Ajker Patrika

নোংরা পরিবেশে চিকিৎসা

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ১৯: ৪৭
নোংরা পরিবেশে চিকিৎসা

টাইলস করা সিঁড়ি ও মেঝেতে ধূলার স্তর। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যবহৃত মাস্ক, পলিথিনের ব্যাগ, টিস্যু, কাগজের টুকরো, ফলের খোসা, পরিত্যক্ত খাদ্যকণার ছড়াছড়ি। বিভিন্ন দেয়ালে পানের পিক, কফ, থুতুর চিহ্ন। ঠিকমতো ও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় গোসলখানা, টয়লেটগুলোতে দুর্গন্ধ। বিভিন্ন ওয়ার্ডে শয্যার চাদরগুলো অপরিষ্কার ও নোংরা। সবখানেই মশা-মাছির উপদ্রব।

এটি গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরের চিত্র। আর বাইরের চিত্র আরও ভয়াবহ। মূল ভবনের বাইরে এবং রান্নাঘরের পাশে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন বর্জ্যের স্তূপ। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে ঝাঁজালো দুর্গন্ধ।

গাজীপুরবাসীর উন্নত চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ ছাড়া হাসপাতালে আরও প্রায় ৩০০ রোগী ইনডোরে সেবা নিয়ে থাকেন।

সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালটির সিঁড়িতে ধূলার আস্তর। বিভিন্ন তলার পুরো মেঝেতেই ধূলার স্তর দেখা যায়। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ব্যবহৃত টিস্যু, মাস্ক, কাগজের টুকরো বা অস্বাস্থ্যকর জিনিসপত্র; মেঝেতে ময়লার দাগ।

হাসপাতালের পুরোনো ভবনের পুরুষ ওয়ার্ডের দেয়ালের কোথাও কোথাও কফ, থুতু ও পানের পিকের ছোপ। এর মধ্যে রোগীদের লোহার শয্যা, ওষুধ রাখার ট্রেতেও পড়েছে মরিচা, রয়েছে ময়লার দাগ। এর মধ্যেই মাছি উড়ছে। আর মশা থেকে বাঁচতে দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে রেখেছেন অনেকেই।

হাসপাতালের ভেতরে ওয়ার্ডের টয়লেটের অবস্থা খুবই করুণ। ধূলাবালুতে পানি পড়ে কাদা হয়ে গেছে। টয়লেটের সামনে জমে আছে ময়লা পানি। তাতে ভাসছে নষ্ট খাবার, আবর্জনা।

কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ওয়ার্ডে যেসব বিছানার চাদর দেওয়া হয়েছে, তার অধিকাংশই নোংরা। রোগীদের দাবি, শুধু নতুন রোগী ভর্তির সময় চাদর পাল্টানো হয়। পরে এক চাদরেই হাসপাতালের চিকিৎসা শেষ করতে হয়।

রোগী ও তাঁদের স্বজনদের দাবি, হাসপাতালটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদাসীন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দিনে একবার এসে কোনোরকম মেঝে পরিষ্কার করে দিয়ে যান। এরপর আর কোনো খবর থাকে না। এতে ধূলা, মাছি, ময়লা-আবর্জনায় সারাক্ষণই ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁদের।

গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন বাবুল মিয়া বলেন, ওয়ার্ডগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হলে দুর্গন্ধ ও মশা মাছি থেকে বাঁচা যেত। টয়লেটে গেলে দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে।

গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে হাসপাতালে ভর্তি তাঁর এক আত্মীয়কে দেখতে এসেছেন আলী হোসেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের বিছানার চাদরগুলো খুবই অপরিচ্ছন্ন। ওয়ার্ডের নার্সদের বহুবার বলার পরও তা পরিবর্তন করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত একবার বিছানার চাদর পরিবর্তন করা উচিত। আর চিকিৎসকেরা রাউন্ডে যাওয়ার আগেই ওয়ার্ডগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার রাখার কথা। কিন্তু এসব এখানে মানা হচ্ছে না।

হাসপাতালের নতুন ভবনের উত্তর পাশে এবং পুরোনো ভবনের দক্ষিণ পাশে খালি জায়গায় হাসপাতালের বিভিন্ন বর্জ্য খোলা জায়গায় স্তূপাকারে পড়ে রয়েছে। দেখে মনে হয়, এটি কোনো আবর্জনার ভাগাড়। এর পাশেই রোগীদের খাবার তৈরির রান্নাঘর। আবর্জনার ভাগাড় থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ, উড়ছে মশা ও মাছি।

এসব বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) তপন কান্তি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বাইরের সব বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব গাজীপুর সিটি করপোরেশনের। তাঁরা জমে থাকা আবর্জনা না সরালে আমরা কী করতে পারি।’

হাসপাতালে ভেতরের অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে তপন কান্তি সরকার বলেন, এখানে টিকা দেওয়া হয়। এ জন্য শত শত মানুষ আসে। এ কারণে একটু ময়লা হয়ে থাকে। এসব পরিষ্কার করার জন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করা আছে। এগুলো পরিষ্কার করা তাঁদের কাজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত