ভূঁইফোড় নিয়ে বিব্রত আ.লীগ

ভূঁইফোড় সংগঠন ও পদ-পদবিবিহীন কর্মীদের তৎপরতা বেড়েছে বরিশাল নগর আওয়ামী লীগে। তাদের নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিব্রত দলটির নেতারা। এসব কর্মী বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, সিটি মেয়রসহ শীর্ষ নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন গোটা নগরে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের প্রচারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করছেন এই নামধারী নেতারা।

নগর আওয়ামী লীগ এমন ভূঁইফোড় সংগঠন ও কর্মীদের অপতৎপরতা ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করেন, ভূঁইফোড় সংগঠন ও কর্মী গজিয়ে উঠতে দলের ভেতরের একটি অংশ প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।

গত মঙ্গলবার রাতে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন সেরনিয়াবাত সুমন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বিভিন্ন ভূঁইফোড় সংগঠন ও পদ-পদবিবিহীন কর্মীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্দেশ দিয়েছে। অনেকে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছবি ব্যবহার করে প্রচার চালিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় আছে। বিজ্ঞপ্তিতে ‘অটোরিকশা মাহিন্দ্রা শ্রমিক লীগ’ নামে একটি সংগঠনের কর্মীদের চাঁদাবাজি করার তথ্যও উল্লেখ করে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনুমতি ছাড়া ব্যানার, পোস্টারে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নাম ব্যবহার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, বরিশালে প্রজন্ম লীগ, ওলামা লীগ, অটো-মাহিন্দ্রা লীগ নামে নানা ভূঁইফোড় সংগঠন দেখা দিয়েছে। এদের থেকে দূরত্ব রাখতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বলা হয়েছে। পদ-পদবিবিহীন কেউ যদি এভাবে পোস্টার-ব্যানারে দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি ব্যবহার করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদ-পদবিবিহীন বিভিন্ন নেতার ব্যানার প্রসঙ্গে নগর সভাপতি জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দলীয় কার্যালয়ের সামনেও আছে। তাদের পদ-পদবি নেই অথচ দলকে ব্যবহার করে অপকর্ম করছে।’ তিনি এদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর হুঁশিয়ারি দেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর সোহেল চত্বরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায় নানা ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলছে। দলীয় কার্যালয়ের সামনে সাঁটানো এ ব্যানারগুলোতে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন, সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত ও রইছ আহমেদ মান্নার ছবির সঙ্গে শোভা যাচ্ছে পদ-পদবিবিহীন কর্মীদের ছবি। এসব ব্যানারে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, সজীব ওয়াজেদ জয়, সিটি মেয়রের ছবিও আছে। ছাত্রলীগ নেতা রাজিব, মুনিম, মান্না ও সাজ্জাদ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। কেবল দলীয় কার্যালয় নয়, নগরীর বিভিন্ন সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ওয়ার্ড কার্যালয়েও পদ-পদবিবিহীন কর্মীদের ব্যানার ফেস্টুন ঝোলায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সুমন সেরনিয়াবাত এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ আঁকড়ে আছেন। জেলা ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে নগরে ব্যানার পোস্টার প্রসঙ্গে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পদ-পদবিবিহীন যারা ব্যানারে ‘জেলা ছাত্রলীগ’ লেখেন, এদের কারও পদ নেই। এরা জেলা ছাত্রলীগের ১০৯ সদস্যের মধ্যেও নেই।’ এ ধরনের ব্যানার ফেস্টুনের দায় জেলা ছাত্রলীগ নেবে কি না, এ বিষয়ে কোনো মতামত দিতে চাননি রাজ্জাক।

মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘কত যে ভুয়া সংগঠন আর নেতা সৃষ্টি হচ্ছে তার হিসাব নেই। আমাদের পরিষ্কার কথা দলের গঠনতন্ত্রে যে ৯টি সংগঠন আছে, এর বাইরের সব অবৈধ। কেবল দলীয় কার্যালয়ের সামনে নয়, গোটা নগরে এমন ভুয়া কর্মীদের ব্যানার আছে। এদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল অফেন্সে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’ ব্যানারে যার যার ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।