Ajker Patrika

সচ্ছলতা এখন অতীত বংশীতীরের জেলেদের

অরূপ রায়, সাভার
সচ্ছলতা এখন অতীত বংশীতীরের জেলেদের

নদীপারে ফাঁকা ফাঁকা বাড়িঘর, ঘাটে ঘাটে নৌকা আর ঘরে ঘরে সচ্ছলতা ছিল একসময়ের সাভারের পোড়াবাড়ি জেলেপাড়ার চিত্র। এখন সেই জেলেপাড়ায় সরু রাস্তা, ঘিঞ্জি বাড়ি আর বসতির সঙ্গে বেড়েছে অভাব-অনটন।

স্থানীয়রা জানান, আশির দশক থেকে জেলেপাড়ার চিত্র পাল্টাতে শুরু করে। জনসংখ্যা বাড়ার কারণে বাড়তে থাকে বসতি। অন্যদিকে কলকারখানার তরল বর্জ্যের প্রভাবে নদী ও জলাশয়ের মাছ কমতে থাকলে জেলেদের আয় কমে যায়।

প্রায় চার যুগ আগে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পোড়াবাড়ির জেলেপাড়ায় চলে আসেন ধামরাইয়ের সুঙ্গর গ্রামের নিরঞ্জন রাজবংশী। তখন গ্রামটিতে মাত্র ৩০টি জেলে পরিবারের বসবাস ছিল। পাশের বংশী নদী আর আশপাশের জলাশয়ে মাছ ধরে ভালোই চলত তাঁদের সংসার। কলকারখানার তরল বর্জ্যের প্রভাবে মাছের উৎপাদন কমে গেলে বিপাকে পড়েন তাঁরা।

নিরঞ্জন রাজবংশী বলেন, কারখানার তরল বর্জ্যে পানি দূষিত হওয়ায় আশির দশক থেকে বংশী নদী ও জলাশয়ে মাছ কমতে থাকে। মাছের অভাবে তাঁদের আয় কমে যায়। এ অবস্থায় সংসার চালাতে অনেকে ভিন্ন পেশায় চলে যান। তিনি নিজেও পেশা বদল করে মাছের ব্যবসা শুরু করেন।

একসময় মাছ ধরে সংসার চালাতেন জেলেপাড়ার গণেশ রাজবংশী। মাছের অভাবে আয় কমে যাওয়ায় ২০ বছর আগে পেশা বদল করে তিনি গ্রামেই মুদিদোকান দেন। ওই দোকানের আয়েই চলছে তাঁর সংসার।

গণেশ রাজবংশী বলেন, তাঁর গ্রামে কয়েক হাজার লোকের বসবাস। হাতের কাছে বিভিন্ন পণ্য পেয়ে তাঁর দোকান থেকেই তাঁরা কেনাকাটা করেন। বিক্রি বেশি হওয়ায় লাভও ভালো হয়।

নদী ও জলাশয় মাছশূন্য হয়ে পড়ায় কষ্টে আছেন জেলেপাড়ার ভাসানি রাজবংশী। তাই চৌদ্দপুরুষের পেশা ছেড়ে তিনিও ব্যবসা করার কথা ভাবছেন। ভাসানি রাজবংশী বলেন, ‘পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও বাবা-মার অমতে তা করবার পারি নাই। তাই ছোট বয়স থিকাই বাবার লগে মাছ ধরতে শুরু করি। মাছ ধরলেও অভাব কী জিনিস তখন তা বুঝতাম না। কিন্তু অহন যে মাছ পাওয়া যায় তাতে সংসার চালানডাই কষ্ট। তাই মাছ ধরা ছাইড়া ব্যবসা করবার কতা ভাবতাছি। কিন্তু ট্যাকার অভাবে পারতাছি না।’

গ্রামের কার্ত্তিক চন্দ্র রাজবংশী বলেন, বংশী নদীতে একসময় সারা বছর ধরে বেলে, বোয়াল, কাজুলি, পুঁটি, পাবদা, চিংড়ি, মলা ও রুইসহ প্রায় সব ধরনের দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন বর্ষা মৌসুমে জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ এই তিন মাস ছাড়া নদীতে মাছ পাওয়া যায় না। ঘোলা পানি ও স্রোতের কারণে ওই তিন মাস কাজুলি, ট্যাংরা আর গুইলশা পাওয়া যায়। বর্ষার পরে কারখানার বর্জ্যে পানি কালো হয়ে উঠলেই নদী আবার মাছশূন্য হয়ে পড়ে।

ব্যবসায়ী সুজন রাজবংশী বলেন, তাঁর পূর্বপুরুষেরা একসময় বংশী ও আশপাশের জলাশয়ে মাছ ধরতেন। নদী ও খাল-বিল মাছশূন্য হয়ে পড়লে তাঁর দাদা পেশা বদল করে মাছের ব্যবসা শুরু করেন। সেই থেকে তাঁরা স্থানীয় বিভিন্ন আড়ত থেকে মাছ কিনে এনে সাভারের নামাবাজারে বিক্রি করে আসছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মাসুম মোল্লাহ বলেন, জেলেরা অনেক কষ্টে আছেন। মাছের অভাবে তাঁদের আয় কমে গেছে। এ অবস্থায় জাল ও নৌকার জন্য তাঁদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু বয়স্ক ভাতা ছাড়া তাঁরা আর কোনো সরকারি সহায়তা পান না। গ্রামের রাস্তার অবস্থাও খারাপ। গ্রামের ভেতর দিয়ে হাঁটার কোনো রাস্তা নেই। একটি ইটের রাস্তার জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু ঠিকাদার নানা অজুহাতে কাজ করছেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৯৪৭ থেকে ২০২৫: ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ফলাফল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত