Ajker Patrika

গাজীপুরের আয়না ও আওয়ামী লীগের ভাবনা

গাজীপুরের আয়না ও আওয়ামী লীগের ভাবনা

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী আয়নায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা ও জনমতের যে প্রতিফলন দেখা গেল, তা নিয়ে দলটির মধ্যে কোনো ভাবনার উদয় হয়েছে কি না, জানি না। তবে দলটির যে নতুন করে অনেক কিছু না হলেও কিছু বিষয় অন্তত ভাবা উচিত, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। দলটি যদি মনে করে ‘সবকিছু ঠিক আছে, কোথাও কোনো সমস্যা নেই’, তাহলে শেষ হাসি হয়তো অন্য কেউ হাসবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত আজমত উল্লা খান পরাজিত হবেন, এটা বোধ হয় দলের কারও ভাবনায় ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগকে বধ করার জন্য আওয়ামী লীগেই যে ‘জাহাঙ্গীর আলমেরা’ বেড়ে উঠছেন, সেটা তো একেবারে অজানা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগের দিন এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা যে ফ্রাংকেনস্টাইন তৈরি করেছেন, তাঁরাই এখন আওয়ামী লীগকে খাচ্ছেন।’

জাহাঙ্গীর আলমও যে তেমনই একজন ফ্রাংকেনস্টাইন এবং গাজীপুরের আওয়ামী লীগকে খেয়ে ফেলেছেন, সে খবর দলটির হাইকমান্ডের তো না জানার কথা নয়। পত্রিকায় এমন খবর ছাপা হয়েছে যে গাজীপুরের আওয়ামী লীগের কোনো কোনো কর্মী বলেছেন, ‘আমরা তৃণমূলের কামলারা নৌকা নৌকা করি, আর কেন্দ্রের সর্বোচ্চ নেতাদের কেউ কেউ টাকা টাকা করে।’ এমন জনশ্রুতি আছে যে জাহাঙ্গীর কেন্দ্রের কোনো কোনো নেতাকে বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে বশ করে রেখেছেন।

টাকার জোরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ ছাড়া আরও অনেককেই হাতে রেখেছেন জাহাঙ্গীর। ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতা থাক শূন্য’—এই নীতি অনেকেই অনুসরণ করেছেন।

জাহাঙ্গীর আলম নিজে প্রার্থী হলেও নাহয় সান্ত্বনা পাওয়া যেত কিন্তু তাঁর মা, যিনি জীবনে কোনো দিন ঘরের বাইরে বের হয়ে কোনো সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বলে শোনা যায়নি, তিনিই কিনা ছেলের কেয়ারঅফে একটি সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়ে গেলেন! এটাকে যেভাবে গণতন্ত্রের মহিমা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, তা-ও কি কম বিস্ময়ের।

রামের পায়ের খড়ম নিয়ে লক্ষ্মণ রাজকার্য চালিয়েছেন বলে এত দিন পৌরাণিক কাহিনিতে শোনা গেলেও এবার বাংলাদেশে ছেলেকে পাশে নিয়ে নগর চালানোর আধুনিক গণতন্ত্র আমরা প্রত্যক্ষ করব।

মার্কিন ভিসা নীতি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য ভয়ের কারণ কি না, তা নিয়ে যেমন আলোচনা করা যেতে পারে, সঙ্গে সঙ্গে এটাও আলোচনায় আসতে পারে যে আওয়ামী লীগ ও সরকার তাদের ভুল শোধরাতে চাইবে কি না। গাজীপুরে জায়েদা খাতুনের মতো একজন একেবারে অনালোচিত প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগ মনোনীত পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ আজমত উল্লা খানের পরাজয় বিভিন্ন প্রশ্নই সামনে আনছে; বিশেষ করে ভোটের মাঠে যখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ বিএনপি অনুপস্থিত, তখন তো ভোট হওয়ার কথা একতরফা, আওয়ামী লীগ ও নৌকা মার্কার প্রার্থীর জেতার কথা হেসেখেলে।

কিন্তু গাজীপুরে তা হলো না। গাজীপুর প্রমাণ করল, বিএনপি ভোটের মাঠে না থাকলেও আওয়ামী লীগ আর ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারবে না। জায়েদা খাতুনের মতো পচা শামুকেও পা কাটার ভয় এখন আওয়ামী লীগকে তাড়া করতে থাকবে। চলার পথে হোঁচট খেলে সতর্ক হওয়ার তাগিদ তৈরি হয়। আওয়ামী লীগের তা হবে কি?

নির্বাচনে জয়-পরাজয় স্বাভাবিক ঘটনা। জয়ের লক্ষ্য নিয়ে অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু জয়লাভ করেন একজনই। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বরাবরই আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে, তা নয়। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান কিন্তু বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে হেরেছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির হাসানউদ্দিন সরকারকে বিপুল ভোটে হারিয়ে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৩ সালের নির্বাচনেও জাহাঙ্গীর আলম দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন এবং ভোটের কয়েক দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরও প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন বলেই হয়তো আজমত উল্লার পরাজয় হয়েছিল। জাহাঙ্গীর আলম অনেক অর্থবিত্তের মালিক। বলা হয়, তাঁর জনপ্রিয়তার বড় কারণ টাকা। তিনি কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন? আওয়ামী লীগকে তিনি ক্ষমতা ও সম্পদ বৃদ্ধির মেশিন হিসেবে সফলভাবে ব্যবহার করেছেন। দলীয় নীতি-আদর্শের কারণে যতটা না মানুষের কাছে পরিচিত, তার চেয়ে তাঁর বেশি পরিচিতি দান-দক্ষিণা করার কারণে।

জাহাঙ্গীর ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। একই সময় আওয়ামী লীগ থেকেও তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি একসময় গাজীপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের গত জাতীয় সম্মেলনের আগে দল থেকে বহিষ্কৃত অনেককেই সাধারণ ক্ষমা করা হয়। এই সুযোগ জাহাঙ্গীর আলমও পেয়েছিলেন। ক্ষমা পেয়েই তিনি আবার দলের নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। মেয়র পদেও নৌকার মনোনয়ন চান। কিন্তু বঞ্চিত হয়ে আবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হন। ঋণখেলাপির কারণে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়। এমন যে হতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই তিনি সম্ভবত মা জায়েদা খাতুনকেও প্রার্থী করেছিলেন। দলীয় প্রার্থী আজমত খানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে না নেমে জাহাঙ্গীর মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে মাঠে থাকায় এবার আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কৃত হন। কিন্তু এই সবকিছুকে তোয়াক্কা না করে জায়েদা খাতুনকে নিয়ে জাহাঙ্গীর প্রচারণা চালান। মা কাগজে-কলমে প্রার্থী হলেও বাস্তবে ভোটে লড়েছেন ছেলে। ফলে জায়েদা খাতুনের জয়কে জাহাঙ্গীরের বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, গাজীপুরে আওয়ামী লীগের চেয়ে জাহাঙ্গীর আলম বেশি জনপ্রিয়। আসলে কি তাই? দলের চেয়ে ব্যক্তি কি বড় হয়ে উঠতে পারে? অতীতে যাঁরা আওয়ামী লীগ ছেড়েছেন কিংবা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাঁরা কেউ কি আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হতে পেরেছেন? না, তেমন দৃষ্টান্ত দেওয়া যাবে না। তাহলে জাহাঙ্গীর আলম কীভাবে দলকে চ্যালেঞ্জ করেও নিজেকে দলের লোক হিসেবে দাবি করতে পারছেন? কুকুরে লেজ নাড়ে, নাকি লেজই কুকুর নাড়ে?

জুন মাসে চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। এরপর চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ অথবা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গাজীপুরের ভোটের ফলাফল কি আগামী নির্বাচনগুলোতে কোনো প্রভাব ফেলবে?

গত ১৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় এমপিদের উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আমার কাছে সবার আমলনামা আছে। আমলনামা দেখেই আগামীতে দলীয় মনোনয়ন দেব। জনগণের সঙ্গে যাঁদের সুসম্পর্ক আছে, সুখে-দুঃখে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরাই নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। আর যাঁরা জনবিচ্ছিন্ন, নির্বাচিত হয়ে ঢাকা আর বিদেশে পড়ে ছিলেন, এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, জনবিচ্ছিন্ন, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন, যেসব এমপি গ্রুপিং সৃষ্টি করতে গিয়ে নিজ দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন, তাঁদের মনোনয়ন দেব না, এটা সাফ কথা।’
যাঁদের কারণে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও সরকারপ্রধানের কঠোর মনোভাবের কথা প্রায়ই শোনা যায়। এমনও বলা হয় যে তিনি কাউকেই ছাড় দিতে নারাজ। কিন্তু বাস্তবে এই কঠোরতা কি দেখা যায়? কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা আমলে নেওয়া হয় না। কয়েকজন মন্ত্রীর পারফরম্যান্স নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা থাকলেও কাউকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। অথচ মন্ত্রিসভায় রদবদল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি সাধারণ নিয়ম।  

নানা ঘটনা থেকেই এটা স্পষ্ট যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়েও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হবে। আমেরিকাসহ পশ্চিমা কিছু দেশ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সরকারকে চাপের মধ্যে রেখেছে। আমেরিকার মতিগতি বোঝা ভার। প্রধানমন্ত্রী নিজেই আমেরিকা নিয়ে তাঁর আশঙ্কার কথা বলেছেন। আমেরিকার ভিসা নীতি বিরোধী দলের চেয়ে সরকারের জন্যই বেশি অস্বস্তিকর হওয়ার কথা।

বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নির্বাচনে অংশ নিলে বা না নিলেও তারা যে সরকারের পথে বড় কাঁটা হয়ে থাকবে, সেটা স্পষ্ট। ভোটারদের একটি বড় অংশকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা তাদের আছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি যতটা মজবুত থাকা দরকার তা নেই। এটা অনেকেই বলেন যে আওয়ামী লীগের বড় শত্রু আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কমান্ড না মানার প্রবণতা প্রায় সর্বত্র। দলীয় বিরোধের কারণে বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও গাজীপুরের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি হয় কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।  

তবে এটা ঠিক, বহুদিন পর গাজীপুরের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠেনি। এই ধারাই অব্যাহত থাক–এটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু সেটা হবে কি?

গাজীপুরের ফলাফল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। তৃণমূলের প্রকৃত তথ্য ও চিত্র কেন্দ্রে নেই। যেসব জরিপ করা হচ্ছে, সেগুলো বস্তুনিষ্ঠ তা কি বলা যাবে? ৫ সিটিতে যাচাই-বাছাই করেই মনোনয়ন দেওয়ার পরও গাজীপুরের হিসাব কেন মিলল না? দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারীদের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ সহানুভূতি দেখালে দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় কি? জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর মাকে যদি এখন আবার আওয়ামী লীগে জায়গা করে দেওয়া হয়, তাহলে আদর্শনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের গালে কি চপেটাঘাত করা হবে না?

বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক,আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত