Ajker Patrika

দুই স্কুলছাত্রকে মারধর জরিমানা আদায়

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৩৭
দুই স্কুলছাত্রকে মারধর জরিমানা আদায়

কুমিল্লা নগরীতে সড়কের পাশে সাঁটানো নির্বাচনী পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা মডার্ন স্কুলের দুই ছাত্রকে মারধর, হুমকি-ধামকি এবং তাঁদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত পরিবার দুই ছাত্রের বাসা থেকে বের হওয়াসহ স্কুলে যাওয়া বন্ধ রেখেছে।

ভুক্তভোগী দুজন শিক্ষার্থী সম্পর্কে খালাতো ভাই এবং দুজনই এতিম। তাদের একজন সামিউল মোত্তাকিম মাহিন অষ্টম শ্রেণিতে এবং এনশান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আদিল নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পরিবার রেসকোর্স ধানমন্ডি সড়কের দারুল খাদেম নামের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। সামিউলের বাবার নাম জাকির হোসেন। এনশান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আদিলের বাবার নাম মো. ফজলুল হক। তিনি আমড়াতলী স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন। গত বছর তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহ খানেক আগে স্কুলে যাওয়ার সময় দুষ্টুমির ছলে সড়কের পাশে সাঁটানো একটি পোস্টার ছিঁড়েন সামিউল মোত্তাকিম মাহিন। পোস্টারটি ছিল আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী মনিরুল আলমের।

এ ঘটনায় গত রোববার স্কুল থেকে ফেরার পথে এনশান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আদিলের পথ রোধ করে তাকে মারধর করেন মনিরুল আলমসহ আরও দুজন। এ সময় পোস্টার ছেঁড়ার কথা অস্বীকার করে আদিল তার খালাতো ভাই সামিউল মোত্তাকিম মাহিনের বিষয়টি বলে দেয়। এরপর আদিলকে আটকে রেখে মনিরুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা দারুল খাদেম বাসার তৃতীয় তলার সামিউল মোত্তাকিম মাহিনের ভাড়া বাসায় এসে তাকে ধরে নিয়ে যেতে টানা-হেচড়া করেন।

এ সময় তাঁরা হুমকি-ধামকিও দিতে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে মাহিনের নানা মনিরুলের কাছে ক্ষমা চান এবং যে বিচার-ই হোক মাথা পেতে নেওয়ার কথা বলেন। তখন মনিরুল ছয়টি পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ করে তাঁদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।

শিক্ষার্থী মাহিন বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় এমনিতেই দুষ্টুমি করে একটি পোস্টার ছিঁড়েছি। সেটা সিসি ক্যামেরায় দেখে মনিরুল আলম আমার ভাইকে রাস্তায় ধরে মেরেছেন এবং আমাকে ধরে নিতে বাসায় এসে টানাটানি করেছেন। পড়ে নানা টাকা দেওয়ার পর চলে গেছেন এবং আদিল ভাইকে ছেড়ে দিয়েছেন।’

সামিউল মোত্তাকিম মাহিন ও এনশান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আদিলের নানা মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমার দুটি নাতিই এতিম। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের সঙ্গে থাকি। আমার নাতিরা বাচ্চা মানুষ। স্কুলে যাওয়ার সময় না বুঝে পোস্টার ছিঁড়েছে। এ জন্য মনিরুল আলম আমার বড় নাতি আদিলকে মেরে আটকে রেখে আবার ছোট নাতি মাহিনকে ধরে নেওয়ার জন্য বাসায় এসেছিলেন। ক্ষমা চেয়ে এবং তাঁদের কথামতো তিন হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রক্ষা পেয়েছি।’

এ বিষয়ে মনিরুল আলম বলেন, ‘দুই শিক্ষার্থী আমার ফেস্টুন ছিঁড়েছে। আমার কাছে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ আছে। একটি পক্ষ তাদের দিয়ে এ কাজটি করিয়েছে। আমার ক্ষতি যেহেতু করেছে, তাই তাদের অভিভাবকের কাছ থেকে জরিমানা নিয়েছি।’

জরিমানা আদায়ের বিষয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, মনিরুল আলম ম্যাজিস্ট্রেট নন। তিনি কীভাবে জরিমানা আদায় করেন। জরিমানা আদায় করা আইনসিদ্ধ নয়।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. সহিদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত