Ajker Patrika

শহীদদের কবর এক স্থানে সংরক্ষণের দাবি

শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৩০
শহীদদের কবর এক স্থানে সংরক্ষণের দাবি

শান্তিগঞ্জে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের কবর সংরক্ষণে সরকারি উদ্যোগ চান স্থানীয় বাসিন্দারা। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এসব মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি সংরক্ষণ না করায় অনেকটা ক্ষুব্ধ তাঁরা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, ৭১ সালের ১০ মে সুনামগঞ্জ ঢোকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরপর তেঘরিয়া গ্রামে আগুন দিয়ে লুটপাট চালায়।

পাকিস্তানিদের সঙ্গে রাজাকার বাহিনী মিলে ওই গ্রামের গয়ানাথ দাস ওরফে তারানাথ দাস, রবিন্দ্র কুমার দাস, উমেশ চন্দ্র দাস, ক্ষেত্রময়ী দাস, রজিন্দ্র কুমার দাস, গিরীশ দাস ও পাইন্না দাসকে গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যা করে। অপর দিকে ডুংরিয়া শিবপুর গ্রামের মহানন্দ দাস, দিরাই হাতিয়া গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা তালেব উদ্দিন ও পাগলা ব্রহ্মণগাঁওয়ের কৃপেন্দ্র দাসসহ নাম না জানা আরও এক মুক্তিযোদ্ধাকে আহসানমারা নামক ঘাটে হত্যা করে।

পরে স্থানীয়রা লাশগুলো উজানিগাঁও রাশিদিয়া উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এনে একটি কবরস্থানে সমাহিত করেন। এক কবরস্থানে শায়িত তিন মুক্তিযোদ্ধার দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও তৃতীয় শহীদের নাম জানা যায়নি। তবে ওই তৃতীয় শহীদ আদিবাসী এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বলে একমত হয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের ওই কবরস্থানটিতে একটি স্মৃতিসৌধও নির্মাণ করা হয়েছে। ওই কবরে শহীদ তালেব উদ্দীন, কৃপেন্দ্র দাস ও নাম না জানা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তিকে সমাহিত করা হয়েছে। এ রকম একটি কবরস্থান অনন্য। কারণ এক জায়গায় তিন ধর্মের তিন মুক্তিযোদ্ধাকে কবরস্থ করার দৃষ্টান্ত বিরল।

তবে এলাকার প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী শুরু থেকেই তিন শহীদের কবরস্থানে শুধু তালেব উদ্দীনের কবর বলে। অন্য দুই মুক্তিযোদ্ধার অস্তিত্ব অস্বীকার করে।

উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাংবাদিক সোহেল তালুকদার বলেন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তরে অরক্ষিত অবস্থায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি রয়েছে। সেই সমাধিগুলো একত্রে উপজেলার সুবিধাজনক একটি স্থানে সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা দেখিনি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়েছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস চাই। কোনো বিকৃত ইতিহাস চাই না। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের নিকট একটাই দাবি, অত্র উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অরক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি এক জায়গায় সংরক্ষণ করা হোক। যাতে ছাত্র-শিক্ষক আমজনতা সবাই আমরা তাঁদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার-উজ-জামান বলেন, এটি স্থানান্তর করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি আদান-প্রদানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত