পারিলে দেখ শতবার, পারিব না এ কথাটি বলিও না আর।’ চর্চা ও পরিশ্রম মানুষকে পৌঁছে দেয় তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে, মেসির বর্ণাঢ্য ফুটবল-জীবন তারই সাক্ষ্য দেয়। খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে ওঠার আগে বার বার পা হড়কে পড়ে যাওয়ার যে অভিজ্ঞতা, সেটাই মানুষকে খাঁটি সোনায় পরিণত করে। মেসি হচ্ছেন তেমনই একজন খেলোয়াড়। মেসির বিশ্বকাপ প্রাপ্তি একটি সফলতার গল্প হিসেবে টিকে থাকবে বহুদিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত