Ajker Patrika

শতাধিক গ্রাহকের মুনাফা বন্ধ

নওগাঁ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ২০: ২৮
শতাধিক গ্রাহকের মুনাফা বন্ধ

নওগাঁ সঞ্চয় অধিদপ্তর কার্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতির মামলা চলায় ১১১ জন গ্রাহককে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমানতকারীদের অভিযোগ তাঁদের ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে দুই বছর ধরে কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না। তাঁদের মূলধনের টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।

সঞ্চয় অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুনে বিভাগীয় অডিটে বেশ কিছু গ্রাহকের সঞ্চয়ের প্রায় ৫ কোটি টাকার হিসাবে গরমিল ধরা পড়ে। বিভাগীয় তদন্তে বেরিয়ে আসে, আগের বছর ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নওগাঁ সঞ্চয় অফিসে ৬২ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র কেনার জমা ভাউচার জালিয়াতি করে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় তৎকালীন জেলা সঞ্চয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন গত বছরের ১৫ জুন ওই কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক)।

মামলার তদন্ত ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেন ছাড়াও ওই কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও এই টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত। এমনকি মামলার বাদী সাবেক সঞ্চয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মেলে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় আরও গ্রেপ্তার হন রংপুর বিভাগীয় সঞ্চয় অফিসের সাবেক উপপরিচালক মহরম আলী, নওগাঁ সঞ্চয় অফিসের উচ্চমান সহকারী হাছান আলী ও অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেন।

এদিকে ওই ৬২ জন গ্রাহক ছাড়াও সঞ্চয় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সঞ্চয়পত্র কিনে দুর্ভোগে পড়েছেন আরও ৪৯ জন গ্রাহক। সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে প্রকৃত ভাউচারে সঞ্চয়পত্র কিনলেও সঞ্চয় অফিস থেকে বলা হচ্ছে, ওই সব গ্রাহকের নামের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো টাকা জমা হয়নি। এই পরিস্থিতি গত বছরের ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় ভুয়া ভাউচার চিহ্নিত হওয়া ৬২ জন গ্রাহক ও প্রকৃত ভাউচারে টাকা জমা দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা না হওয়ায় ৪৯ জন গ্রাহকের ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের মূলধন ও মুনাফার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনার কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না ওই ১১১ জন গ্রাহক।

ভুক্তভোগী আব্দুল জলিল বলেন, ‘লভ্যাংশ তুলতে গিয়ে হঠাৎ জানতে পারি আমার সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকাই জমা হয়নি, এ জন্য মুনাফা উত্তোলন বন্ধ। দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন সঞ্চয় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের।’

আরেক ভুক্তভোগী সাবেক সেনাসদস্য সাইদুর রহমান বলেন, ‘পেনশনের টাকা জমা রেখেছিলাম। এখন মুনাফাও পাচ্ছি না, মূলধনও ফেরত পাচ্ছি না। খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে নওগাঁ সঞ্চয় অফিসের বর্তমান সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ১১১ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের হিসাব আপাতত স্থগিত করা রয়েছে। টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।

এদিকে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত দুই বছরেও শেষ করতে পারেনি দুদক।

দুদকের আইনজীবী মোজাহার হোসেন মোল্লা বলেন, দুদক এই মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর দুই বছরের মধ্যে দুজন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছেন। এসব কারণে মামলাটির তদন্ত শেষ হতে সময় লাগছে। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক রাজশাহীর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রবীন্দ্রনাথ চাকী বলেন, ‘সম্প্রতি এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। মামলার নথি বুঝে পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি গ্রহণ করব। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২০৫০ সাল নাগাদ ইনফ্লুয়েন্সারদের চেহারা কেমন হবে, ধারণা দিলেন গবেষকেরা

প্রিজন ভ্যান থামিয়ে ছাগল-কাণ্ডের মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা, ১১ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ভয়েস ওভার ওয়াই-ফাই, সুবিধা কী

মেডিকেল কলেজ: মানের ঘাটতিতে হবে বন্ধ

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যাচ্ছেন না মোদি, কী বার্তা দিচ্ছে দিল্লি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত