Ajker Patrika

করোনায় বাল্যবিবাহের শিকার রাজবাড়ীর ৯৩১ শিক্ষার্থী

শামিম রেজা, রাজবাড়ী
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ০১
করোনায় বাল্যবিবাহের শিকার রাজবাড়ীর ৯৩১ শিক্ষার্থী

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ করে দেয়। পরে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে যে সব ছাত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত রয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-প্রতিনিধিরা। খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন শিক্ষার্থীদের অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। এ সংখ্যায় মেয়ে শিক্ষার্থীরাই বেশি। এর মূল কারণ হিসেবে দারিদ্র্যকে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা।

তবে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা না থাকা, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মনিটরিংয়ের অভাব এবং প্রশাসনের নজরদারির কারণে বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে স্বামীর ঘরে চলে গেছেন এ শিক্ষার্থীরা।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, করোনা শুরুর পর থেকেই এই জেলায় বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছেন ৯৩১ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সদর উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ের ৪০৬ জনের বাল্যবিবাহ হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিকে ২৪৩ জন, মাদ্রাসার ১৬১ জন ও কলেজের ২ জন রয়েছে। পাংশা উপজেলায় ১৩২ জনের মধ্যে মাধ্যমিকে ৩২ জন, মাদ্রাসার ৭০ জন ও কলেজের ৩০ জন। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৫৭ জনের মধ্যে মাধ্যমিকে ১১১ জন ও মাদ্রাসার ৪৬ জন। কালুখালী উপজেলায় ৭২ জননের মধ্যে মাধ্যমিকে ৬২ জন ও মাদ্রাসার ১০ জন। গোয়ালন্দ উপজেলায় ১৬৪ জনের মাধ্যমিকে ৮০ জন, মাদ্রাসার ৮০ জন ও কলেজের চারজন। সব মিলিয়ে জেলার ১৫০টি মাধ্যমিকে ৫২৮ জন, ৭৩টি মাদ্রাসার ৩৬৭ জন ও ২৯টি কলেজের ৩৬ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে।

সংস্কৃতিকর্মী সঞ্জয় ভৌমিক বলেন, বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও পরিবারের দারিদ্র্য। কারণ দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করা অনেক কষ্টসাধ্য। সেই সঙ্গে সমাজে হেয় হওয়ার ভয়েও অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে তারা দেখতে পান অনেক ছাত্রী শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকে। তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় তাদের সঙ্গে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাঁরা জানান, দারিদ্র্য, অভিভাবকদের অসচেতনতা, নিরাপত্তাহীনতার কারণে এই বিয়েগুলো হয়েছে। এর প্রতিকারের জন্য তারা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা সেমিনার করেছেন। বাল্যবিবাহ রোধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত