Ajker Patrika

আবর্জনায় শ্রীহীন বঙ্গবন্ধু উদ্যান

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২৪ মে ২০২২, ১৩: ৫২
আবর্জনায় শ্রীহীন বঙ্গবন্ধু উদ্যান

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবন্ধু উদ্যান দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। নগরের সবচেয়ে বড় এবং দৃষ্টিনন্দন উদ্যানটিতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীর ঢল নামে। অথচ অযত্ন আর অবহেলায় এটি বেহাল। গত সপ্তাহে দুটি সমাবেশে বিশাল মাঠ ময়লায় ঢেকে যাওয়ার জোগাড় হয়। ইদানীং সেখানকার ভাসমান দোকানিদের বর্জ্যের কারণেও আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

এদিকে দীর্ঘদিনেও উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগা বঙ্গবন্ধু উদ্যানের উঁচু-নিচু মাঠ সংস্কারেরও দাবি উঠেছে। এক সময় বেলস পার্ক নামে পরিচিত ছিল বঙ্গবন্ধু উদ্যান। এ উদ্যানে খেলার মাঠ, ওয়াকওয়ে, হেলিপ্যাড, গাছগাছালি ও লেক রয়েছে। উদ্যানের আয়তন প্রায় ৯ দশমিক ৪৭ একর। ১৮৯৬ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনডি বিটস বেল উদ্যানটি নির্মাণ করেন। তাঁর নামে নামকরণ হয়েছিল বেলস পার্ক। ১৯৯৬ সালে সরকার এর নামকরণ করে বঙ্গবন্ধু উদ্যান। বঙ্গবন্ধুসহ অনেক জাতীয় নেতা এই উদ্যানে ভাষণ দিয়েছেন। সেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানের এখনকার অবস্থায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে নগরে।

গত ২১ মে কাজী ফিরোজ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে বঙ্গবন্ধু উদ্যান দেখিয়ে উল্লেখ করেন, ‘শিলা বৃষ্টি নয়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমাদের দায়িত্ববোধ।’ এর জবাবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি নজরুল হক নিলু লেখেন, ‘লিখতে ভয় পান, এটা চরমোনাই পীরের লোকদের কাণ্ড!’ জায়েদা সুরমা নামে জনৈক নারী লিখেছেন, ‘মানসিকতা পরিবর্তন না হলে সম্ভব নয়।’ গত শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু উদ্যান ঘুরে গোটা মাঠে ময়লা-আবর্জনা দেখে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে একাধিক দর্শনার্থীকে।

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের সংগঠক কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ নিয়মিত বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রাতর্ভ্রমণে যান। তিনি বলেন, নানা শ্রেণির মানুষ উদ্যানের চারপাশে হাঁটেন। বিকেলে শত শত দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন। কিন্তু প্রতিদিনই মাঠটি অপরিষ্কার হয়ে যায়। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা নিয়মিত মাঠটি পরিচ্ছন্ন রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, গত কয় দিনে দুটি সমাবেশ বঙ্গবন্ধু উদ্যানকে শ্রীহীন করে ফেলে। গত ১৬ মে মেয়রের উপস্থিতিতে অটোরিকশা শ্রমিকদের সমাবেশ এবং ২০ মে চরমোনাই পীরের দলের বিভাগীয় সমাবেশ মাঠটিকে চরমভাবে নোংরা করেছে। তিনি বলেন, মাঠ পরিচ্ছন্নের মানসিকতা নেই বলেই বিভিন্ন সংগঠন ও দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধু উদ্যানকে নোংরা করছে। তা ছাড়া ভাসমান দোকানের ময়লাও মাঠে পড়ছে। উদ্যানটির ঘাস উঠে গেছে। কোথাও উঁচু-নিচু। মাঠের যত্ন নেওয়া জরুরি।

এ প্রসঙ্গে চরমোনাই পীরের দলের অঙ্গ-সংগঠন জেলা যুব আন্দোলনের সভাপতি ও বিভাগীয় সমাবেশ প্রচার উপকমিটির সদস্য হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ সানাউল্লাহ জানান, বঙ্গবন্ধু উদ্যান ব্যবহার উপযোগী ছিল বিধায় হাজার হাজার মানুষ জুমার নামাজ শেষে সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সমাবেশ শেষে মাঠে পলিথিন, বিরিয়ানির প্যাকেট, নানা ধরনের উচ্ছিষ্ট আগতরা হয়তো ফেলে রেখে গেছেন। তাঁরা বুঝতে পারলে অবশ্যই মাঠ পরিষ্কার করে রেখে যেতেন। আগামী দিনে সব কর্মসূচিতে সতর্ক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন যুব নেতা সানাউল্লাহ।

এদিকে অটো শ্রমিকেরা তাঁদের সমাবেশে উদ্যান অপরিচ্ছন্ন করলেও এ বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বরিশাল বিভাগীয় প্রাতর্ভ্রমণের সাধারণ সদস্য এ বি এম মাসুদ করিম বলেন, ‘অপরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি মাঠটিও সমতল নয়। মাঠের চারপাশের রাস্তাও ভাঙছে। ভ্রাম্যমাণ দোকানের খাবার কিনে উচ্ছিষ্ট মাঠে ফেলছেন দর্শনার্থীরা। পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার না হলে বঙ্গবন্ধু উদ্যান জৌলুশ হারাবে।’

বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলামকে ফোন দেওয়া হলেও পাওয়া যায়নি।

গত ৩ মার্চে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বঙ্গবন্ধু উদ্যানসহ বিভিন্ন মাঠের বেহাল দশায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সোহেল মারুফ। তিনি বলেছেন, নগরের ভেতরে যেসব খেলার মাঠ রয়েছে, তা সংস্কার করে নতুন প্রজন্মের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু উদ্যানের উন্নয়নেও তাঁরা উদ্যোগী হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত