Ajker Patrika

সবচেয়ে ভালো চাকরি

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ১১: ৫৩
সবচেয়ে ভালো চাকরি

সাজেক উপত্যকার রুইলুই পাড়া থেকে কংলাক পাহাড় পর্যন্ত একটা রাস্তাই উঠে গেছে। দুপাশের রিসোর্টগুলো পেরিয়ে রয়েছে সারি সারি রেস্তোরাঁ। সন্ধ্যার পর সেদিকে হাঁটতে গেলে ছিম্বাল রেস্টুরেন্টে আটকে যায় চোখ-কান। রেস্তোরাঁর বাইরের ছোট মঞ্চটিতে বসে চব্বিশ বছর বয়সী এক চাকমা তরুণ গিটারে সুর তুলে গান করছিলেন। নাম স্পেন চাকমা বাপ্পি। আড়ম্বরহীন সাধারণ পোশাকের এই তরুণের কণ্ঠ মনোমুগ্ধকর। মঞ্চের আশপাশে ভিড় জমে যায়।

কীভাবে গানের কাছে আসা—এই ছিল স্পেনের উদ্দেশে প্রশ্ন। উত্তর আসে, ‘ছোটবেলায়, ক্লাস থ্রি থেকে ক্ল্যাসিক গান শিখেছিলাম; হারমোনিয়াম, তবলা এসব দিয়ে। পরে ব্যান্ডের গান শুনেছিলাম। যখন হাইস্কুলে পড়তাম তখন নতুন নতুন গান শুনতাম ব্যান্ডের। পরে ব্যান্ডের গানের প্রতি একটা শখ এসে গেল। হারমোনিয়াম, তবলা ছেড়ে গিটারে মনোযোগ দিলাম। টুকটাক শিখতাম।’ আশপাশে যাঁরা বন্ধুবান্ধব আছে তাঁদের কাছেই গিটার শেখা। যাঁরা শহরে লেখাপড়া করতেন, তাঁরা যখন গ্রামে এসে বাজাতেন তখন তাঁদের কাছেও শিখেছেন। স্পেন বলেন, ‘তখন আমাদের এখানে গিটার শেখানোর মতো তেমন কেউ ছিল না। গিটার নিয়ে ঘুরতে দেখলে হাসাহাসি করত লোকজন। এমনই পরিস্থিতি ছিল।’

আর এখন? ‘এখন এলাকায় আমাদের একটা ব্যান্ড আছে, আমাদের খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায়। চলছে মোটামুটি। চার বছর ব্যান্ডের বয়স।’ স্পেনদের ব্যান্ডের নাম আওজ (Ahouge)। চাকমা ব্যান্ড। আওজ চাকমা ভাষার শব্দ। বাংলায় এর অর্থ ‘সাধ’ বা ‘শখ’। স্পেন জানালেন, সাধ করে মিউজিক করা থেকেই ব্যান্ডের এই নাম দিয়েছেন তাঁরা। প্রফেশনাল রেকর্ডিংয়ে তাঁদের একটা একক গান আছে। বাংলা গান। গানের শিরোনাম ‘জলরাশি’। গানটি গেয়েও শোনালেন তিনি-

‘সমুদ্রের নীলাভ জলরাশি

ভালোবেসে পাড়ি দিয়েছি

ভেবে শুধু তোমাকেই ভেবে

সুরের গোধূলিতে নীরবে’

ছিম্বাল রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন স্পেন। ছিম্বাল একটি লুসাই শব্দ, যার অর্থ রংধনু। এই বাড়তি তথ্যটি যোগ করে স্পেন জানালেন, তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দশটা-সাড়ে দশটা পর্যন্ত গান করেন ছিম্বালে। প্রতিদিন তো আর খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে রাঙামাটির সাজেকে আসা সম্ভব হয় না, তাই সাজেকেই থেকে যান চাকরির সুবাদে। তবে আওজ ব্যান্ডের বাকি চার সদস্য খুব সাহায্য করেন তাঁকে। একসঙ্গে খুব একটা চর্চা করা না হলেও কোথাও শো থাকলে ছুটে চলে যান বাকিদের সঙ্গে। ছিম্বালে গানের আয়োজনের এই ধারণাটা রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারীর। এখানে যাঁরা খেতে আসেন বা যাঁরা ঘুরতে আসেন, তাঁদের বসতে মন চাইলে বসেন, গান শোনেন। খাবার ফরমাশ করেন। খাবার দিতে দেরি হলে মঞ্চের সামনে বসে আড্ডা দেন, গান শোনেন। ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করেন স্পেন। গানের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন দীঘিনালা সরকারি কলেজে, পড়ছেন সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতক। আর গানের ব্যাপারে পরিবার ছোটবেলা থেকেই অণুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বিশেষ করে পিসি মায়ের কাছ থেকে যে স্পৃহা পেয়েছেন, এ কথা বলতে ভুললেন না তিনি।

কেমন লাগে স্পেনের এই জীবন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার অনেক ভালো লাগে। আমি মনে করি এর চেয়ে ভালো চাকরি আমার আর হবে না!’

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা বা রাঙামাটির সাজেকে স্পেনের বেশ পরিচিতি আছে। এর চেয়ে বেশি খ্যাতির লোভ নেই তাঁর। তিনি শুধু মানুষের ভালোবাসা চান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত