Ajker Patrika

ছয়চিরি দিঘির পাড়ে চড়ক পূজায় মানুষের ঢল

মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৫২
ছয়চিরি দিঘির পাড়ে চড়ক পূজায় মানুষের ঢল

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরি দিঘির পাড়ে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দিনব্যাপী এ মেলা চলে। করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর অনুষ্ঠিত না হলেও এ বছর পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

আয়োজক কমিটির কাছ থেকে জানা যায়, এখন থেকে প্রায় ১২০ বছর আগে শচীন্দ্র প্রসাদ রায় চৌধুরী চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে তাঁর ৪০০ বছর পুরোনো ছয়চিরি দিঘির পাড়ে দুই দিনব্যাপী প্রথম চড়ক পূজার আয়োজন করেন। এরপর থেকে এখানে প্রতিবছর এ পূজার আয়োজন করা হয়। এ চড়ক উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

সরেজমিনে চড়ক পূজা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৪৯ একর দিঘির পূর্ব ও উত্তর পাড়ে একটি করে ও দক্ষিণ পাড়ে দুটি পৃথক ১০০ ফুট লম্বা চড়ক গাছ রয়েছে। দিঘির চারপাশের বাসিন্দাদের জন্য আলাদাভাবে চারটি চড়কগাছে সন্ন্যাসী চার ভক্তের পিঠে লোহার দুটি বড়শি গেঁথে রশির সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়কগাছ ঘোরানো হচ্ছে।

এ সময় আগত হাজারো দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই বাতাসা আর কলা উড়িয়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া চড়ক পূজার দুই দিনে কালীনাচ, অগ্নিনাচ, হর গৌরী পূজার আয়োজন করা হয়। এসব পূজাকে কেন্দ্র করে কলাগাছ ও বাঁশের খুঁটিবেষ্টিত মণ্ডলী তৈরি করে পূজা করা হচ্ছে।

পূজার প্রথম দিন প্রায় ৪০ জন ভক্তের শরীরে লোহার শিকল বেঁধে নৃত্যের তালে তালে চড়কগাছ ঘোরানো হয়। চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে একপাশে মেলা বসেছে। মেলায় কৃষিসামগ্রীসহ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পণ্য তুলে ধরা হয়।

চড়ক পূজায় অংশগ্রহণকারী মুন্সীবাজার এলাকার সন্তোষ চক্রবর্তী ও শ্রী নরেন্দ্র কুমার চক্রবর্তী জানান, এ এলাকায় এক মাস ধরে চড়ক পূজার আয়োজন চলে। সনাতনী পঞ্জিকামতে, প্রতিবছরের চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে এ পূজা উদ্‌যাপিত হয়। প্রতিটি চড়কে চারজন সন্ন্যাসীভক্তের পিঠে লোহার দুটি করে বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়কগাছ ঘোরানোর দৃশ্যটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন।

পরিবার নিয়ে ঘুরতে আশা সুব্রত কুমার বলেন, ‘গত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে এর আয়োজন করা হয়নি। এ বছর চড়ক পূজা হচ্ছে, এ জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি।’

মৌলভীবাজারের গিয়াসনগর থেকে আগত সন্ন্যাসী বিধু রাম বলেন, ‘আমি ৫০ বছর ধরে সন্ন্যাসী হয়ে আছি। এই উৎসবে ১৮ বছর ধরে অংশগ্রহণ করছি। এখানের চড়ক পূজার আয়োজন অনেক বৃহৎ। চড়ক দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন।’

এ পূজা আয়োজন কমিটির সহসভাপতি অসমঞ্জু প্রসাদ রায় চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় ১২০ বছর আগে আমার দাদা প্রথম এই চড়ক পূজার আয়োজন করেন। চড়ক পূজা ও মেলা কেন্দ্র করে ছয়চিরি দিঘির চারপাশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসাহে মেতে ওঠেন। এবার এ উৎসব দেখতে সিলেট অঞ্চলসহ সারা দেশ থেকে হাজারো মানুষ এসেছেন। চড়ক পূজায় বিভিন্ন এলাকার ৪০ থেকে ৫০ জন পূজারি অংশ নেন। তাঁদের পরিশ্রমেই এ আয়োজন প্রতিবছর সুন্দরভাবে শেষ হয়।’

রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল বলেন, ছয়চিরি দিঘিপাড়ের চড়ক পূজা শতবছর ধরে এ ইউনিয়নের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করে আসছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকাবাসীর সমন্বয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এবারের পূজা ও মেলা সম্পন্ন হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: ফেসবুকে বাকের মজুমদার

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

যুদ্ধ বলিউডের সিনেমা নয়: ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

রাজপথের চাপে কোনো বিচার করা সম্ভব নয়: চিফ প্রসিকিউটর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত