Ajker Patrika

প্রশান্তির কাঁটা কিশোর গ্যাং

শরিফুল ইসলাম তনয়, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
আপডেট : ২০ মে ২০২২, ১২: ৪৫
প্রশান্তির কাঁটা কিশোর গ্যাং

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী দখল এবং অবৈধ বালু-পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয় ওয়াকওয়ে। দূর-দূরান্ত থেকে বিনোদনপিয়াসী লোকজন ছুটে আসে ওয়াকওয়ে দেখতে। বিশেষ করে বিকেল হলেই এটি পরিণত হয় লোকারণ্যে। কিন্তু ওয়াকওয়েতে বেড়েই চলেছে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের পরও থামছে না কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা। ছোট বিষয় নিয়েও এরা জড়িয়ে পড়ছে সহিংসতায়। ওয়াকওয়েতে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া, তরুণীদের উত্ত্যক্ত, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এখানকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। দিন দিন তারা হয়ে উঠছে বেপরোয়া।

সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর ওয়াকওয়ের শ্মশানঘাটে ১৪ মে আরাফাত হোসেন রিয়াদ (১৭) নামে এক কিশোরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। এ সময় তার চিৎকার শুনে এক বন্ধু এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পূর্বশত্রুতার জের ও গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ মারামারি হয়।

জানা যায়, এই ওয়াকওয়েতে গড়ে উঠছে একাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপ। এক গ্রুপের দেখাদেখি জন্ম নিচ্ছে আরেক গ্রুপ। এসব গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র, নারীঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটছে হত্যাকাণ্ড। এ ছাড়া চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডে পর্যন্ত জড়াচ্ছে ১৪ থেকে ২০ বছর বয়সী কিশোররা। অস্ত্র হিসেবে তারা ব্যবহার করছে ছুরি, চাকু বা চাপাতির মতো ধারালো বস্তু। ওয়াকওয়েতে মারামারির ভিডিও চোখে পড়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গ্রুপগুলোতে।

জানা যায়, এই ওয়াকওয়েতে ৮টি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো ও সিদ্ধিরগঞ্জ আমতলা ও ওমরপুর থেকে আসে তিনটি, সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে একটি সর্দার পাড়া থেকে দুটি ও সিদ্ধিরগঞ্জ রেললাইনের আটি গ্রাম এবং ওয়াপদা কলোনি হয়ে আসে আরও দুটি গ্রুপ। তবে এসব কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে এলাকাবাসী তাদের নাম-পরিচয় দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

সোহানুর রহমান সিদ্ধিরগঞ্জের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, সমাজের একশ্রেণির লোক এই কিশোরদের বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত করছেন। বড় বড় অপরাধ করানোর সুযোগ নিচ্ছেন। মাদক সেবন থেকে বিক্রয় করতে পর্যন্ত তাদের ব্যবহার করছেন।

কথা হয় ওয়াকওয়েতে ঘুরতে আসা কলেজছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে। তিনি বলেন, শীতলক্ষ্যার তীরের এই ওয়াকওয়ে বাড়ির কাছে হওয়ায় প্রায়ই আমার যাতায়াত ছিল। আগে প্রতি শুক্রবার বিকেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে হাঁটতে আসতাম। এখন ওয়াকওয়েতে প্রচুর বাইক চলে, ঘাট বখাটেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। তাই এখন আর আগের মতো যাওয়া হয় না।’

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা আবারও লক্ষ করা যাচ্ছে। তাদের প্রতিরোধে আমরা তৎপর। এ বিষয়ে পুলিশের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। তবে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলে কিশোর অপরাধ দমন করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত