Ajker Patrika

টেকনাফ স্থলবন্দর: অবৈধ ডলার-বাণিজ্যে দুই ব্যাংক

শাহরিয়ার হাসান টেকনাফ (কক্সবাজার) থেকে ফিরে
আপডেট : ০৮ মে ২০২৩, ১০: ২৪
টেকনাফ স্থলবন্দর: অবৈধ ডলার-বাণিজ্যে দুই ব্যাংক

কক্সবাজারের টেকনাফে দুটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত দরে ডলার বিক্রি করে সেই অর্থ গোপন করার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ডলার সংকটের সুযোগে পছন্দের কিছু লোকের মাধ্যমে ফরেন ডিমান্ড ড্রাফটের (এফডিডি) সিরিয়াল-বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে নেমেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে একটি ব্যাংকের সহকারী শাখা ব্যবস্থাপককে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়েছে।

অন্য ব্যাংকের এফডিডি লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে দুটি ব্যাংকেরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। জানা যায়, ডলার সংকটের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো এলসি (ঋণপত্র) খোলা বন্ধ রাখলেও টেকনাফ স্থলবন্দরে ব্যবসা চলছিল। সেখানকার ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পণ্য খালাস করতে এফডিডি খুলে থাকেন। তাঁরা শুধু ওই দুই ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকেই এফডিডি খোলার সুযোগ পান।

একজন ব্যবসায়ী তাঁর লাইসেন্সের বিপরীতে প্রতিদিন ৩০ লাখ ও ৫০ লাখ টাকার সমমূল্যের ডলারের এফডিডি খুলতে পারেন। আগে যেকোনো ব্যবসায়ী প্রতিদিন এফডিডি করতে পারলেও ডলার সংকটের পর তালিকা করে কিছু লোককে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এই সুযোগে ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা শুরু করেন তালিকা-বাণিজ্য। ক্ষমতা দেখিয়ে ও টাকার বিনিময়ে একটি চক্র তালিকা নিয়ে তা প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে কয়েক লাখ টাকায় বিক্রি করেন। একপর্যায়ে লোভ হয় ব্যাংক দুটির কর্তৃপক্ষেরও। চাহিদা থাকায় তারা নির্ধারিত দামের চেয়ে ডলারপ্রতি ৭-৮ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করে বাড়তি অর্থ গোপন করতে থাকে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংকের তদন্তাধীন বিষয়ে আমরা কথা বলি না। তদন্ত শেষ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তখন জানাতে পারব।’

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংকের টেকনাফ শাখার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ডলার কারসাজি করে কর্মকর্তারা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রেখেছেন। পাশাপাশি এফডিডি করতে চাওয়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া মোটা অঙ্কের টাকা ব্যাংকের বিশেষ হিসাবে স্থানান্তর করেছেন।

সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার এফডিডির অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টেকনাফ শাখার এফডিডি নিয়ে অভ্যন্তরীণ অডিট চলছে। কাজ শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক দিন আগে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না।’

এই প্রতিবেদক গত মঙ্গলবার সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখায় গিয়ে দেখতে পান, ব্যাংকটির তদন্ত কমিটির প্রধান ও প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম (অডিট) সাইফুল ইসলাম সেখানে তদন্ত করছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডলার সিন্ডিকেটের ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। সেই তদন্ত করতে এমডি তাঁকে সরেজমিনে পাঠিয়েছেন। তদন্ত শেষে ঢাকায় ফিরে প্রতিবেদন দেবেন।

এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে ফোন করা হলে তিনি এসএমএস পাঠাতে বলেন। দু-তিন দফা বার্তা বিনিময় হলেও প্রশ্ন করার পর কোনো জবাব দেননি। এরপর ফোন করা হলেও ধরেননি।

কারসাজির শুরু যেভাবে 
দেশে ডলার সংকটের পর স্থলবন্দরে এই দুই ব্যাংকে এফডিডি একসঙ্গে হতো না। কখনো ৩৫০ জন লাইসেন্সধারী সোনালী ব্যাংকে এফডিডি করতে পারতেন। আবার কখনো এবি ব্যাংকের ৫৫০ জন লাইসেন্সধারী সুযোগ পেতেন। অবশ্য কিছু ব্যবসায়ী দুই ব্যাংকেরই লাইসেন্সধারী ছিলেন। দুই শাখা পালা করে এফডিডি কার্যক্রম চালানোর কারণে একচেটিয়া মুনাফার সুযোগ তৈরি হয়। তবে ব্যাংকগুলো ১৫-২০ জনকে এফডিডির সুযোগ দিত বলে জানা গেছে। 
ডলারে দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় এবি ব্যাংক গত ২৮ মার্চ এফডিডি করা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। পরে এপ্রিলে তা ১৮ দিন চালু রাখে সোনালী ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৫-২০ জনের যে চক্র, তার বাইরে কেউ তখন সোনালী ব্যাংকে এফডিডি করার সুযোগ পেতেন না। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ব্যাংকটির সহকারী শাখা ব্যবস্থাপক নুরুল বশর প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে নিজের মতো করে তালিকা তৈরি করতেন। সে অনুযায়ী প্রতিদিন ১৫-২০ জনকে টাকার বিনিময়ে এফডিডি করার সুযোগ করে দিতেন। পরে ২ লাখ টাকা বেশি নিয়ে তাঁরা সেই ডলার অন্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করতেন। নিরুপায় হয়ে ব্যবসায়ীরা তা কিনে বন্দর থেকে পণ্য ছাড়িয়ে ক্ষতির মুখে পড়তেন। পরে ব্যবসায়ীদের হইচইয়ের মুখে প্রধান কার্যালয় বিষয়টির তদন্তে নামে।

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসে নুরুল বশরকে বান্দরবানে বদলি করা হয়। অবশ্য নুরুল বশর দাবি করেন, এই দায় তাঁর একার নয়। গত বুধবার তিনি বলেন, শুরুতে নিজেরা সিরিয়াল দিতে পারলেও পরে সবকিছু প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে করেছেন।যে তালিকা প্রধান কার্যালয় থেকে আসত, সে অনুযায়ী শাখা ব্যবস্থাপকের নির্দেশে এফডিডি করা হতো।

নুরুল স্বীকার করেন, তিনি যতটুকু দোষ করেছেন, সে জন্য তাঁকে বদলি করা হয়েছে। তালিকায় কাদের নাম রাখা হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানকার অনেক ব্যবসায়ী ওপর মহলে তদবির করতেন। তাঁদের নাম তালিকায় রাখা হতো। এর বাইরেও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেমন এমপির লোকজনের নামেই প্রতিদিন চারটি করে এফডিডি করতে হতো।

এভাবে তালিকা তৈরি করার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দু-একটা নাম বলা হয়ে থাকতে পারে। হয়তো ওখান থেকে (শাখা) আরও বাড়িয়ে নিজেদের মতো করে করা হয়েছে।’

এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ 
এবি ব্যাংকের টেকনাফ শাখার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যাংকটি প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এফডিডি বাবদ অতিরিক্ত ২ লাখ টাকা নিয়েছে। এই টাকা রাখার জন্য একটি হিসাব নম্বর ব্যবহার করলেও টাকা জমা করার স্লিপ বা রসিদ ব্যাংকে রেখে দিত। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিক্রিয়া দেখালে সিস্টেম আপডেট করার অজুহাতে ডলার ছাড়া বন্ধ করে দেয় ব্যাংকটি। অবশ্য তার আগের এক মাসে দিনে ৪০ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়া হয়। এরপরই তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা যায়, এবি ব্যাংকের প্রায় ৫৫০ জন লাইসেন্সধারীর মধ্যে ১৫-২০ জন প্রতিদিন এফডিডির বিশেষ সুবিধা পেতেন।

সুবিধাভোগী কয়েকজন জানান, স্বাভাবিকভাবে কোনো ব্যবসায়ী যখন ৩০ হাজার ডলার ড্রাফট করতেন, তখন ডলারের সরকারি দর অনুযায়ী ৩০ লাখ টাকার মতো দিতে হতো। কিন্তু একসময় সোনালী ব্যাংকে ড্রাফট-সুবিধা বন্ধ থাকায় সব ব্যবসায়ী এবি ব্যাংকের শরণাপন্ন হলে একচেটিয়া ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠানটি। তারা ডলারপ্রতি ৭-৮ টাকা বাড়িয়ে নিতে থাকে। তখন ৩০ হাজার ডলারের এফডিডি করতে বাড়তি প্রায় ২ লাখ টাকা দিতে হয় একটি নির্দিষ্ট হিসাব নম্বরে।

অনুসন্ধানে টাকা জমা নেওয়ার একাধিক স্লিপ থেকে ওই হিসাব নম্বর (জিআই এসি ৪০০১৮৭০১০০০৫০) পাওয়া গেছে। জানা যায়, এটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়েরই হিসাব নম্বর। ১ মার্চের একটি রসিদে দেখা যায়, সেদিন ব্যাংকটি ডলারের দর ধরেছিল ১১২ টাকা, কিন্তু প্রকৃত দর ছিল ১০৪ টাকা ৪৫ পয়সা।

ব্যবসায়ীদের সেদিন ৩০ হাজার ডলার এফডিডি করতে বাড়তি দিতে হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৩ টাকা। ২২ মার্চের আরেকটি রসিদে দেখা যায়, ব্যাংকটি সেদিন ডলার বিক্রি করে ১১৩ টাকা ৬ পয়সা দরে। যদিও নির্ধারিত দাম ছিল ১০৫ টাকা ১০ পয়সা। সেদিন ৩০ হাজার ডলারের এফডিডি করতে একজন ব্যবসায়ীকে বাড়তি দিতে হয় ২ লাখ ৫৬ হাজার ২৮৬ টাকা। এভাবে ১৫-২০ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকা বাড়তি নেওয়া হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই ব্যাংক ছাড়া এফডিডি করার সুযোগ না থাকায় ব্যবসা চালিয়ে যেতে অতিরিক্ত টাকা দিয়েও আমরা এফডিডি করতাম। তা না হলে পণ্য বন্দরে পচে যেত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এবি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কম ডলার দেওয়ায় তাঁরা প্রবাসী আয় থেকে ডলার কিনে তা ব্যবসায়ীদের দিতেন। তাই ডলার কেনার খরচ বেশি পড়া এবং লাভ করতে গিয়ে দাম বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল।

দুই ছাত্রীর নামেও লাইসেন্স
গত ১৭ এপ্রিল সোনালী ব্যাংকে এফডিডি করা ১৫ জনের তালিকায় দেখা যায়, স্থানীয় এক কলেজশিক্ষকের কলেজপড়ুয়া দুই মেয়ের নামে লাইসেন্সের বিপরীতে দুটি এফডিডি করা হয়। জানা যায়, তাদের নামে বন্দরে সেই মাসে কোনো পণ্য আসেনি।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘কাগজপত্র ঠিক হয়ে আমাদের কাছে এলে তাঁদের নামে লাইসেন্স করে দিই। সেগুলো তাঁরা কীভাবে সংগ্রহ করেন বা তাঁরা প্রকৃত ব্যবসায়ী কি না, সে বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’

বন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘যেভাবে ব্যাংক দুটো এফডিডি করতে দিচ্ছে, এভাবে ব্যবসা করা যায় না। বন্দরটা একদম নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া সাধারণ কোনো ব্যবসায়ীই ভালো নাই।’ ব্যবসায়ী আসিফুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক দুটি কাউকে বুকে রাখে, আবার কাউকে পিঠে রাখে। এবি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মুনজুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে সবকিছু প্রধান অফিসকে জানিয়েই করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত