Ajker Patrika

অযত্নে প্রবাজপুর শাহী মসজিদ

মাসুদ পারভেজ, কালীগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ২৫
অযত্নে প্রবাজপুর শাহী মসজিদ

মুঘল আমলে নির্মিত সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের ঐতিহাসিক প্রবাজপুর শাহী মসজিদ। মুসলিম স্থাপত্যের একটি নিদর্শন এটি।

দেশ ও বিদেশের অনেক পর্যটক এখনো মসজিদটি দেখার জন্য ও নামাজ আদায়ের জন্য ভিড় করেন। জানা যায়, ১১০৪ হিজরি সনের ১৯ রমজান তৎকালীন ধুলিহর পরগনায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ। কথিত রয়েছে মসজিদটি জ্বীনরা তৈরি করেছে। তখন ছিল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামল।

জানা যায়, আওরঙ্গজেবের নির্দেশে প্রধান সেনাপতি পারভেজ খাঁ তাঁর সেনাবাহিনীর নামাজের জন্য যমুনা নদীর তীরে মসজিদটি নির্মাণ করেন। প্রধান সেনাপতি পারভেজ খাঁ এই মসজিদটি নির্মাণ করায় তাঁর নামানুসারে ওই গ্রামের নাম হয়েছে প্রবাজপুর এবং মসজিদটির নামকরণ করা হয় প্রবাজপুর শাহী মসজিদ। দীর্ঘদিন যথাযথ পরিচর্যা না থাকায় মসজিদটি অনেকটা পরিত্যক্ত স্থাপনায় পরিণত হয়।

১৯৬৫ সালে স্থানীয় মুকুন্দপুর গ্রামের সোহরাব আলী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে মসজিদটি নামাজের জন্য উপযোগী করেন। দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটির বহির্বিভাগের দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৩৯ ফুট ৮ ইঞ্চি। মসজিদটির অভ্যন্তরে ২১ ফুট ৬ ইঞ্চির বর্গাকৃতির একটি নামাজের জায়গা রয়েছে। মসজিদের দেয়ালগুলো ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি থেকে ৭ ফুট পুরু। আর মসজিদের প্রধান দরজাটি ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি প্রশস্ত। মসজিদটিতে ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি বারান্দা ছিল যা এখন আর নেই। মসজিদটিতে মোট ১০টি দরজা থাকলেও বর্তমানে দরজার নিচের অংশে পাতলা প্রাচীর নির্মাণ করে জানালার আকৃতি করা হয়েছে। তিনটি অলংকৃত মেহরাবও রয়েছে মসজিদটিতে। চার গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী হিসেবে এখনো সবার নজর কাড়ে।

ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে মসজিদটি ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইন অনুযায়ী স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে প্রত্নতত্ব ও জাদুঘর বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে নির্মিত এই মসজিদটি প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে।

স্থানীয়রা জানান, ৫০০ বছর আগে মুঘল আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহী মসজিদে স্থানীয় মুসুল্লীরা ছাড়াও বহু ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এখানে নিয়মিত ওয়াক্তের নামাজ এবং জুমার নামাজ আদায় করেন।

প্রাচীন এই মসজিদের অবকাঠামো দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর যাবৎ একের পর এক বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে মসজিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদের মূল গম্বুজসহ ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ পাশের দেয়ালের ইট খসে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে ফাটল দিয়ে মসজিদের ভেতর পানি প্রবেশ করেছে। এর ফলে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদের ভেতরের অংশে কারুকার্যখচিত দেয়াল ও গম্বুজে শেওলা জমেছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আছেন মুসল্লিরা।

মসজিদের মোতাওয়াল্লী এসএম আব্দুল হামিদ এফসিএ (৬৫), কমিটির উপদেষ্টা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালীগঞ্জ ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম (৬৫), অ্যাড. আলী হায়দার (৬৭) জানান, মসজিদের অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়টি লিখিতভাবে প্রতততত্ত্ব অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্যে করা যায়নি। পরে ঐতিহাসিক নিদর্শন এই মসজিদটি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত